আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিচারে বাদশাহও সমান....

কষ্ট হলেও সত্য বলা বা স্বীকার করার সাহসই সবচেয়ে বড় সততা।

মুসলিম খিলাফতের কর্ণধার তখন হযরত আলী (রা)। ইসলামের চতুর্থ খলিফা তিনি। তখন বিখ্যাত সিফ্‌ফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের সময় খলিফা তাঁর প্রিয় বর্মটি হারিয়ে ফেলেন।

অনেক খোঁজাখুঁজির পরও বর্মের কোন হদিস পাওয়া গেল না। ইতোমধ্যে যুদ্ধও শেষ হয়ে গেল। মুসলিম সাম্রাজ্যের রাজধানী তখন কুফায়। যুদ্ধের পর খলিফা রাজধানীতে ফিরে গেলেন। পরে তিনি জানতে পারলেন বর্মটি একজন ইহুদীর দখলে রয়েছে।

খলিফা লোকটিকে খবর দিয়ে নিয়ে আসলেন। ইহুদীটির সাথে তখনও বর্মটি ছিল। আলী (রা) ইহুদীকে বললেন, দেখ, এই বর্মটি আমার। তাই এটি আমাকে ফেরত দাও। ইহুদী লোকটি ছিল বজ্জাত।

মুসলমানদের বড় দুশমন। লোকটি চরম মিথ্যাবাদীও ছিল। সে হযরত আলীর (রা) দাবিকে পাত্তা দিল না। বরং তার দাবী সে অস্বীকার করে বসল। খলিফা তো ন্যায়বান মানুষ।

তাই তিনি এ নিয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য করলেন না। বরং আদালতে গিয়ে কাযীর কাছে বিচার প্রার্থনা করলেন। মুসলিম জাহানের অধিপতি হযরত আলী (রা)। বিশাল ভূখণ্ড তাঁর পদানত। অগণিত প্রজা তাঁর অনুগত।

সীমাহীন ক্ষমতা তাঁর মুষ্টিতে আবদ্ধ। অথচ এ প্রচণ্ড ক্ষমতাধর লোকটি তাঁর ক্ষমতা দেখলেন না। ইহুদীর উপর ক্ষীপ্ত হলেন না। বরং তাঁরই নিযুক্ত কাযীর কাছে বিচারপ্রার্থী হলেন। অপরাধীকে হাতের মুঠোয় পেলেন, তবে তার বিচারের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিলেন না।

বিচারের দিন ঘনিয়ে এল। খলিফা গিয়ে হাজির হলেন কাযীর আদালতে। আদালতের কর্মচারীগণ খলিফার উপস্থিতি টের পেয়ে গেল। তাই তারা খলিফার সম্মান ও মর্যাদার পরাকাষ্ঠা দেখাল। খলিফার সমাদর করার জন্য সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়ল।

গোটা আদালত প্রাঙ্গণে যেন সাজ সাজ অবস্থা। মহান খলিফার খেদমতের জন্য সামান্য হলেও যে যার মতো চেষ্টা চালাতে লাগল। এ অবস্থা হযরত আলীর (রা) পছন্দ হল না। তাই তিনি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন, আমি ফরিয়াদী হয়ে আদালতে এসেছি, এখন আমি খলিফা নই। তোমরা আমাকে এর বেশি কিছু মনে করো না।

খলিফার কথা শুনে সবাই তো হতবাক। আদালত জুড়ে নেমে এল পিন পতন নিরবতা। কেউ আর কোন কথা বলার সাহস পেল না। হযরত আলী (রা) কাঠগড়ায় গিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। সাধারণ ফরিয়াদী এবং তাঁর মধ্যে কোন তফাৎ ছিল না।

বিশ্বের অন্যতম খলিফার এ অবস্থা দেখে সবাই আরেকবার অবাক হল। কাযী সাহেব দু’পক্ষের বক্তব্য শুনলেন। এবার রায় ঘোষণা করার পালা। মজার ব্যাপার হল কাযীর রায় গেল হযরত আলীর (রা) বিপক্ষে। একজন মিথ্যাবাদী ইহুদীর নিকট খলিফা হেরে গেলেন।

হেরেছেন তো তাতে কি? খলিফার মধ্যে এর কোন প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেল না। ক্ষোভ বা বিরক্তির লেশমাত্র তাঁর মধ্যে দেখা গেল না। ন্যায়বান খলিফা বরং হাসিমুখে কাযীর বিচার মেনে নিলেন। মুসলিম খলিফার এ দৃষ্টান্ত কতইনা বিস্ময়কর!

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.