আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি না ভোলা দিন!



জীবন অনেক সুন্দর। অনেক বৈচিত্রময়। প্রতিটা প্রদক্ষেপেই আমাদের শিখার অনেক কিছুই আছে। জীবন অনেক ক্ষুদ্র হলেও এই ক্ষুদ্রেও জীবন থেকে আমাদের প্রাপ্তি বিশাল। একে কখনোই অর্থ দন্ডে মাপা যাবে না।

মাপাটাও বড় বেয়াদবি। জীবন হল উপভোগের জিনিষ। আর উপভোগ কখনোই পুরোপুরি ভোগ নয়। বিধাতার কাছে একটাই চাওয়া, ডেক না মোরে, ডেক না গো আর, ডেক না অমন করে। আমি আরও উপভোগ করতে চাই।

আরও অভিজ্ঞতা নিতে চাই এই ক্ষুদ্র জীবন থেকে।

ঘটনার ৫ কি ৬ দিন আগে এক রাতে আমার ফোনে একটা কল আসে। কল না বলে একে বড়সড় ধরনের একটা মিসড কল বলা চলে। আমি সাধারণত কোন অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসলে ধরি না। কিন্তু সেদিন কি মনে করে কলটা মিসড হওয়া সত্ত্বেও আমি ফিরতি কল দেই।

জানিনা কেন এমনটা করলাম। হয়ত চ্যাপ্টারটার ওখান থেকে শুরু হবে বলেই আমার কলটা ব্যাক করা। বিধির খেলা বলে কথা। তো ফোন দিয়ে আমি হ্যালো হ্যালো করতে থাকলাম। কিন্তু ওপাশ থেকে কেউই কথা বলছিল না।

কিন্তু একটা গলা খাকাড়ি দিল। বুঝে গেলাম সামথিং ওয়জ গোইং টু বি রং। আমি ফোন কেটে দিলাম। এক মিনিটের মাথায় ঐ নাম্বার থেকে আবার ফোন এল। বলল, এটা কি সামিহার নাম্বার।

আমি বললাম, স্যরি আপনি নাম্বার ভুল করেছেন। আমি নিজেই ফোনটা কেটে দিলাম। কয়েক মিনিট পর আবার কল আসল ঐ নাম্বার থেকে। আমি ধরার পর অনেক স্যরি টরি বলল। আমি ওকে ওকে বলে গেলাম।

আমাকে জিজ্ঞেশ করল আমার বাসা কোথায়। আমি বললাম। আমিও জিজ্ঞেশ করলাম, কোত্থেকে ফোন করেছে। বলল, ঢাকা থেকে ফোন করেছে। ঠিক আছে বলে রেখে দিলাম।



পরেরদিন ঐ নাম্বারটা থেকে আবারও ফোন আসল। সে বলল, আগেরদিন আমি মিথ্যে বলেছিলাম। আসলে আপনার(আমার) নাম্বারটা আমার ফোনে ছিল। পুরাতন কিছু ম্যাসেজ ডিলেট করতে গিয়ে দেখি আপনার নাম্বারটা। ভাবলাম দেখি কে এই মানুষ।

তাই গতদিন আপনাকে আমি মিথ্যে বলে জানতে চেয়েছিলাম। আসলে আমার জানার ইচ্ছে ছিল আপনি নাম্বারটা কোথায় পেয়েছিলেন।

আমি তাকে জিজ্ঞেশ করলাম যে আমি কি ধরনের ম্যাসেজ করেছিলাম। ও আমাকে একটা ম্যাসেজের ক্লু দিল। আমি কিছুক্ষন ভেবে মনে করতে পারলাম।

এক বৎসরেরও অনেক আগে আমি এই ধরনের একটা ম্যাসেজ করেছিলাম। আসলে ভুলটা ছিলা আমারই। আমি এক ফ্রেন্ডের কাছে আমার কিছু শীট, নোট দিয়েছিলাম। কিন্তু তার নাম্বারটা আমার সেলে সেভ করা ছিলা না। তাই আরেক ফ্রেন্ডের কাছ থেকে নাম্বার নিয়েছিলাম।

আর নাম্বার নেওয়াতে গড়বড় করে ফেলেছিলাম। ৬৩ এর জায়গায় ফোনে ৯৩ টিপে ফেলেছিলাম। ফোন না করে তাকে একটা ম্যাসেজ করেছিলাম। পরেরদিন সকালে নাম্বারটা থেকে আমার ফোনে কল আসে। ভুল বুঝতে পেরে আমি তাকে স্যরি বলে রেখে দিয়েছিলাম।

সেই ম্যাসেজের সূত্র ধরে এক বৎসরেরও অধিক সময় পরে নাম্বারটা আমাকে ফোন দেয়। কাহিনী প্রায় ভুলতেই বসেছিলাম। আমি তাকে তার নাম জিজ্ঞেশ করলাম। সে বলল, মিতা। আমি ফোনে নাম্বারটা সামিহার নাম্বার দিয়ে সেভ করে রাখলাম।



এভাবে মেয়েটার সাথে আমার কথা হতে লাগল। বেশির ভাগ ফোন মেয়েটাই দিত। দেখা যেত আমিই ধরতে পারতাম না। তো মেয়েটা ভাবত আমি বিরক্ত বোধ করতাম। এমনটা হলে হয়ত ভালোই হত।

