আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাশকতা হামলায় শেষ হলো আতঙ্কের ভোট

বিরোধী দলের হরতাল, অবরোধ, বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে নাশকতা ও হামলার মধ্য দিয়ে গতকাল বিকাল ৪টায় ১৪৭ আসনে দশম সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে দেড় শতাধিক ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। এ ছাড়া ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও পোলিং এজেন্টদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ১০ স্বতন্ত্রসহ ১৩ প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের পরে এ ধরনের ঘোষণার আইনি সুযোগ না থাকায় তারা যে ভোট পেয়েছেন তা গণনা করবে ইসি।

এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ জানিয়েছেন প্রধান বিরোধী দলসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অংশ না নেওয়ায় ভোটার উপস্থিতি অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে।

নবম সংসদে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়লেও বহুল আলোচিত বিএনপির একতরফা ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে সর্বনিম্ন ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ। সন্ধ্যা পর্যন্ত ভোট গ্রহণের হার জানাতে পারেনি ইসি।

ভোট গণনা শেষে চলছে ফলাফল প্রদানের প্রক্রিয়া। সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রার্থীর এজেন্টদের উপস্থিতিতে তা চলছে। কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণার পরে তা টানিয়ে দেবেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।

এ ফল রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে পৌঁছানোর পর একীভূত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারি প্রাথমিক ফলাফল ঘোষণা করবেন। পরে এ ফলাফল ইসি সচিবালয়ে পাঠানোর পর কমিশনের পক্ষ থেকে তা ঘোষণা করা হবে।

দেড় শতাধিক কেন্দ্রে ভোট স্থগিত : ব্যালট ছিনতাই, ব্যালট পুড়িয়ে দেওয়া ও কেন্দ্র অগি্নসংযোগের ১৪৩ ভোটকেন্দ্রের তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তারা ইসিতে প্রতিবেদন পাঠিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রংপুর-৪ আসনের ৪১টি ও রংপুর-৩ আসনের তিনটি কেন্দ্র রয়েছে।

ইসি কর্মকর্তারা জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের পাঠানো তথ্যে ক্ষতিগ্রস্ত অধিকাংশ কেন্দ্র ভোট গ্রহণ করার অনুপযোগী ছিল। এগুলোতে ভোট স্থগিত করা হয়েছে। রংপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ বলেন, বেশ কিছু কেন্দ্র অগি্নসংযোগ ও নাশকতার কারণে স্থগিত করা হয়েছে। ইসি সচিবালয়ের ভোট গ্রহণ সম্পর্কিত সমন্বয় সেলের তথ্য অনুযায়ী, বগুড়া-৭ আসনে ৯টি, চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ২টি, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে ৩টি, ফেনী-৩ আসনে ১টি, কুমিল্লা-৯ আসনে ৪টি, হবিগঞ্জ-২ আসনে ২টি, গাইবান্ধা-৪ আসনে ২০টি, গাইবান্ধা-৩ আসনে ২১টি, গাইবান্ধা-১ আসনে ২টি, রংপুর-৪ আসনে ৪১টি, রংপুর-৩ আসনে ৩টি, লালমনিরহাট-১ আসনে ১টি, নীলফামারী-৩ আসনে ৪টি, নীলফামারী-১ আসনে ৫টি, দিনাজপুর-৫ আসনে ১টি, দিনাজপুর-৪ আসনে ১৪টি ও ঠাকুরগাঁও-১ আসনে ৩টি কেন্দ্র রয়েছে। স্থগিত কেন্দ্রে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ভোট গ্রহণ করবে ইসি।

১৯৯৬-এর চিত্র : ইসি সচিবালয় জানায়, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে ২৬.৫ শতাংশ ভোট পড়েছিল। ওই সময় ৩ শতাধিক কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়। স্থগিত ভোটকেন্দ্রে জয়ী-বিজিতের ব্যবধানের চেয়ে বেশি ভোট থাকায় ১১টি আসনে ভোট স্থগিত ছিল বলেও জানান এক কর্মকর্তা।

গত নয়টি সংসদের ভোটের হার : ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ প্রথম সংসদে ৫৫ দশমিক ৬ শতাংশ, ১৯৭৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় সংসদে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ, ১৯৮৬ সালের ৭ মে তৃতীয় সংসদে ৬৬ দশমমিক ৩ শতাংশ, ১৯৮৮ সালের ৩ মে চতুর্থ সংসদে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ, ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫৫ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৯৯৬ সালের ১২ জুন ৭৫ শতাংশ, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর ৭৫ দশমিক ৬ শতাংশ ও ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদে ৮৭ দশমিক ১৩ শতাংশ ভোট পড়ে।

ইসিতে জাপা : বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়-ভীতি দেখানো, ভোট দিতে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানিয়েছে জাতীয় পার্টি।

