জনগণের আস্থা অর্জনের লক্ষ্যে নির্বাচিত সরকার শুরুতেই জনতুষ্টিমূলক দৃশ্যমান কর্মকাণ্ড শুরু করতে চায়। তবে প্রশ্ন উঠেছে_ রাজনৈতিক অস্থিরতায় যেখানে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েই শঙ্কা রয়েছে, সেখানে এসব কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নে সরকার টাকা পাবে কোথায়। বিশ্বব্যাংক মনে করছে, এ ক্ষেত্রে সরকারের ধার করা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।
নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুরো মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ সরকার বিভিন্ন জনতুষ্টিমূলক কর্মকাণ্ড গ্রহণ করতে যাচ্ছে। তেমনি প্রশাসনকে আয়ত্তে রাখতে বাড়াতে যাচ্ছে তাদের সুযোগ-সুবিধা। এরই মধ্যে ৮০ জন যুগ্ম-সচিবকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনকালীন সরকার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাড়াতে পে-কমিশন গঠন করে গেছে। ঘোষণা দিয়ে গেছে সরকারি চার বাণিজ্যিক ব্যাংক ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পৃথক পে-স্কেল বাস্তবায়নের বিষয়টিও। এর বাইরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি রয়েছে সরকারের বিবেচনায়। বিভিন্ন অনুন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্যে সুবিধা দেওয়া, দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করারও পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
নীতিনির্ধারকরা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে দৃশ্যমান উন্নয়ন কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়নে দেওয়া হবে প্রাধান্য। ঢাকার সৌন্দর্যবর্ধনেও বিশেষ উদ্যোগ থাকবে। পদ্মা সেতু নির্মাণ, এলিভেটেড এঙ্প্রেস ওয়ে, মেট্রোরেল প্রকল্প ছাড়াও ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল ফোর লেন প্রকল্পের মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো দ্রুত বাস্তবায়ন করা হবে। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ অবকাঠামো উন্নয়নেও গুরুত্ব দেওয়া হবে। আর পুরো মেয়াদে ক্ষমতায় থাকানিয়ে সংশয় থাকায় প্রথম বছরেই এসব কাজ শুরু করতে চাইছে সরকার। তবে এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত রয়েছে অর্থের প্রশ্নটিও। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চলতি বছরের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন বাজেটে যে অর্থ বরাদ্দ রয়েছে তার বাইরে কোনো কাজ করতে গেলে ঘাটতি বেড়ে যাবে। ওই ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকিং থেকে ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হ্রাস পাবে। আবার সঞ্চয়পত্র বা সরকারি ঋণপত্রের মাধ্যমে টাকা নিলে বেড়ে যাবে সুদ। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে অর্থ নিলে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে। এ ক্ষেত্রে যা করার বাজেটের মধ্যে থেকেই করতে হবে। তবে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বাজেট বাস্তবায়ন নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন উঠছে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আয় নিয়েও। নির্বাচনকে সামনে রেখে যে বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে সে বাজেটকেও উচ্চাভিলাষী বলে সমালোচনা করেছিল বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এরই মধ্যে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে কাজ করছে এনবিআর। নতুন বাস্তবতায় আয়ের লক্ষ্য যদি কমে যায় তবে ব্যয় বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
চলতি অর্থবছরে এক লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে এনবিআর। গত নভেম্বর পর্যন্ত আদায় হয়েছে ৪১ হাজার ৭৬৪ কোটি টাকা। এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন একাধিকবার আশঙ্কা করে বলেছেন, এবার তাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় হবে না। নতুন করে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণের পর আবুল মাল আবদুল মুহিত নিজেও রাজনৈতিক অস্থিরতায় চলতি অর্থবছরে কর আদায় কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন। এনবিআরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে তিনি বলেন, গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা কম কর আদায় হয়েছে। কর আদায়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, আমি আগেই বলেছিলাম, এটি বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিহীন একটি পরাবাস্তব বাজেট। সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় এখন এ বাজেটে পুরোপুরি বাস্তবতা বিবর্জিত বলা যায়। রাজস্ব আয় পুরোপুরি হবে না। আয় না হলে ব্যয় করা যাবে না। সরকারের উচিত দ্রুত বাজেট সংশোধন করা। এ ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকার কী ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাচ্ছে সেটি এখনো পরিষ্কার নয়। তবে যাই করুক না কেন আয় বুঝেই ব্যয় করতে হবে। কারণ রাজস্ব আয় এমনিতেই ঝুঁকিতে রয়েছে। এখন অতিরিক্ত ব্যয় করতে গেলে সরকারকে হয় উন্নয়ন বাজেট কাটছাঁট করে টাকা নিতে হবে, নয়তো ধার করতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।