এরমধ্যে আমি গ্রামের বাড়ি যাই। আমি গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি দেখে মেয়েটা আমাকে জিজ্ঞেশ করল, আমাদের গ্রামের বাড়ি কোথায়? আমি মিথ্যে বলেছিলাম। বলেছিলাম, কুমিল্লা। আমিও মেয়েটাকে জিজ্ঞেশ করলাম ওদের বাড়ি কোথায়। সে বলল, নোয়াখালী, বসুরহাট।

নিঃশ্বাস দূরুত্বে থাকা মেয়েটিকে পরে আমার বাড়ি কোথায় ঠিকঠাক বললাম। সে ভাবল আমি মিথ্যে বলছি। পরে কিছু ক্লু দেয়ার পর বিশ্বাস করল। ঐদিনই বিকেলে মেয়েটা আমাকে বলল, ওদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্যে। আমি এমন ভাব নিলাম যে আমি রাজী।

পরে সে বলল, না, বাসায় আসলে প্রবলেম। আমরা বরং অন্য কোন যায়গায় দেখা করি। আমি ওর সুবিধা মত কোন কমন প্লেসের কথা জিজ্ঞেশ করলাম। ও বলল, ওর বাসা থেকে একা বের হওয়া সমস্যা। তাই কমন কোন প্লেসে যাওয়াটা প্রবলেম।

আর ও নাকি বসুরহাটের অনেক জায়গাও ভালোমত চিনে না। আমি বললাম, তাহলে বসুরহাটেই দেখা হয়ে যাক। টাইম ফিক্সড হল পরেরদিন দুপুর ১২টা থেকে ১ টার মধ্যে।

আমি বিষয়টা আমার বন্ধু রোহানকে বললাম। ও না সূচক জবাব দিল।

পরে মেয়েটার বর্ননা দেয়ার পর রাজী হল। ঠিক করলাম ওর বাইক নিয়ে যাব। আগেরদিন রাতে ও ওর বড় ভাইয়াকে বাইক লাগবে বলে জানিয়ে দেয়। ১২টার আগেই বাইক দিতে বলে। ওর ভাইয়া বলেছিল ১০টার মধ্যেই বাইক পাবে।

কিন্তু সেদিন ১০টা গড়িয়ে, ১১টা, ১১টা গড়িয়ে ১২ টা। কিন্তু ঐ ভাইয়ার বাইক নিয়ে আসার দেখা নেই। ফোন দিলেই বলছে এইতো ৫ মিনিটের মধ্যে আসতেছি। সাড়ে ১২টার দিকে উনি বলল, বাইক দেড়টার দিকে পাবে। কিন্তু বন্ধু জরুরী কাজ বলায় উনি বলল আচ্ছা ১০ মিনিটের মধ্যে পাবে।

ঐদিকে মিতা ফোন দিয়ে যেতেই লাগল। যার সাথে ১২টা থেকে ১টার মধ্যে দেখা করার কথা, সেখানে সাড়ে ১২টার দিকেও আমরা রওয়ানা দিতে পারি নি। আমি ফোনে শুধুই মিথ্যে বলে যাচ্ছি। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বলছি, এই তো আসছি। রাস্তায় জ্যাম।

একটা রুটে রাস্তায় গাছ কেটে ফেলে রাখছে। অন্য রুটে আসছি। রং রুটে ঢুকে পড়েছি। এভাবে বলেই যাচ্ছি। আর স্যরিও বলতেছি।

আমি ওপাশ থেকে কথা শুনার পর বুঝলাম, সে আমার সাথে দেখা করার জন্যে উদগ্রিব।

অবশেষে আমরা বাইক পেলাম ১টা ৪০ এর দিকে। যে পথে রওয়ানা দিয়েছিলাম ওখান থেকে বসুরহাট মাত্র ২০ মিনিটের পথ। সাথে বাইক আছে। তাই ১৫ মিনিটের বেশি লাগার কথা না।

বাইকে উঠে যাওয়ার পর আর কোন টেনশান আসল না। মিতাকে স্যরি টরি বলে আর একটু অপেক্ষা করতে বললাম। সে বলল, আসে পাশের লোক গুলা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে না থাকলে ঠিক ছিল। কিন্তু মানুষের এভাবে তাকিয়ে থাকা তার ভালো লাগছে না। আমরা তাড়াতাড়ি আসছি বলে আশ্বস্ত করলাম।


আমরা বসুরহাট পৌঁছেই তাকে ফোন দিলাম। ও বলল, জিরো পয়েন্টে আছে। জিরো পয়েন্টে গিয়েই আমি একটা লাল ড্রেস পড়া মেয়েকে দেখলাম। ফোন দিয়ে দেখলাম। ঐ মেয়েই এই মেয়ে।

তার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। অসম্ভব সুন্দরী না হলেও বেশ সম্ভব সুন্দরী। ভেরি সিম্পল। বাট সো গর্জিয়াস। ও আগে বলি নি।

মেয়েটার কথা বার্তা শুনে মনেই হত না যে সে নোয়াখালীর মেয়ে। ভয়েস টোনে বলত সে নোয়াখালীর বাইরের মেয়ে। ওখানে দাঁড়িয়ে ২ মিনিট কথা বললাম। যার সিংহ ভাগ জুড়ে ছিল এপোলজি মার্কা কথা বার্তা। সে আমাকে বলল, এখানে দাঁড়িয়ে কথা বলা যাবে না।

আসে পাশের মানুষজন কিভাবে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে। আমি বললাম, আমি তো এইখানের কিছুই চিনি না। এই প্রথম আসলাম। আপনার পরিচিত কোন সেইফ জায়গা থাকলে বলেন। আমরা ওখানে যাই।

