এবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘অবৈধ প্রধানমন্ত্রী’ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডনের ওয়েস্ট মিনিস্টার সেন্ট্রাল হলে মঙ্গলবার যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত ব্রিটিশ-বাংলাদেশি সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রথম অবৈধ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান। কারণ তিনি ’৭১ সালের ১০ এপ্রিল গৃহীত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র উপেক্ষা করে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। ’ তারেক রহমান ঘোষণাপত্রের একটি বক্তব্য তুলে ধরে বলেন, এতে লেখা আছে- ‘এতদ্বারা দৃঢ়ভাবে ঘোষণা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিতেছি যে সংবিধান প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি এবং সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রজাতন্ত্রের উপ-রাষ্ট্রপতি থাকিবেন। ’ তারেক বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে শেখ মুজিব ১২ জানুয়ারি কীভাবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন? তখন তো সংবিধান প্রণীত হয়নি।
’ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক অভিযোগ করেন, ‘শেখ মুজিবের মতো তার মেয়েও বর্তমানে অবৈধভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে আছেন। ’ তারেক রহমান ২০১০ সালের অক্টোবরের ‘সাপ্তাহিক’ পত্রিকায় প্রকাশিত গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের একটি সাক্ষাৎকারের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, ‘শেখ মুজিব মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরেছিলেন পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে। ’ ‘পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে দেশে ফিরে হয়ে গেলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। তিনি জাতিসংঘের ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে ফিরতে পারতেন। কিন্তু তিনি তাও করেননি।
’ যুক্তরাজ্য বিএনপি আয়োজিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি শায়েস্তা চৌধুরী কুদ্দুস। ওয়েস্ট মিনিস্টার হলের ওই অনুষ্ঠানে তারেক রহমান দুই সপ্তাহ আগে তারই দেওয়া বক্তব্যে জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের ‘প্রথম রাষ্ট্রপতি’ হিসেবে দাবির সপক্ষে যুক্তি পুনরায় তুলে ধরেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার সে বক্তব্যের সত্যতা নাকচ করে আওয়ামী লীগের কোনো নেতাই কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা না দিয়ে অশ্লীল কথা বলেছেন। বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে ২০০৮ সাল থেকে প্রবাসে থাকা তারেক বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে ছোট করতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৪০০ টাকার মেজর’। এ ধরনের মন্তব্য করে তিনি বরং মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকেই অপমান করেছেন।
” ‘কারণ, এই ৪০০ টাকার মেজর, ২০০ টাকার ক্যাপ্টেন, ১০০ টাকার সিপাহি, ৫০ টাকার কৃষক কিংবা লুঙ্গি পরা গামছা পরা স্বাধীনতাকামী মানুষই কখনো একবেলা অথবা আধবেলা খেয়ে না খেয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। আওয়ামী লীগ নেতাদের মতো নিরাপদে কলকাতা পাড়ি জমালে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। ’শেখ মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা চাননি বলেও দাবি করেন তারেক রহমান। তিনি বলেন, ‘শেখ মুজিব চেয়েছিলেন স্বায়ত্তশাসন। ’ এ সময় তিনি বিদেশি একটি সংবাদ সংস্থায় প্রচারিত বঙ্গবন্ধুর দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারের ভিডিও ক্লিপ দেখান।
তাতে দেখা যায়, শেখ মুজিব বিদেশি এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘স্বাধীনতা? নো, নো আই ডোন্ট মিন দ্যাট, আই ওয়ান্ট অটোনমি। ’ অনুষ্ঠানে তারেক রহমান মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার কে এম সফিউল্লাহর ‘বাংলা নামের দেশ’ বইয়ের রেকর্ড, ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের রেকর্ড, ভারতরক্ষক সাইটের রেকর্ডও দেখান, যেখানে জিয়াউর রহমানকেই স্বাধীনতার ঘোষক ও রাষ্ট্রপ্রধান বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি ‘মুক্তিযুদ্ধের পূর্বাপর’ নামে একটি বই থেকে তাজউদ্দীন আহমদের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘২৫ মার্চ রাতে তাজউদ্দীন আহমদ শেখ মুজিবকে স্বাধীনতা ঘোষণার অনুরোধ জানালে শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে অস্বীকৃতি জানান। ’ ‘তিনি তাজউদ্দীনকে সাফ জানিয়ে দেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিলে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হতে পারে। ’ বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সম্প্রতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণাকে তাচ্ছিল্য করার জন্য বলেছেন যে কারও ঘোষণা-টোষণায় মুক্তিযুদ্ধ হয়নি।
কিন্তু তার লেখা ‘বাংলাদেশ : এমারজেন্স অব এ নেশন’ বইয়ের ১৪৩ পৃষ্ঠায় লেখা আছে- ‘মেজর জিয়া (লেটার প্রেসিডেন্ট) ওয়াজ দ্য ফার্স্ট টু ডিক্লেয়ার ইনডিপেনডেন্স। ’
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।