গ্যাস সংকটের কারণে দেশের শিল্প কারখানাগুলোয় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কারখানা মালিকদের অভিযোগ, তারা গ্যাস বিতরণ কোম্পানি থেকে চুক্তি অনুযায়ী গ্যাস পাচ্ছেন না। বিভিন্ন এলাকার কল-কারখানায় পর্যাপ্ত গ্যাস সরবরাহ না থাকায় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। আর কারখানা টিকিয়ে রাখতে মালিকরা বাধ্য হয়ে গ্রহণ করছেন ব্যয় সংকোচন নীতি। এরই মধ্যে অনেক জায়গায় চলছে শ্রমিক ছাঁটাই। আর এর প্রভাব পড়ছে অর্থনীতির ওপর। তবে পরিস্থিতি উত্তরণে শ্রীপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার লাইনে ২০ ইঞ্চির একটি সংযোগ লাইন করা হচ্ছে বলে পেট্রোবাংলা জানিয়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০১৫ সালের মধ্যে মজুদ গ্যাস পর্যায়ক্রমে কমতে শুরু করবে। আর গ্যাস সংকটের কথা বিবেচনা করে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অনাবিষ্কৃত গ্যাস ক্ষেত্রের খননকাজ শুরু করার জন্য তাগিদ দেন তারা।
জানা যায়, গ্যাসের অভাবে রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকা বিশেষ করে সাভার, গাজীপুর, কালিয়াকৈর, নারায়ণগঞ্জ, কোনাবাড়ী, সফিপুর, জয়দেবপুর ও আশুলিয়ার ছোট-বড় বহু শিল্প কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার সময় গুনছে। এর মধ্যে রয়েছে তৈরি পোশাক, কম্পোজিট টেঙ্টাইল, পাট, স্টিল,রি-রোলিং ও সিমেন্টসহ ক্ষুদ্র-মাঝারি বিভিন্ন শিল্প। কারখানা মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ এলাকাগুলোয় দিনের অধিকাংশ সময় গ্যাসের চাপ থাকে না। অনেক সময় সরবরাহও বন্ধ হয়ে যায়। কখনো গ্যাসের চাপ এমনভাবে ওঠানামা করে যে সে সময় শিল্প কারখানা চালু করাই সম্ভব হয় না। মালিকরা অভিযোগ করেন, চাহিদার তুলনায় অর্ধেক গ্যাসও পাওয়া যাচ্ছে না। অনেক কারখানা ২৫-৩০ শতাংশ উৎপাদন করে ধুঁকে ধুঁকে চলছে। এ অবস্থায় কারখানাগুলো সঠিক সময়ে রপ্তানি অর্ডার পেঁৗছাতে ব্যর্থ হওয়ায় রপ্তানি বাজার হারানোর আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে। ঠিকমতো উৎপাদন না হলেও ব্যাংক ঋণের কিস্তি দিতে হচ্ছে। অনেক শিল্পোদ্যোক্তা নতুন কারখানার জন্য যন্ত্রপাতি আমদানি করলেও গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় কারখানা শুরু করতে পারেননি। এ পরিস্থিতিতে গ্যাস উত্তোলন বাড়ানোর পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনও গ্যাস সরবরাহের উপযোগী করে তোলার দাবি জানান। কনজুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম এ জন্য নতুন গ্যাস ক্ষেত্র অনুসন্ধান ও এগুলোয় প্রয়োজনীয়সংখ্যক কূপ খননে জোর দিতে হবে বলে জানান।
পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, চাহিদার বিপরীতে উৎপাদিত গ্যাসের ঘাটতি রয়েছে প্রায় ৫ মিলিয়ন ঘনফুট। তবে চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখাই শিল্প কারখানাগুলোয় গ্যাস সংকটের জন্য দায়ী নয়। সমস্যা আছে সঞ্চালন লাইনেও। এ ব্যাপারে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর বলেন, 'শ্রীপুর থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার লাইনের ২০ ইঞ্চির একটি সংযোগ লাইন করা হচ্ছে। এর ফলে ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকার শিল্প কারখানায় গ্যাস সংকট কমে আসবে বলে আশা করছি। তিনি বলেন, জাতীয় সরবরাহ লাইন ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় উত্তোলিত গ্যাসও অনেক সময় শিল্প কারখানায় পেঁৗছায় না। অনেক মালিক একই লাইনে দুটি কারখানার উৎপাদন করেন। জানা যায়, দেশের উৎপাদিত গ্যাসের সিংহভাগই বিদ্যুৎ ও সার কারখানায় ব্যবহৃত হয়। অবশিষ্ট গ্যাস ব্যবহৃত হয় শিল্প কারখানায়। সরকার এর আগের মেয়াদে গ্যাস সংকট কমাতে ২০০৯ সালের ১ অক্টোবর থেকে সারা দেশে নতুন শিল্প ও বাণিজ্যিক সংযোগ বন্ধ করে দেয়। এরপর অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শিল্পে সংযোগ দিতে ২০১১ সালের ২ জানুয়ারি একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে। ২০১৩ সাল থেকে আবার নতুন সংযোগ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়।
বন্ধ হয়ে পড়েছে ৬০ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান
এদিকে গ্যাসের অভাবে রাজধানী ও তার আশপাশের এলাকায় ৬০ ভাগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানা যায়। ধুঁকছে আরও ২০ ভাগ শিল্পপ্রতিষ্ঠান। রাজধানীর পাশেই জিনজিরা, শুভাঢ্যা, মান্দাইল, কালিন্দী, বারিশুর ও খোলামুড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ২ হাজার ছোট ও মাঝারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। জিনজিরার ব্যবসায়ী সোলাইমান জানান, এক বছর আগে ১৬ লাখ টাকায় খোলামুড়ায় একটি মেটাল ইন্ডাস্ট্রি দিলেও গ্যাস সংযোগ দিতে না পারায় তা চালু করতে পারেননি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।