সে বলল, হাসপাতাল গেইট সংলগ্ন একটা জায়গা আছে। ওখানে গেলে ভালো হয়। আমি বললাম, ওকে, আপনি রিক্সা নিয়ে ওখানে যান। আমরা বাইক নিয়ে পেছনে পেছনে আসতেছি।

হাসপাতাল সংলগ্ন গেইটের পাশের গলি দিয়ে একটু ঐ দিকে গেলাম।

একটা বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে একটা নারকেল গাছের পাশে কথা বলছিলাম। আমার বন্ধুকে বললাম, বাইক নিয়ে সামনে দাঁড়াতে। আমরা ২ কি ৩ মিনিটের মত কথা বললাম। হঠাত দেখলাম একটা ছেলে আমাদের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো। কোমর থেকে একটা রিভলবার বের করল।

আর বলল, এইবার কথা বলেন। আমি তো কিছুই বুঝতে পারলাম না। মিতা ছেলেটাকে বলল, ভাইয়া, আপনার যদি আমাকে কিছু বলার থাকে তাহলে আমাকে বলতে পারেন। উনি আমাদের অতিথি। ওনাকে যেতে দেন।

উনি চলে যাক। কিন্তু ছেলেটা বলল, তোঁর লগে কিয়ের কথা? কথা অইচে হেতের(আমার) লগে। তুঁই বাসাত চলি জ গৈ।

মিতা ছেলেটাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু ছেলেটা কিচ্ছুই শুনল না।

সাথে আরও কিছু ছেলে পেলে এসে জড়ো হল। একেক জন একেক ভাবে থ্রেট দিতে লাগল। মিতাও তাদের বুঝাতে লাগল। পরে ছেলেটা বলল, আইচ্চা, তুঁই চলি জ। আঁই হেতের লগে এক্কানা কথা বলি বিদায় দিতেছি।

পরে ওরা মিতাকে রিক্সায় তুলে দিল। সাথে মিতার ফোন নাম্বারটা চাইল। কিন্তু মিতা রেগে গিয়ে বলল, আমার নাম্বার আপনাকে দিব কেন? ছেলেটা বলল, তোঁর নম্বর জোগার করন ওয়ান টু’র ব্যপার। মিতা বলল, আপনি আমার আম্মুর নাম্বার নেন। ছেলেটা নাম্বার নিল।

মিতা রিক্সায় উঠে আসে পাশের মানুষ জড়ো করার চেষ্টা করল। কিন্তু ছেলেটা রিভলবার বের করে রিক্সাওয়ালাকে হুমকি দেয়। রিক্সাওয়ালা দ্রুত ঘটনা স্থল ত্যাগ করে চলে যায়।

এই দিকে আমার বন্ধু রোহান আমাকে সমানে ফোন দিতে লাগল। আমি ধরছি না।

পরে ফোন ধরলাম। বললাম, দোস্ত, একটা ঝামেলায় পড়ছিরে। তুই একটু হাসপাতাল গেইটের দিকে আয়। ও বাইক নিয়ে আসল। আসার সাথে সাথে ওকে ঘিরে ধরে ওর বাইকের চাবি নিয়ে নিল।

আমার বন্ধু কিছুই বুঝল না। ওর আবার দাঁড়ি আছে। দাঁড়ি দেখেই ওকে বলল, এতে তো জামাইচ্চা( জামায়াতে ইসলামী), এতেরে চাড়ন যাইত ন। চল এতেরে পুলিশের কাছে দি আই।

আমার ফ্রেন্ড ওদের বুঝাতে লাগল।

ফ্রেন্ডের আপন কাকা আবার আমাদের ইউনিয়নের আওয়ামি লীগের সভাপতি। ও ওর কাকাকে ফোন দিতে গেলে ধমক দিয়ে ওকে ফোন কাটতে বলে। ও ফোন রেখে দেয়। ওরা নিজেদেরকে ছাত্রলীগের সভাপতি, আরও কি কি যেন পরিচয় দিতে লাগল। যার হাতে রিভলবার ছিল, ওর নাম তারিম।

বসুরহাট মুজিব কলেজে রাজনীতি করে বলে পরিচয় দিল। পরে জানলাম, ওর বড় ভাইয়ের নাম তুহিন। বসুরহাট উত্তর বাজারের দিকে ইসলামী ব্যাংক যে মার্কেটটাতে আছে, সে মার্কেট ওর বাবার। জামায়েতে ইসলামী বলে এক ছেলেকে গালিগালাজ করতেছে। কিন্তু তার দৈনিক রুটি রুজির সিংহ ভাগ টাকা আসে জামায়াতে ইসলামীর অন্যতম আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংকের দেয়া ভাড়া থেকে।

এতো পুরাই মখা অবস্থা!!!

আরকেকজনের নাম বলল, রাসেল। চিকন করে লম্বা। মুখে আবার ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি। আহ! সে কি ফাঁফড়। তারিম কেমন ছেলে, এই গুলা নিয়ে চরম ফাঁফড় ঝাড়ল।

মেরে ফেলবে, কেটে ফেলবে। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, পকেটে ঢুকায়ে দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিবে। জামাত শিবির ক্যাডার, ওদের এলাকার মেয়েকে তুলে আনতে গিয়েছি বলে আমাদেরকে পুলিশে তুলে দিবে বলে ফাঁফড় ঝাড়ল। বেশি না, দুইটা বিচি (বুলেট) খরচ করবে বলেও ফাঁফড় ঝাড়ল।

