বিশ্বের মোট ১০টি দেশ ও সংস্থার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নতুন সরকারকে অভিনন্দন ও সমর্থন জানানো হয়েছে। সেই অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের ওবামা প্রশাসনের 'অভিনন্দন বার্তা' পাওয়া না গেলেও রাশিয়া, চীন, ভারত, বেলারুশ, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, নেপাল ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে এসেছে আনুষ্ঠানিক শুভেচ্ছা বার্তা। সতর্ক প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে 'নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার' ঘোষণা এসেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে। কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অংশ হিসেবে দু-এক দিনের মধ্যেই বাকি রাষ্ট্র ও সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকেও এ ধরনের সমর্থন পাওয়া যাবে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ঠিক একই সময়ে বাংলাদেশের বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ বিএনপিকে বিদেশি রাষ্ট্রের কূটনীতিকরা দিয়েছেন নানান পরামর্শ।
গত দুই দিনের কূটনৈতিক অগ্রগতি অনুসারে, নতুন সরকার গঠনের বাস্তবতায় রাশিয়া আবারও বাংলাদেশের পুরনো বন্ধু আওয়ামী লীগের প্রতি হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন অভিনন্দন জানিয়ে বিশ্বকে বুঝিয়ে দিলেন 'তিনি আছেন শেখ হাসিনার সঙ্গেই'। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে পুতিন একটি চিঠি লিখেছেন। ঢাকায় রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার নিকোলায়েভ মঙ্গলবার বিকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে গিয়ে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির লেখা সেই চিঠি দিয়ে আসেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য জানিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের এই মেয়াদেও রাশিয়া আগের মতোই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করার পাশাপাশি বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় হবে বলে আশা প্রকাশ করেছে।
নতুন সরকারকে সরাসরি 'অভিনন্দন' এখনো জানাতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিরোধীদের ছাড়া নির্বাচন নিয়ে এখনো তাদের হতাশা রয়েছে। তবে এর পরও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ অব্যাহত রাখবে যুক্তরাষ্ট্র। ওয়াশিংটনে স্টেট ডিপার্টমেন্টে নিয়মিত ব্রিফিংয়ে (বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর রাতে) সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র মেরি হার্ফ এ কথা জানান। ওয়াশিংটনে মার্কিন মুখপাত্রকে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করেন, 'শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হিসেবে আপনারা স্বীকৃতি দেননি। নির্বাচনের পর আপনারা কি সরকারকে স্বীকৃতি দেবেন?' জবাবে মেরি হার্ফ বলেন, 'বিষয়টি আসলে ঠিক এমন নয়। আমরা অবশ্যই নির্বাচিত সরকারের সঙ্গে কাজ করি, কিন্তু এসব নির্বাচনের বিষয়ে, এরই মধ্যে নির্বাচন নিয়ে আমাদের হতাশার বিষয়টি আমরা পরিষ্কার করেছি। আমাদের দৃষ্টিতে যেহেতু নতুন সংসদের অধিকাংশ আসনে (৩০০-এর মধ্যে ১৫৩টি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি এবং বাকিগুলোয় নামমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল, কাজেই এ নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছার বিশ্বাসযোগ্য প্রতিফলন ঘটেনি। এ জন্য আমাদের উদ্বেগের বিষয়টি পরিষ্কার করব।'
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গঠিত নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছে মিয়ানমার। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট থিয়েন সেইন মঙ্গলবার এক বার্তায় নিজ দেশের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। অভিনন্দন বার্তায় মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে কাজ করতে তারা প্রস্তুত আছেন।
শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো নেপালের মন্ত্রিপরিষদের চেয়ারম্যান খিল রাজ রেগমির মঙ্গলবারের অভিনন্দন বার্তায় বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর মতো উচ্চপদে আবারও দায়িত্ব গ্রহণের জন্য আমার সরকার, নেপালের জনগণ ও নিজের পক্ষ থেকে আপনাকে আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের অব্যাহত উন্নতি ও সমৃদ্ধি কামনা করে অভিনন্দন বার্তায় খিল রাজ রেগমি বলেন, আমি আশাবাদী যে আপনার সরকারের মেয়াদে দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অধিকতর জোরদার হবে। বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী মিখাইল মিয়াসিনোকোভিচ গতকাল শেখ হাসিনার কাছে অভিনন্দন বার্তা পাঠিয়েছেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়ে বলা হয়, বেলারুশের প্রধানমন্ত্রী তার শুভেচ্ছা বার্তায় বলেছেন, নির্বাচনে প্রত্যয়ী বিজয়ের জন্য আপনাকে অভিনন্দন। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সহযোগিতার পাশাপাশি শিক্ষা, কৃষি, বাণিজ্য, অর্থনীতি, বিজ্ঞান ও সামরিক খাতে সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং সরকার গঠনের দিনই রবিবার বিকালে টেলিফোনে শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানান। পর দিন সোমবার টেলিফোনে শুভেচ্ছা জানান ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি। সেদিনই টেলিফোন করেন ভারতের প্রধান বিরোধী দল বিজেপির প্রভাবশালী নেতা এল কে আদভানি। সেদিন অবশ্য কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রীও অভিনন্দন জানান। চীনের প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াং সোমবার এক বার্তায় দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে সরকার গঠন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সোমবার বিকালে ঢাকায় চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হকের কাছে চীনা প্রধানমন্ত্রীর এ অভিনন্দন বার্তা পেঁৗছে দেন। পারস্পরিক সহযোগিতা ও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আশা চীনা প্রধানমন্ত্রীর। ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী নগুয়েন তান দুং অভিনন্দন বার্তায় আশা প্রকাশ করেন, শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে অধিকতর সমৃদ্ধ ও সুখী দেশ গঠনে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে অগ্রগতি অর্জন করবে।
অন্যদিকে, সরকার গঠন হওয়ার পর থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপির প্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, কানাডা, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, সুইডেন, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা সাক্ষাৎ ও বৈঠক করেছেন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, এসব বৈঠকে বিদেশিদের অবস্থান ও বাস্তবতা সম্পর্কে বেগম খালেদা জিয়াকে স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে। পরামর্শ হিসেবে বলা হয়েছে, সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ করে 'নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন' চালিয়ে যাওয়ার। সরকারের সঙ্গে আলোচনার জন্য নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতির কথাও আছে পরামর্শে। স্বাধীন মতপ্রকাশের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ, কানাডার পক্ষ থেকে সরকারের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, জনগণের চাহিদা অনুসারে দ্রুত একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিএনপির পাশে থাকবে তারা। জামায়াতে ইসলামীকে ত্যাগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিএনপির ওপরই নির্ভর করছে উল্লেখ করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণই ঠিক করবে কোন দল রাজনীতি করবে কে করবে না। জনগণ না চাইলে রাজনীতি করার অধিকার থাকবে না এটাই স্বাভাবিক। সেই সঙ্গে মতপ্রকাশের অধিকার ক্ষুণ্ন করবে এমন কোনো সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়াও গ্রহণযোগ্য নয়। গত কয়েক মাসের সহিংসতা গ্রহণযোগ্য নয় বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে বিএনপিকে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।