নগরীতে গ্যাস সংকটের অন্যতম কারণ অবৈধ গ্যাস সংযোগ হলেও সহজেই এ সমস্যার কোনো সমাধান মিলছে না। অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী চক্র ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। টাকা দিয়ে বৈধ সংযোগের নামে চক্রটি সাধারণ মানুষকে অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। আর তাদের ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্রাম্যমাণ অভিযান পরিচালনা করছে। আর নিরীহ মানুষ যারা টাকা দিয়ে গ্যাসের লাইন নিয়েছেন তারা হচ্ছেন অবৈধ গ্যাস সংযোগ নেওয়ার অপরাধে মামলার আসামি। অন্যদিকে স্থানীয় সংসদ সদস্যের নাম ভাঙিয়ে যেসব রাজনৈতিক নেতা-কর্মী লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তারা থাকছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। সংশ্লিষ্টরা জানান, অবৈধ গ্যাস সরবরাহকারী চক্র ভ্রাম্যমাণ আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিছুই তোয়াক্কা করছে না। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলেই সংযোগ বিচ্ছিন্নকারী তিতাস ও পেট্রোবাংলা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী চক্র ও সে এলাকার প্রভাবশালী লোকদের তোপের মুখে পড়তে হচ্ছে। তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লি. সূত্রে জানা যায়, রাজধানীতে অবৈধ গ্যাস সংযোগের সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। বিভিন্ন সময় পেট্রোবাংলা ও তিতাসের লোকজন ভ্রাম্যমাণ আদালতের সাহায্যে পরিচালিত অভিযানের মাধ্যমে এ সংযোগগুলো বিচ্ছিন্ন করার উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রভাবশালীদের কারণে অভিযান চালনার সময় বাধার মুখে পড়তে হয়। এমনকি এলাকাবাসীর কাছে লাঞ্ছনার শিকারও হতে হয়। তিতাসের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য কেউই এ লাঞ্ছনার হাত থেকে বাদ পড়েন না। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায় অবৈধ গ্যাস সংযোগকারী চক্রটি জিআই পাইপ কিনে তা মূল লাইনের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে মাইলের পর মাইল বিস্তৃত করেছে। আর এ লাইন থেকে বেআইনিভাবে সংযোগ দিয়ে জ্বালানো হচ্ছে শত শত চুলা। ভুক্তভোগীরা জানান, বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা গ্রাহকদের কাছে বৈধ গ্যাস সংযোগের কথা বলে অবৈধ সংযোগ দিচ্ছেন। এ জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যার কাছে যা পাচ্ছেন তা হাতিয়ে নিচ্ছেন। নির্বাচনের আগে মানুষের কাছে গ্যাস সংযোগের কথা বলে স্থানীয় এমপিদের সহায়তাকারী তিতাস গ্যাসের কালো তালিকাভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও সংঘবদ্ধ চক্র এক হয়ে এসব অবৈধ সংযোগ দিচ্ছে। জানা যায়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও গাজীপুর, রূপগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, আশুলিয়া ও সোনারগাঁ এলাকায় অবৈধ গ্যাস সংযোগের হিড়িক পড়েছে। নির্বাচনের আগে এসব এলাকায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের নামে সাধারণ মানুষকে অবৈধভাবে গ্যাস লাইন দেওয়া হচ্ছে। স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রিয়ভাজন রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা আবাসিক অবৈধ সংযোগের জন্য ৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করছে বলে জানা গেছে। এ রাজনৈতিক চক্র বিপজ্জনকভাবে সঞ্চালক লাইন থেকে অবৈধভাবে গ্যাস দিচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, ঢাকার আশপাশের অনুন্নত এলাকাগুলোতে অভিযান চালানোর সময় পেট্রোবাংলা, তিতাস ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এমনকি কিছু এলাকায় মসজিদে মাইকিং করেও হামলা চালানোর কথা জানা যায়। ফলে অবৈধ গ্যাস সংযোগের বিরুদ্ধে চালানো অভিযান সফল হচ্ছে না। পেট্রোবাংলার চেয়ানম্যান ড. হোসেন মনসুর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের সীমিত জনবল দিয়ে অভিযান চালিয়ে পেরে উঠছি না। অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে কখনো কখনো আমাদের লোকদের সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর রোষানলে পড়তে হচ্ছে। অবৈধ সংযোগকারীদের পুরো চক্রটি ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।