এর মধ্যে দেখলাম বাইক নিয়ে আরেকটা ছেলে আসল।

পরে জানলাম ওর নাম আব্দুল্লাহ। ইমরান আব্দুল্লাহ। মুজিব কলেজে পলিটিক্সের সাথে জড়িত। ওর বাইকের পিছনে মিতা ছিল। আব্দুল্লাহ এসে তারিমকে বলল আমাদের ছেড়ে দিতে।

আমরা ওদের অতিথি। কোন ঝামেলা না করে আমাদের ছেড়ে দেওয়ার জন্যে। কিন্তু রাসেল তো নাছোড়বান্দা। আমাদেরকে দেখেই ছাড়বে। আমার বন্ধুর দিকে লক্ষ্য করিয়ে বলল, এতে পুরাই জামাইতছা।

দোনোগা জামাত শিবির। ইগুনরে ছাড়ন যাইতো ন। আব্দুল্লাহ যথেষ্ট বুঝানোর চেষ্টা করল। কিন্তু রাসেলকে বুঝানো বড় দায়। এইদিকে তারিম বলল, ইগুনরে ছাড়ি দিতাম।

কিন্তু মাইয়্যা( মিতা) ইগা কি বেয়াদপি কইচ্ছে তুই ত দেখস ন। হেতি আর লগে চোখ রাঙ্গাই কথা কইছে। আসে পাশের মাইনষেরে জানাইবারলাই চাইছে। মাইয়া ইগা বেয়াদপি ন কইরলে ইগুনরে কত আগে চাড়ি দিতাম।

বুঝলাম, আব্দুল্লাহ ওদের বুঝাতে ব্যর্থ্য হয়েছে।

পরে আব্দুল্লাহ আমাদেরকে একটু আড়ালে নিয়ে বলল, ঘটনা কি সত্য করে বলেন। আমি ঠিকঠাক মত সব বললাম। পরে আব্দুল্লাহ বলল, আপনাদের কাছে কিছু টাকা পয়সা থাকলে দিয়ে দেন। আমি পকেট থেকে হাজার খানেক টাকা বের করে দিলাম। আব্দুল্লাহ ওদেরকে দিতে গেলে ওরা নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

রাসেল তো সমানে ফাঁফড় নিতেই লাগল। পরে না পেরে আব্দুল্লাহ চলে গেল।

আমাদেরকে ওদের একটা বাইকে তুলল। বাইক চালাচ্ছিল তারিম। আমার বন্ধুর বাইক চালাচ্ছিল আরেকটা ছেলে।

এর নামটা জানার চেষ্টা করেও পারি নি। আমাদেরকে একটা গ্রামের ভিতরে নিয়ে যাচ্ছিল। ৭ নং মহিলা মাদ্রাসা বলে একটা জায়গায় নিয়ে বাইক থামাল। ওখানে যত ভাবে সম্ভব হুমকি ধমকি দিল। পরে ঐ ছেলেটা, যার নাম জানা সম্ভব হয় নি, সে আমাদের সার্চ করে আমাদের মোবাইল, মানিব্যাগ নিয়ে নিল।

আমার দুইটা মোবাইল, আমার ফ্রেন্ডের একটা মোবাইল নিয়ে নিল। মোবাইল গুলো নিয়ে ওখান থেকে সিম আর মেমরি কার্ড খুলে আমাদেরকে দিয়ে দিল। আমার মানিব্যাগ খুলে ৫০০ টাকার সব নোট নিয়ে নিল। ৬ টা ছিল সিওর। ৭ টাও থাকতে পারে।

এইগুলোই ছিল আমার বাকি মাস চলার হাত খরচ। ভাগ্যিস ভাড়া আর খাওয়া খরচ মেসে আগেই পরিশোধ করে এসেছিলাম। আর DBBL এর এটিএম কার্ডটা ছিল না! ওরা আমার মানি ব্যাগে খুচরা ৬০ কি ৭০ টাকার মত রেখে আমার মানি ব্যাগ দিয়ে দিল। প্রথমে শুধু আমার ভার্সিটি আর হল আইডি কার্ড দিয়েছিল। আমার বন্ধুর মানি ব্যাগ ঘেঁটে সব রেখে দিল।

ওকে মানি ব্যাগটা পর্যন্ত দেয় নি। ওর মানি ব্যাগ ঘেঁটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের একটা ফটো পেয়ে ওরা টিজ করে বলতে লাগল, পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য এইটা রাখছস না? ব্যাটা জামাইতছার বাচ্চা!

আমাকে ওরা চলে যেতে বলল। ওরা আমার বন্ধু কে রেখে দিবে। আমাকে বলল, না গেলে গুলি করে দিব। আমি যাই নাই।

পরে বলল, দুইজনকেই ছেড়ে দিব। বাইক রেখে চলে যা। মাথায় ঠাডা পড়া অবস্থা হয়ে গেল। আমার কারনে আমার দোকানদার বন্ধুর বাইক ওরা রখে দিবে বলছে, বিষয়টা আমাকে বেশ কষ্ট দেয়। ওদেরকে অনেক কাকুতি মিনতি করতে লাগলাম।

অবশেষে তারিমের হাত পা ধরলাম। আমার বন্ধুও ধরল। কিন্তু রাসেল আর আরেকটা ছেলে যার নাম জানতে পারি নাই, সে আমাদের ধমক দিতে লাগল। আরও একটা ছেলে আমাকে ইশারা দিয়ে বলল, আমি যেন চলে যাই। আমার বন্ধুকেও ওরা ছেড়ে দিবে।

