আসছে নতুন প্রজন্ম , আসবে নতুন দিন !
মা' তো মা' ই । এর তো আর একাল আর সেকাল নেই। যুগ যুগ ধরে মা'রা তাদের সম্মানিত অবস্থান ধরে রেখেছেন আপন গুণাবলিতে, এবং চিরকাল তাদের অবস্থানে থাকবেন।
আমি যে বিষয়টা বলবো সেটা হচ্ছে, এখনকার মায়েদের তুলনায় আজ হতে ৩০-৪০ বছর আগের মায়েদের কি পরিমানে প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হতো তার একটি ছোট তুলনা। এখনও শহরের মায়েদের ও প্রতন্ত গ্রামের মায়েদের মাঝে এই পার্থক্য বিদ্যমান।
১) তখন ৫টি সন্তান স্বাভাবিক, ৭-৮টি সন্তান একটু বেশি আর ৩টি সন্তানকে কম মনে করা হতো।
আর এখন ২টি সন্তান স্বাভাবিক, ৩টি সন্তান একটু বেশি আর ১ট সন্তানকে কম মনে করা হয়।
তাই প্রত্যেকটি পার্থক্যকে তখনকার জন্য আমাদের তিন গুন করে হিসাব করতে হবে ।
২) প্রথমেই আসি সন্তান ধারনের সময়: এখনকার শিক্ষিত মেয়েদের ১৮-২০ বছরের আগে বিয়ে হয় না আর বিয়ের ২-৩ বছর আগে সাধারণত সন্তান নেয় না। এই দুই তিন বছরে নতুন বউ শশুড় বাড়ি সম্পর্কে একটি ধারনা পায়, স্বামীকে বুঝতে পারে সর্বোপরি একটি মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারে।
তখনকার মায়েদের সাধারণত ১৫-১৭ বছরের মধ্যেই বিয়ে হয়ে যেতো আর বিয়ের বছর না ঘুরতেই কোলে আসতো প্রথম সন্তান। একেতো নতুন পরিবেশ, বয়স কম, তার উপর সন্তান লালন পালনে দায়িত্ব। তখন মায়েদের নিজস্ব স্বাদ-আল্লাধ কমই ছিলো।
৩) এখনকার শাশুড়িগন ছেলে বউ এর ভয়ে ভীত থাকেন। আর নতুন বউকে সাধারণত দেবর ননদ সহ পুরো পরিবারের রান্না করে খাওয়াবার দায়িত্ব থাকে না।
আর বউ চাকরি করলে তো কথাই নাই।
তখনকার নতুন বউ এরা শাশুড়িকে যমের মত দেখতেন। বিয়ের প্রথম দিকেই বউ এর উপর সমস্ত কাজের দায়িত্ব দিয়ে নিজে শুধু ভুল ধরা দায়িত্বে থাকতেন।
৪) এখনকার মায়েরা একটি সন্তান থেকে আর এটির সন্তানের গ্যাভ সাধারণত ৪-৫ বছর নেয়। দ্বিতীয় সন্তান আসতে আসতে প্রথমটি বড় হয়ে যায়।
নিজে নিজে কিছু করতে পারে।
আর তখন দ্বিতীয় সন্তান যখন আসতো তখন বড়টির বয়স দুই বছর। কোনটাকে সামলাবে, একটা এইদিকে কাঁদে তো আর একটা ঐদিকে ।
৫) এখনকার মায়েরা সন্তান পেটে আসার পরে থেকেই শুরু হয় সন্তানের যত্ন। নিয়মিত চেকআপ, পর্যাপ্ত রেস্ট, পুষ্টিকর খাবার, ভারি কাজ না করা, চার মাস থেকেই আইরন, ক্যালসিয়াম টেবলেট.....
তখন মায়েদের আইরন,ক্যালসিয়াম তো দূরে থাকুক পর্যাপ্ত খাবার আর নিয়মিত ঘুমটা পাওয়াই বেশি ছিলো।
অনেক মায়ের উপর থেকে ভারি কাজগুলোও হালকা করা হতো না।
এই রকম অনেক তুলনাই করা যাবে কিন্তু আমার উদ্দেশ্য তা নয়, আমি শুধু "এখন এক ঘসাতেই দিয়াশলাইয়ে আগুন ধরাবার সময় কল্পনা করি আমাদের পূর্বপুরুষ এই একটু আগুন জ্বালাতে কত কষ্টই না করেছেন"
এখন আমার মা' এর একটি ঘটনা আপনাদের বলি, ঘটনাটা যখন আমার ছোট ভাই জুয়েল হয় তখন। বাবু হবার সময় সাধারণত মা নানির বাড়ি চলে যেতেন। নানির বাড়ি গেলই যে শান্তি তা নয় কারন নানি ছিলেন মা'র সৎ মা । তবুও শশুর বাড়ি থেকে কিছুটা আরাম ছিলো বিশেষ করে কাজের চাপ এতো ছিলো না।
বাবু হবার সময় হলে নানা লাকরি ঘরে মা'র আঁতুর ঘর বানিয়ে দিতেন। লাকরি ঘরটা ছিলো মূল ঘর থেকে কিছুটা দূরে, বাঁশ ঝাড় জঙ্গলের কাছে। ঘরের বেড়া ছিলো পাট শোলার। রাত্রি বেলে ঘরের কাছেই শিয়াল ডাকতো। মা সবসময় সজাগ থাকতেন, না জানি শোলার বেড়া ভেঙ্গে শিয়াল এসে তার আদরের বাচ্চাকে নিয়ে যায়।
আমরা থাকতাম মূল ঘরে, খালার সাথে। এই অবস্থায় একজন মা এক থাকতেন সেই ঘরে। সেই অবস্থায় শীতের রাতে কত প্রয়োজনই তো তার হতে পারে। একজন লোক সাথে থাকলে কত ভালোই না তার হতো!
মা তার পাশে গর্ত করে তাতে গরম কয়লা দিয়ে আগুন জ্বালিয়ে রাখতেন আর জুয়েলের পাশে কুপি বাতি জ্বালিয়ে রাখতেন। (তখন কারেন্ট ছিলো না) মা কখনই গভীর ঘুম ঘুমাতেন না ।
কিছুখন পর পরই সারা ঘর দেখতেন সব ঠিক আছে কিনা ।
একদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখেন বড় একটি কুকুর পাশে দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে জুয়েলের দিকে তাকিয়ে আছে। দেখে তো মা'র বুকটা ছ্যাঁত করে উঠে। তাড়াতাড়ি জুয়েলকে কোলে নিয়ে হিস হিস করাতেই কুকুরটি বেড়া ঘেঁসে বাহিরে চলে যায়।
আমাদের মত সন্তানদের বড় করতে কত মা'ই যে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন.......
তাই বলি, এখনকার সন্তানরা তাদের মাকে যত ভালোবাসে তার চেয়ে কমপক্ষে তিন গুন বেশি ভালোবাসা উচিত ত্রিশ বছরে পুরাতন মায়েদের।
জন্ম দিয়েছো তুমি মাগো......
তাই তোমায় ভালোবাসি......
মাকে নিয়ে আমার আর একটি লিখা দেখতে পারেন এখানে
আমার সাহসী মা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।