আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অক্টোবরে অবরোধ অসহযোগ

তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে সরকার কোনো ফয়সালায় না গেলে অক্টোবরে অসহযোগ আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। ১০ অক্টোবরের পর থেকেই দেওয়া হবে লাগাতার হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ বিভিন্ন কর্মসূচি। আর ২০ তারিখের পর থেকে অসহযোগ। তার আগে সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড শেষবারের মতো চাঙ্গা করে নেবে বিএনপি। সেপ্টেম্বরে জাতীয় কাউন্সিলের পাশাপাশি যুবদল, কৃষক দল ও জাসাসসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি সর্বাত্দক প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে সরকারবিরোধী আন্দোলনের। কেন্দ্রীয় নেতারা জেলা-উপজেলা সফরে যাচ্ছেন ঈদের পর থেকেই। মাঝেমধ্যে দু-একদিনের হরতালও দেওয়া হবে। অতঃপর অক্টোবরে অসহযোগ কর্মসূচি। পয়েন্ট অব নো রিটার্নে যাবে ১৮ দল। বিষয়টিকে অস্তিত্বের প্রশ্ন হিসেবে নিয়েছে বিরোধী জোট।

অসহযোগ কর্মসূচির আওতায় সর্বক্ষেত্রে সরকারকে অসহযোগিতা করা হবে। সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা যারা থাকবেন সবাইকে রাস্তাঘাটে প্রতিরোধ করার প্রস্তুতিওনেওয়া হচ্ছে। ব্যবসায়ীসহ সর্বস্তরের জনগণকে সব ধরনের ট্যাঙ্ প্রদান বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হবে। আর অক্টোবরের শেষের দিকে সংবিধান অনুযায়ী সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যদি মহাজোট সরকার ক্ষমতা না ছাড়ে তবে নজিরবিহীন আন্দোলন শুরু হয়ে যেতে পারে দেশব্যাপী। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের ভাষ্য- তত্ত্বাবধায়ক না মানলে হরতাল, অবরোধ, ঘেরাওসহ এহেন কর্মসূচি নেই_ যা না দেওয়া হবে। সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় নিতে যা যা করা দরকার তার সবকিছুই করা হবে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে।

এরই মধ্যে বিএনপি ও জামায়াতসহ ১৮ দলের যেসব নেতা গত সাড়ে চার বছর ধরেই এলাকা ছাড়া তারা নিজেদের এলাকায় ফিরে আসতে শুরু করেছেন। সেপ্টেম্বরের মধ্যেই এ ধরনের সব নেতা-কর্মীই তাদের নিজ নিজ এলাকা তথা বাড়িঘরে ফিরবেন- এমন একটি নির্দেশনাও রয়েছে কেন্দ্র থেকে। বিশেষ করে যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, নড়াইলসহ দক্ষিণাঞ্চলের জেলা এবং এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগের নোয়াখালী, ফেনী, চাঁদপুরসহ উত্তরাঞ্চলের পাবনা, সিরাজগঞ্জসহ বেশ কিছু জেলার নেতা-কর্মী যারা এ সরকারের পুরো সময়টাই আত্দগোপন করে আছেন তারাও এখন পরিকল্পিতভাবে এলাকায় ফিরতে যাচ্ছেন।