কিন্তু আমিতো এতটা অসৎ না। আমার কারনে যে বন্ধু বিপদে পড়তে যাচ্ছে, তাকে ছেড়ে আমি চলে যেতে পারি না। এত বড় বড় মোটা বই গুলা অন্তত আমাকে এই শিক্ষা দেয় নাই। যখন আমরা দুইজন নাছোড়বান্দা তখন তারিম আমাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে বলল, তুঁই চলি জ গৈ, তোঁর বন্ধুর ডাচ বাংলা ব্যাংকের একাউন্টে কত আছে, এইটা চেক করি হেতেরে ছাড়ি দিমু। কথা গুলো আমার বিশ্বাস হল না।

আমি বললাম, আমি সাথে থাকি। পরে ওরা আল্টিমেটলি পুলিশে ধরিয়ে দিবে বলে হুমকি দিল। একজনকে বলল, পার্টি অফিস থেকে ইয়াবা আর ফেন্সি গুলা নিয়ে আস তো। এখনই ধরাই দিমু। আমি সাহস করে বললাম, আচ্ছা, ঠিক আছে, আমরা পুলিশ স্টেশনে যেতে রাজি।

তারিম রিভলবার বের করল। বলল, বাইকে ওঠ। আমরা বাইকে উঠলাম। ওরা আমাদেরকে বসুরহাট বাস স্ট্যান্ডে নিয়ে গেল। ২ মিনিট পর রাসেল আসল।

আমার বন্ধুর ডাচ বাংলা কার্ডের গোপন নাম্বার নিল। আর রাসেলকে বলল, তুই এইখানে দাঁড়া। তারিম বাইক নিয়ে চলে গেল।

রাসেল এর মধ্যে আমাদেরকে যথেষ্ট পরিমাণে হুমকি দিল। বেশ কয়েকটা বাস দাঁড় করাল যেন আমরা বাসে উঠে চলে যাই।

কিন্তু আমরা যাই না। ওখানে রাসেলকে অনেক কাকুতি মিনতি করলাম। কিন্তু রাসেল তো রাস্কেলের মতই বিহেভ করল। আমার ফ্রেন্ড বলল, ভাইয়া, আমার ভোটার আইডি কার্ডটা তো তারিম ভাইয়ের কাছে। রাসেল বলল, ভোটার আইডি দিয়ে কি করবি? আওয়ামি লীগ তো লাখ লাখ ভোটে জিতি গেছে।

ওবায়দুল কাদের মিয়া মন্ত্রীও হই গেছে। বসুরহাট আমগো কথায় উঠে বসে। যা কইছি তা কর। বাস থামাইতেছি। উঠি চলি যা।

আমাদেরকে কোন কথা বলার সুযোগই দিল না। আমাদের বাইক চালিয়ে ঐ ছেলেটা আসল যার নাম জানা হল না। সে এসে রাসেলকে বলল, বাইক দেয়ার ব্যপারে কি কথা হইছে? রাসেল জানাল বাইক দেয়া হবে না। পরে ছেলেটা বাইক চালিয়ে চলে গেল। এইদিকে রাসেলও তারিমকে বেশ কয়েকবার ফোন দেয়ার নামে বাহানা করল।

পরে একটা রিক্সা ডেকে ও চলে গেল। আমি আর বন্ধু রায়হান খালি হাতে দাঁড়িয়ে থাকলাম বাস স্ট্যান্ডে।

বন্ধু রোহান বলল, চল, পুলিশ স্টেশনে যাই। আমি সম্মতি দিলাম। বসুরহাট বাস স্ট্যান্ড থেকে হাঁটতে হাঁটতে পুলিশ স্টেশনের দিকে গেলাম।

এর মধ্যে বন্ধু জানাল ও একটা ফোন লুকিয়ে রেখেছে। পরিস্থিতি খারাপ বুঝতে পেরে ফোনটা আন্ডারওয়্যারের মধ্যে বন্ধ করে রেখে দিয়েছিল। আর একাজটা সে করেছিল ৭ নং মহিলা মাদ্রাসা যাওয়ার পথে। আমার পেছনে বাইকে বসে। মনের মধ্যে একটা আসা জাগল।

মনে হল এই ফোনই পারে আমাদের সবকিছু ফিরিয়ে দিতে। থানায় গেলাম। একজন পুলিশের সাথে কথা বললাম। উনি অভিযোগ শুনে বললেন, এটাতো গুরুতর অভিযোগ। দিনে দুপুরে সব ছিনতাই করে নিয়ে গেল! কিন্তু উনি খুব আক্ষেপের সাথে বললেন, ওসি সাহেব তো মিনিট দুয়েক আগেই বের হয়ে গেলেন।

ডিউটি অফিসার ও নাই। দুয়েক মিনিটের মাথায় ডিউটি অফিসার এল। উনি আমাদের কথা শুনল। বেশ ভালোভাবেই বকাঝকা করেছে আমাদেরকে। দেশের এই পরিস্থিতে আমরা কেন এই এলাকায় এলাম।

মরার উপর খাড়ার ঘা এর মত অবস্থা। আর খুব বিশ্রিভাবে তুই তোকারি করতে লাগল। নরমালি আমাকে অপরিচিত কেউ তুই তোকারি করে কথা বললে আমার মেজাজ বিগড়ে যায়। কিন্তু সেদিন কেন জানি এগুলাকে কিচ্ছু বলেই মনে হল না। আমার মূল লক্ষ্য ছিল বন্ধুর বাইকের ব্যবস্থা করা।