গতকাল নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজের সঙ্গে জাতীয় পার্টির চার সদস্যের প্রতিনিধি দল দেখা করে এ ?অভিযোগ করেন। জাতীয় পার্টির দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য তাজুল ইসলাম চৌধুরী প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।

চলছে ফলাফল প্রদানের প্রস্তুতি : ইসি চত্বরে স্থাপিত 'কেন্দ্রীয় প্রাথমিক বেসরকারি ফলাফল সংগ্রহ ও পরিবেশন কেন্দ্র' থেকে ইসি সচিব তা ঘোষণা করবেন। এতে উপস্থিত থাকতে ইতোমধ্যে ১২টি দলের প্রতিনিধি, পর্যবেক্ষক, সাংবাদিক ও প্রার্থীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। রাত ৮টার পর থেকে ইসি বেসরকারি ফল ঘোষণা শুরু হয়েছে।

স্কাউট সদস্যরা ফল সংগ্রহে সহায়তা করতে ইসিতে উপস্থিত রয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা সংক্রান্ত উপকমিটির আহ্বায়ক মহীউদ্দীন খান আলমগীর সাংবাদিকদের জানান, ভোটার উপস্থিতি সন্তোষজনক। সকালের তুলনায় বিকালে উপস্থিতি বেড়েছে।

ভোট বর্জনের ঘোষণা ১৩ প্রার্থীর : ভোট কারচুপি, কেন্দ্র দখল ও পোলিং এজেন্টদের মারধর করাসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনে ১০ স্বতন্ত্রসহ ১৩ প্রার্থী নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। এরা হলেন- ঢাকা-১৫ আসনের মোহাম্মদ এখলাস উদ্দিন মোল্লা, শেরপুর-২ আসনের বদিউজ্জামান বাদশা, নারায়ণগঞ্জ-১ আসনের শওকত আলী, বরগুনা-২ আসনের আবুল হোসেন শিকদার, সিরাজগঞ্জ-৫ আসনের আতাউর রহমান রতন, লক্ষ্মীপুর-৪ আসনের এ কে এম শরিফ উদ্দিন ও আজাদ উদ্দিন চৌধুরী, বরিশাল-২ আসনের সাবিনা আখতার, জামালপুর-১ আসনের আজিজ আহমেদ হাসান ও জামালপুর-২ আসনের আতিকুর রহমান।

এ ছাড়াও রয়েছেন চট্টগ্রাম-১২ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, জামালপুর-৫ আসনের জাতীয় পার্টির (জেপি) প্রার্থী বাবর আলী খান ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৩ আসনের ফরিদ আহমেদ। এ বিষয়ে ইসি সচিবালয়ের উপসচিব মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর ভোটে না থাকার কোনো সুযোগ নেই। আইনগতভাবে তারা প্রার্থী। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তারাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান তিনি। ঢাকায় দুপুরে নির্বাচন কমিশনে হাজির হয়ে নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেন কাজীপাড়া, সেনপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলা (একটি অংশ) ও ইব্রাহীমপুরসহ কাফরুল থানা নিয়ে গঠিত ঢাকা-১৫ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এখলাস উদ্দিন মোল্লা।

তিনি বলেন, সরকার ঘোষণা দিয়েছিল সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হবে। আমরাও তা বিশ্বাস করেছিলাম। জনগণও বিশ্বাস করেছিল। কিন্তু এখন দেখছি, ভোটকেন্দ্র দখল করছে সরকারি দলের প্রার্থীর সমর্থকরা। ১২৯টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে দুপুর ১টার মধ্যে ৭০টি কেন্দ্র দখল করে নিয়েছে তারা।

এ অবস্থায় নির্বাচন করা সম্ভব নয়।

স্থগিত কেন্দ্রে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে ভোট : সিইসি বলেন, স্থগিত কেন্দ্রগুলোতে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে পুনরায় ভোট হবে। এ সংসদের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকায় এর মধ্যে নির্বাচন শেষ করতে হবে। ইসি কর্মকর্তারা জানান, স্থগিত ভোটকেন্দ্রে পুনঃভোট করার প্রয়োজনীয়তা থাকবে তখনই যদি বাকি কেন্দ্রের ভোটের ফলাফলে জয়ী ও বিজিতের ভোটার সংখ্যা খুবই নগণ্য হয়। জয়ী ও বিজিতের ভোটার ব্যবধান স্থগিত ভোটকেন্দ্রের ভোটার সংখ্যার কম হলে পুনঃভোট হয়।

জয়-পরাজয়ের ব্যবধানের চেয়ে স্থগিত কেন্দ্রে ভোটার বেশি হলেই পুনঃভোট হবে, স্থগিত কেন্দ্রে কম ভোট থাকলে পুনঃভোটের প্রয়োজন পড়বে না।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.