তবে ঈদের পর আসলে দেশে কী ঘটতে যাচ্ছে, এ নিয়ে সর্বত্রই চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় রয়েছে দেশবাসী। ঈদ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে খোদ রাজনীতিবিদরাও শঙ্কিত। আশঙ্কা প্রকাশ করে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রতিবেদনও প্রকাশ করছে। এসব প্রতিবেদনে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক ইস্যু, মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার, জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল, হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা ইত্যাদি ইস্যুতে বাংলাদেশের রাজপথে সহিংসতাসহ রক্তপাতেরও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে। এদিকে তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ঈদের পর রাজপথে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোট। অন্যদিকে বিরোধী দলকে মোকাবিলায় পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে থাকার কথাও বলছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট। এর মধ্যে গত ২৯ জুলাই হাইকোর্ট রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করেছেন। এরই মধ্যে নিবন্ধন বাতিলের আদেশ প্রত্যাখ্যান করে জামায়াতে ইসলামী আগামী ১৩ ও ১৪ আগস্ট দেশব্যাপী টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দলটির শীর্ষ নেতাদের বিচারের বিষয়টি তো আছেই। আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের মধ্যে যুদ্ধাপরাধের দণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের দু-একজন শীর্ষ নেতার রায় কার্যকর হতে পারে বলেও সাম্প্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ কয়েকজন মন্ত্রী ইঙ্গিত দিয়েছেন।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, নিজেদের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষায় জামায়াতে ইসলামী ঈদের পর থেকেই মরণকামড় দেবে। এবার সর্বশক্তি নিয়ে মাঠে নামবে তারা। রমজানে দলের নিবন্ধন বাতিল সংক্রান্ত আদালতের রায়কে সরকারের রাজনৈতিক স্ট্যান্টবাজি হিসেবেই মনে করছেন জামায়াতের শীর্ষ নেতারা। তাই নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার্থেই তারা এবার সরকারের বিরুদ্ধে সব ধরনের প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করবে। ঈদের পর বড় ধরনের আন্দোলনের জন্য দেশব্যাপী তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রস্তুতির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এরই মধ্যে। এমনকি চূড়ান্ত আন্দোলনের একপর্যায়ে সারা দেশ থেকে জামায়াত-শিবির তাদের ক্যাডারদের ঢাকায় আনার পরিকল্পনাও নিয়ে ফেলেছে। অন্যদিকে হেফাজতে ইসলামও ঈদের পর তাদের ১৩ দফা বাস্তবায়নে আন্দোলনে নামার আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। গত ৫ মের শাপলা চত্বরের যৌথ অভিযানে হতাহতের ঘটনার পর সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এলোমেলো হয়ে গেলেও এরই মধ্যে তার অনেকটাই কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন তারা। তবে দেশব্যাপী তৃণমূল নেতা-কর্মীরা এখনো সুসংগঠিত। তাই তারাও সরকারের শেষ সময়ে রাজপথে সক্রিয় থেকে সমুচিত জবাব দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ প্রসঙ্গে বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি মেনে না নিলে ঈদের পর থেকেই এক দফা আন্দোলনে যাবেন তারা। প্রয়োজনে কঠোর থেকে কঠোরতর কর্মসূচি দিয়ে হলেও সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করা হবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে আশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। অন্যথায় এ সরকারের পরিণতি শুভ হবে না। চরম মাশুল গুনতে হবে জনগণের কাছে।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এম মোর্শেদ খান দলের কাউন্সিল সম্পর্কে বলেন, এ বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ঈদের পর পরই আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া দলের সর্বোচ্চ ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক ডাকবেন। সে বৈঠকেই কাউন্সিলের তারিখ ঠিক করা হবে। তবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহালের দাবিতে এক দফার আন্দোলনের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনা করে বেগম খালেদা জিয়া চূড়ান্ত আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণ করবেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

এদিকে সরকারি ও বিরোধী দলের অনেক নীতিনির্ধারকও এখন আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ পরিস্থিতি খারাপ হলে কী করবেন তারও আগাম ব্যবস্থা করে রেখেছেন। এমনকি দুই প্রধান দলের শীর্ষ নেতারাও মনে করেন, বর্তমান যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে আগামী জাতীয় নির্বাচন আদৌ হবে কিনা তা বলা মুশকিল। কারণ প্রধান বিরোধী দলকে বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন হলে তা কারও কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান এ প্রসঙ্গে বলেন, নির্বাচন নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে উত্তরণের কোনো পথ তো দেখছি না। সবাই আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সামনের দিনগুলোতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এগোচ্ছে। আর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে শুধু তৃতীয় কেন, যে কোনো পক্ষই চলে আসতে পারে।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.