আমার ফোন টাকা পয়সার যা হওয়ার হবে।

ডিউটি অফিসার কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমাদেরকে বলল অভিযোগ লিখিয়ে নিতে। অভিযোগ লিখিয়ে নিতেও টাকা লাগে। কিন্তু আমাদের কাছে ভাংতি কিছু টাকা ছাড়া আর কিচ্ছুই নাই। আমি বললাম, আমাকে একটু কাগজ আর একটা কলমের ব্যবস্থা করে দিন।

আমি নিজেই অভিযোগটা লিখে দিচ্ছি। ডিউটি অফিসার বলল, ঐ যে পাশে দোকান আছে। ওখান থেকে কাগজ আর কলম নিয়ে লিখে নে। একপাতা কাগজ ২ টাকা আর একটা কলম ৫ টাকা। সামান্য একটা মানুষ যে কিনা বাংলাদেশী পুলিশের পোশাক পড়ে ডিউটি অফিসার সেজে বিশাল পাওয়ারের অধিকারী, সে আমাদের এই বিপদে বেশ ভালোভাবেই রসিকতা করছে।

বাঙ্গালীর পেটে ভাত থাকুক আর না থাকুক, ঝোঁপ বুঝে রসিকতা করতে ভুল করে না। দেখেন না, রাস্তা ঘাটে কেউ পড়ে গেলে হাত বাড়িয়ে তোলার আগে দাঁত কেলায়ে হেসে ফেলে। রাস্তায় কারও জুতা ছিঁড়ে গেলে হো হো করে হেসে ওঠে!

আমি কোম্পানীগঞ্জ থানার পাশের এক দোকানে গিয়ে আমাদের ঘটনা ছোট্ট করে খুলে বলার পর উনি আমাকে একটা কাগজ আর একটা কলম দেন। আমি অভিযোগপত্রটা লিখতে থাকলাম। আর দোকনদারকে ঐ ছেলে গুলার বর্ননা দিলাম।

উনি চিনতে পারল না। তবে খুব সমবেদনা জানাল। অভিযোগপত্র লিখে আমরা থানায় গেলাম। জমা দিলাম। অভিযোগপত্রে লিখলাম আমরা এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে এসছি।

ওর আসার ফাঁকে আমাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিয়ে যায়। ডিউটি অফিসার বললেন, তোদের বন্ধুরে নিয়ে আস। তারপর অভিযোগ নিতেছি।

থানা থেকে বের হয়ে ঐ এলাকার এক ছোট ভাইকে ফোন দিলাম। সে আমার সাবেক রুমমেট।

কিন্তু সে ধরল না। বেশ কয়েকবার ফোন দেয়ার পর সে ধরল। তাকে কিছুটা খুলে বললাম। সে দুই মিনিটের মধ্যে জানাবে বলে ফোন রেখে দেয়। দুই মিনিট পরে সে ফোন দিল না।

সে আর ফোনই দিল না। ভয় পেয়েছে কিনা জানি না। কিন্তু ঐ ছেলে মুজিব কলেজে থাকতে ছাত্রলীগ করত। এখনও করে বৈকি। এর পরে ফোন দিলাম আমার সাথের এক মেসম্যাটকে।

ও বসুরহাট নেই আমি জানি। তবে ওকে ফোন দিয়ে বললাম, থানার আসে পাশের তার কোন পরিচিত ফ্রেন্ড ট্রেন্ড থাকলে জানাতে। ও ওর এক কাকাতো ভাইয়ের নাম্বার দিল। আমি ওর সাথে কথা বললাম। সংক্ষেপে সব খুলে বললাম।

তারিম আর রাসেলের বর্ননা শুনে ও বলল, এই পোলা গুলা!!! ওদের কয়েক বছরের জুনিয়র ছেলে এরা। তার মানে আমারও জুনিয়র ছিল এরা। আসলে রিভলবার ছিল বলেই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এমন পরিস্থিতিতে যে কেউই ঘাবড়ে যেত। পরে ঐ ফ্রেন্ডের কাকাতো ভাই ওর এক পরিচিত বড় ভাইকে বিষয়টা জানল এবং আশ্বস্ত করল আমরা সবকিছু পেয়ে যাব।



এদিকে আমার ফ্রেন্ড থানার অপজিটে থাকা মার্কেটের চেম্বার নিয়ে বসা এক এডভোকেটের সাথে কথা বলতে লাগল। ওনার নাম এডভোকেট কি যেন চৌধুরী ছিল। সম্ভবত একরাম চৌধুরী। উনি আমাদের ঘটনা শুনার পর এলাকার যুবলীগ, ছাত্রলীগ কোন কোন নেতাকে ফোন দিলেন। আর ঘটনা জানতে চাইলেন।

আমাদেরকে আশ্বস্ত করলেন, সব ফেরত পাব। দুপুরে কিছু খাই নি দেখে আমাদেরকে চা বিস্কুট খাওয়ালেন উনি। ওনার উদ্দেশ্য কি ছিল জানি না। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতে এই লোকটাকেও ফেরেস্তা বলে মনে হল। উনি আমি কোন ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছি তা জানতে চেয়েছিলেন।

আমি আমার ফ্রেন্ডের কাকাতো ভাইয়ের নাম বলি। উনি তার সাথে দেখা করতে চান। আমি ওনার চেম্বার থেকে বেরিয়ে আসি। বাইরে এসে ফ্রেন্ডের কাকাতো ভাইকে জানাই। ও বলে আমার ওখানে যাওয়ার দরকার নেই।

এত বড় কাউকে ধরার দরকার নেই। আমি যাদেরকে ফোন দিয়েছি ওনারা আসুক। তাইলেই দেখবে কি হয়।

