আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নিভে গেছে আশার আলো

রাজনৈতিক সংকট সমাধানে জাতিসংঘ মহাসচিবের দূত অস্কার ফারনান্দেজ তারানকোর সফরে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। যে উদ্দেশ্য নিয়ে তিনি ঢাকা এসেছিলেন, কার্যত তার কিছুই হয়নি। সমঝোতা করতে দুই বড় দলের মধ্যে ফলপ্রদ কোনো সংলাপের আয়োজন করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পূর্ব নির্ধারিত বৈঠকের কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা বাতিল করা হয়। সমঝোতার কোনো অগ্রগতি ছাড়াই বুধবার রাতে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।

তারানকোর সফরে সামান্য হলেও আশার আলো দেখেছিল মানুষ। কিন্তু নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দুই দলের অনমনীয়তার কারণে তার উদ্যোগ সফল হয়নি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। ফলে তারানকো চলে যাওয়ার পর সেই আশার আলোটুকুও নিভে গেছে।

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক সহিংসতা ও সংঘাত প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। সংকটের মধ্যেই নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। টানা হরতাল অবরোধের মধ্যে পড়ে সারা দেশ। বিভিন্ন স্থানে বাসে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় মানুষের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা আরও বেড়ে যায়। এই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে জাতিসংঘের সহকারী মহাসচিব তারানকোর সফরে আশান্বিত হয় দেশের মানুষ। সবাই প্রত্যাশা করেন, দুই দলকে নিয়ে তিনি একটি সমাধানে পেঁৗছাতে পারবেন। তারানকো ছয় দিনের সফরে আওয়ামী লীগ-বিএনপি ছাড়াও সুশীল সমাজ, কূটনীতিক, নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সংগঠনের সঙ্গে বৈঠক করেন। কিন্তু কোনো সমাধান না হওয়ায় সফর এক দিন বাড়ানো হয়। তবে শেষ পর্যন্ত তিনি মানুষের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছেন। নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে দুই দলের অনড় অবস্থানের মধ্যে অগ্রগতি ছাড়াই ঢাকা ত্যাগ করতে হয়েছে তারানকোকে। অনেকে বলছেন, অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে তিনি দুই দলকে একই টেবিলে বসিয়েছেন, এটা একটি অর্জন। দুই দল আলোচনা অব্যাহত রাখারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতারা সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন। সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ও কূটনীতিক ফারুক চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, 'তারানকোর সফরে দৃশ্যমান অগ্রগতি হচ্ছে, দুই দলের আটজন প্রতিনিধিকে একটেবিলে বসিয়েছেন। এই পর্যন্ত আসার জন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। অনেক দূরে সফরে আসতে হয়েছে। তিনি দুই দলের মধ্যে বিরাজমান সমস্যা ও কতটুকু মৌলিক সমস্যায় হাত দিতে পেরেছেন, তা প্রশ্ন সাপেক্ষ। এর চেয়ে বড় কথা তিনি কোনো মৌলিক সমস্যা সমাধানে সময় পাননি। তারানকো দুই দলের নেতাদের সঙ্গে ঠিক কী নিয়ে কথা বলেছেন, সে বিষয়েও আমাদের কোনো ধারণা নেই। তবে এই সফরে কার্যকর কোনো সমাধান হয়নি বলেই মনে হয়।' অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, 'আমাদের সংকট আমাদেরই সমাধান করতে হবে। তাদের দিকে তাকিয়ে থাকলে হবে না। যেখানে নিজেরা সংকট তৈরি করেছি, তা অন্য দেশের কেউ সমাধান করতে পারবে না। নিজেদের সদিচ্ছা না থাকায়, তারানকোর সফরে সুফল আসেনি।' সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবীর বলেন, 'তারানকোর সফরের মাধ্যমে আলোচনার প্রক্রিয়াটা শুরু হলো। তবে সেটা সফলতার পর্যায়ে নিয়ে যেতে অনেক কাজ করতে হবে। তারানকো নিজেই বলেছেন, দুই দলকে কাছাকাছি এনে আলোচনার টেবিলে বসতে সাহায্য করেছেন। এটাকে আমি ইতিবাচক দিক বলে মনে করি। তবে তারানকো যেটা শুরু করেছেন, সেটা সংকট সমাধানের একটা প্রক্রিয়া। এখানে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।'

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.