ঈদে সারা দেশের মার্কেট, বিপণিবিতান ও দোকানপাটে বেচাকেনা হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার। রাজধানীর বৃহত্তম শপিং মল থেকে শুরু করে জেলা-উপজেলার দোকানপাটও এসেছে এ হিসাবের মধ্যে। আর টাকার অঙ্কে বেচাকেনার এ হিসাবটি দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি।
গত বছর রমজানের ঈদে প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেচাকেনা হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা ছিল, এবার ঈদে বেচাকেনা আরও এক-তৃতীয়াংশ বাড়বে। তবে বৃষ্টি ও হরতালের কারণে বেচাকেনা কিছুটা কম হয়েছে বলে জানিয়েছেন সমিতির নেতারা।
সমিতির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আল হাই রেজাউল ইসলাম সেন্টু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এবার ঈদে যে পরিমাণ বিক্রি হয়েছে, এর চেয়ে আরও প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা বেশি বিক্রির প্রত্যাশা করেছিলেন তারা। তবে রমজানের শুরুতে হরতাল ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে প্রত্যাশা পূরণ হয়নি বলে জানান তিনি।
দোকান মালিক সমিতির হিসাবে সারা দেশে তাদের প্রায় ২০ লাখ দোকান রয়েছে। আর ওই সব দোকানে রমজানের শুরু থেকে ঈদের আগের দিন চাঁদরাত পর্যন্ত তারা যে বেচাকেনার আনুমানিক হিসাব পেয়েছে, তাতে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকার বেচাবিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোর বৃহত্তম শপিং মল, ডিপার্টমেন্টাল স্টোরসহ বিভিন্ন দোকানে আরও প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বিক্রি হয়েছে বলে জানিয়েছে দোকান মালিক সমিতি।
এদিকে ঈদের আগে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোড, গাউছিয়া মার্কেট, বসুন্ধরা সিটি শপিং মল, বেইলি রোড, মৌচাক মার্কেটের বিভিন্ন দোকান ও ফ্যাশন হাউস ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়। তবে এতেও ব্যবসায়ীরা সন্তোষ প্রকাশ করেননি। এলিফ্যান্ট রোডের এক জুতার দোকানি বলেন, রমজানের শেষ সপ্তাহে ভিড় থাকলেও শুরুর দিকে তেমন বিক্রি হয়নি। ইস্টার্ন প্লাজা, রাপা প্লাজা, জেনেটিক প্লাজা, মেট্রো শপিং মল, অরচার্ড পয়েন্ট, হ্যাপি অর্কেডসহ একাধিক শপিং মলের বিক্রেতারা জানান, বিক্রি আশানুরূপ হয়নি। দোকানিরা জানান, রোজার শুরুতে হরতালে কাঙ্ক্ষিত ক্রেতা আসেননি। আর রোজার মাঝামাঝি সময়ে ছিল বৃষ্টির দাপট। তবে শেষের দিকে ক্রেতাদের কেনাকাটায় তারা পুষিয়ে নিয়েছেন বলে জানান। ঈদের কেনাকাটার এই হিসাবে ফুটপাতে বিক্রির হিসাব আসেনি। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের জেলা-উপজেলায় ঈদ সামনে রেখে নানা ধরনের পসরা সাজিয়ে নিয়ে রাস্তার পাশে ফুটপাতে বসেন এক ধরনের ব্যবসায়ী। তুলনামূলক সস্তায় পাওয়া যায় বলে নিম্নবিত্তের অধিকাংশ মানুষ কেনাকাটা করতে স্বস্তি বোধ করেন এসব ফুটপাতে। পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, শিশুদের পোশাক থেকে শুরু করে জুতা-মোজা এমনকি ঘর-গৃহস্থালির নানা পণ্য মেলে ফুটপাতের দোকানে। ফলে ঈদের বাজারে ফুটপাতের বাণিজ্যও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে বলে মনে করছেন দোকান মালিক সমিতির নেতারা।
রাজধানী ঢাকার ফুটপাতের দোকানগুলো গড়ে উঠেছে মূলত মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম মসজিদ, বঙ্গবন্ধু ও মওলানা ভাসানী স্টেডিয়াম, গুলিস্তান, পল্টন, ফার্মগেট, ঢাকা কলেজ, মিরপুর গোলচত্বর ও নিউমার্কেট-এলিফ্যান্ট রোড ধরে। অসংখ্য দোকানি এসব ফুটপাতে বসে সারা বছর ধরেই পণ্য বিক্রি করে থাকেন। তবে ঈদের আগে এবার তাদের ভিড়ে দেখা গেছে নতুন দোকানিও, যারা শুধু ঈদভিত্তিক পণ্য নিয়ে বসেছেন। এসবের মধ্যে পাঞ্জাবি, শাড়ি, লুঙ্গি, শিশুদের পোশাক ছাড়াও ছিল আতর, সুগন্ধি, সাবান, টুপি এমনকি বিভিন্ন পত্রিকার ঈদসংখ্যা। মতিঝিলে ফুটপাতে প্রতিটি পাঞ্জাবি ২০০ টাকা করে দাম হেঁকে বিক্রি করতে দেখা গেছে ঈদের আগের দিন। একইভাবে দাম হেঁকে বিক্রি হয়েছে জামা-জুতা ও শিশুদের পোশাক। বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটের পাশের এক ফুটপাতের দোকানি জানান, হরতাল-আতঙ্ক, বৃষ্টির বাধা থাকলেও ঈদকে কেন্দ্র করে তাদের বেচাবিক্রি ছিল সন্তোষজনক।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।