কিছুক্ষন পর ঐ ভাইয়াটা আসেন। ওনার নাম রুবেল।

আমি ওনাকে মূল কাহিনী খুলে বলি। উনি শুনেই বলেন, তোমাদেরকে তো ট্র্যাপে ফেলা হয়েছে। যত দোষ ঐ মেয়ের। আচ্ছা, আগে চল, বাইক উদ্ধ্বার করি। তারপর ঐ মেয়েকে সাইজ করতেছি।

আমরা বললাম, ভাইয়া, বাইক পাব তো? উনি বললেন, আরে মিয়া দেখ না। আমাদেরকে এক রিক্সায় আর ওঁনারা আরেক রিক্সায় উঠে বললেন হক মার্কেটের(সম্ভবত) দিকে আসতে। আমার বন্ধুর কাকাতো ভাই এর মধ্যে চলে গেল। আর যাওয়ার আগে বলল, নো টেনশন। মনে কর সব পেয়ে গেছ।



আমাদের রিক্সা হক মার্কেট গিয়ে দাঁড়ালো। আমাদেরকে আরেক ভাইয়ের কাছে রেখে রুবেল ভাই কোথায় যেন গেল। চা দোকানে বসে চা আর বান খেলাম। কিছুক্ষন পর রুবেল ভাই আসল। আমাদেরকে ডেকে নিয়ে গেল।

একটা সেলুন দোকানে ঢুকে দেখলাম, তারিম বসে আছে। নাপিত তার গা মালিশ করছে। রুবেল ভাই একটা ছেলেকে দেখিয়ে বলল, এ ছিল? আমরা বললাম না। উনি একটু রেগে গিয়ে বলল, তোমরা বললা না রকি নামের কেউ একজন ছিল। আমি বললাম, রকি না, রাসেল।

লম্বা করে, ফ্রেঞ্চ কাট দাঁড়ি। পরে জানলাম রকি হল রুবেল ভাইয়ের ছোট ভাই। আমাদের বাইক আর মোবাইল দিয়ে দিতে বলল রুবেল ভাই। রকি বলল, বাইক পাবে, মোবাইল পাবে না। রুবেল ভাই বলল, সব পাবে।



এইদিকে এডভোকেট আর তার সহযোগী বাইকে করে সেলুন দোকানের সামনে এল। এদের মধ্যে কি কি যেন কথা হল। রকি এডভোকেটের সাথে রেগে গেল। কারন রাসেলের জায়গায় রকি নামটা এডভোকেটই বলেছিল আমার ফ্রেন্ডকে। আর এখানেই ভুল বোঝাবোঝি হয়ে গিয়েছিল।

ও এর মধ্যে এক লোক সেলুন দোকানে আমাকে জিজ্ঞেশ করল, থানায় যেতে তোমাকে কে বুদ্ধি দিছে? আমি বললাম, আমরাই নিজে নিজে গিয়েছি। কেউই বুদ্ধি দেয় নি। পরে উনি জিজ্ঞেশ করলেন, থানায় গিয়ে কি কারও নাম বলেছ? আমি বললাম, না, কারও নাম বলি নি। আমরা থানায় গিয়েছি শুনে তারিম আমাদের দিকে তেড়ে আসতে চাইল। পরে রুবেল ভাই আমাদেরকে ওখান থেকে বাইরে নিয়ে আসে।



এডভোকেট, রুবেল ভাই, তারিম, এডভোকেটের সহযোগী, আর ঐ লোক যিনি আমাকে থানার ব্যপারে জিজ্ঞেশ করেছিলেন, ওনারা মিলে একটু দূরে গিয়ে যুক্তি করতে লাগলেন। আমাদেরকেও ডাকলেন। কি কি নিছে জিজ্ঞেশ করলেন। আমরা বললাম। বাইকটা নিয়ে আসার জন্যে বললেন এডভোকেট।

একজনকে পাঠালো ওরা। ৫ মিনিট পর বাইকটা নিয়ে একজন এলো। আমাদেরকে বাইকের চাবি বুঝিয়ে দিল। কিন্তু মোবাইল গুলো দেয়ার ব্যপারে টালবাহানা করতে লাগল। একেকটা একেক জনের কাছে বলল।

আর টাকার কথাতো নাই বা বললাম। রুবেল ভাই মোবাইল গুলা তাড়াতাড়ি আনতে বলে আমাদের বাইকের সাথে থানার দিকে চলল। লক্ষ্য অভিযোগটা প্রত্যাহার করানো।

থানায় গেলাম। কিন্তু যার কাছে অভিযোগটা দিলাম সেই ডিউটি অফিসার থানায় নেই।

ডিউটি অফিসারের নাম ছিল সম্ভবত বিল্লাল। রুবেল ভাই ওনার নাম্বার সংগ্রহ করে ওনাকে ফোন দিলেন। উনি আমাদেরকে জিরো পয়েন্টের দিকে আসতে বললেন। জিরো পয়েন্টে গিয়ে শুনি উনি থানায় চলে গেছেন। থানায় গিয়ে ওনার সাথে কথা বললাম।

উনি জানালেন এই অভিযোগ নিয়ে তো আমাকে বেশ কয়েকজনে ফোন দিছে। এইটাতো গুরুত্ব পাইছে। বলে রাখি, এডভোকেটের সাথে প্রথম কথা বলার আগে আমি আমার কাকাকে এই বিষয়টা নিয়ে ফোন করেছিলাম। কাকা আবার বিচার বিভাগে চাকরী করেন। উনি শুনে কি যেন কি কাকে কাকে ফোন করে থানায় কি করে ফেলেছেন কে জানে।

বাড়িতে গিয়ে জেনেছিলাম কাকে কাকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলেন।

রুবেল ভাই বললেন, ওরা সব কিছু বুঝে পাইছে। এখন অভিযোগটা তুলে নেন। ডিউটি অফিসার আমাদেরকে জিজ্ঞেশ করলেন আমরা সব ঠিকঠাক পাইছি কিনা? আমরা বললাম পেয়েছি। উনি বাইকটা দেখতে চাইলেন।

বাইরে এসে দেখলেন। জিজ্ঞেশ করলেন মোবাইল পাইছি কিনা। আমরা বললাম, পাইছি। টাকা ফেরত পেয়েছি কিনা জিজ্ঞেশ করলে আমরা বলেছি পাইছি। পরে অভিযোগ বাতিল করে দেন ডিউটি অফিসার।



আবার হক মার্কেটের দিকে ছুটলাম। ওখানে গিয়ে জানতে পারলাম ওরা আমাদের মোবাইল ফোন গুলা ফেরত দিবে বিনিময়ে আমাদেরকে ৫০০০ টাকা দিতে হবে। আমি বললাম তাইলে মোবাইল গুলা থাক। কিন্তু আমার বন্ধু বলল, না, আমি বিকাশের মাধ্যম্যে ৫০০০টাকা আনাইতেছি। ওদেরকে বলেন মোবাইল গুলা নিয়ে আসতে।

বন্ধু তার পরিচিত এক দোকানীকে ফোন দিল। উনি ইন্সট্যান্ট ৫০০০ টাকা পাঠিয়ে দেন। ঐ টাকা রুবেল ভাইয়ের হাতে দেই। উনি আমাদেরকে নিয়ে উত্তর বসুরহাট বাজার গেলেন। ওখানে ইসলামী ব্যাংকের সামনে এসে একটা চা দোকানে বসতে বললেন।

আর কিছু খেতে বললেন। ইসলামী ব্যাংক ভবনের মার্কেটটাতে ঢুকে গেলেন রুবেল ভাই। কিছুক্ষন পর আমার বন্ধুও ওখানে গেল। ওখান থেকে মিনিট দুয়েক পর আমার বন্ধু এসে বলল, তোর একটা মোবাইল দিছে। আরেকটা নাকি যার কাছে সে ফোন বন্ধ করে রাখছে।

অর্থাৎ আরেকটা ফোন রাসেলের কাছে ছিল। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। আমার দামি টাচ ফোনটাই তারা দিল না। মন খারাপ হয় নি। আমার লক্ষ্য ছিল কবে এই অভিশপ্ত এলাকা থেকে মুক্তি পাব?

বন্ধুর বাইকে উঠলাম।

বাইকের তেল শেষ হয়ে গেল। রুবেল ভাই ২ লিটার তেল ঢুকিয়ে দিল পাশের একটা দোকান থেকে। সাথে কিছু টাকাও দিল। আমি ওনাকে ধন্যবাদ দিতে গেলে উনি বললেন, ধন্যবাদ দেওয়ার দরকার নেই। মনে রাখলেই চলবে।

আমার ফোন নাম্বার তোমার ফ্রেন্ডের কাছে আছে। সময়ে অসময়ে ফোন দিও।

এভাবেই শেষ হল আমাদের জীবনের একটা কালো দিন। শেখ মুজিবকে ১৫ অগাস্ট শাহাদাৎ বরন করেছিলেন বলে বাংলাদেশীদের জন্য এই দিনটাকেও কালো বলে ঘোষনা করা হয়, পালন করা হয়। কিন্তু ওঁনার আদর্শের সৈনিকেরা প্রতিদিন কত শত মানুষের জীবনের প্রতিটা দিনকে কালো করে দিচ্ছে তার হিসেব নেই।

তবুও কেন দলটা টিকে আছে? টিকে আছে কারন রুবেল ভাইদের মত কিছু ভালো মানুষ দলটাতে আছে বলে। ভালো থাকুক মানুষটা। এডভোকেট চৌধুরীকেও ধন্যবাদ।

এমন একটা দিন শেষে ঘরে গিয়ে যখন চোখ দুটো বন্ধ করলাম, দেখলাম সব কিছুর নেপথ্যে একজন মানুষ। আর সে হল, আমি।

I repeat, সে হল, আমি। আমার মত মাথা মোটা টাইপস পাবলিকদের জন্যেই রোহানদের মত ভালো ছেলেদের সমস্যায় পড়ে যেতে হয়। আর আমার মত পাবলিক গুলোর জন্যেই তারিম, রাসেল আরও কিছু অজ্ঞাতদের সৃষ্টি হয়। আমার মত মানুষদের ভুলের কারনেই অযথা কিছু মানুষকে টেনশনে পড়ে যেতে হয়।

এই স্মৃতি ভোলার নয়।

যেন ভুলে না যাই, তাই লিখে রাখলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, ফটোকপি করে এই লিখা গুলো সেসব মানুষদের কাছে পাঠাব, যারা আমার স্মৃতির মনিকোঠায় আজীবন রয়ে যাবে।

প্রিয় বসুরহাট, আমি বারবার তোমার বুকে পদচিহ্ন এঁকে দিতে চাই। আসছি। আবার দেখা হবে।

কথা হবে। সেইদিন হয়ত তোমার আগন্তুক শত্রু ভেবে নয়, বন্ধু ভেবে বুকে টেনে নিও।

বিভাগঃ হুদাই গল্প

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.