রোববার বিকালে গণভবনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।
গত ১৫ থেকে ১৭ জানুয়ারি সংরক্ষিত আসনের মহিলা প্রার্থী মনোনয়নে ২৫ হাজার টাকায় আবেদন ফরম বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। এতে যে ৮২২ জন আবেদনপত্র কিনেছেন, তাদের রোববার সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয় গণভবনে।
বিকাল ৪টা ৭ মিনিটে গণভনের দক্ষিণ দিকের লনে অনুষ্ঠানস্থলে এসে ভিড় দেখেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতার শরণ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বলে ওঠেন, ‘ঠাঁই নাই ঠাঁই নাই ছোট সে তরী/ আমারই সোনার ধানে গিয়াছে ভরি’।
এরপর সহাস্যে বলেন, “এটা আবৃতি করে অনুষ্ঠান শুরু করা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ আমাদের ভাগে ৩৬টি সিট। আবেদন পেয়েছি ৮২২টি। আমি খুব আনন্দিত। এত উৎসাহ উদ্দীপনা… এটাই বড় কথা।
“নারী জাগরণ বলতে যা বোঝায় এখানে তাই ঘটে গেছে। গণভবনের মাঠ সত্যিই ধন্য হয়ে গেছে। সবাইকে খুশি করতে পারব না। এই যে নারী জাগরণ এতে আমি আনন্দিত। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন তিনি প্রথম দফায় সরকার গঠন করেছিলেন, তখন দায়িত্বশীল পদে নারীর অবস্থান ছিল না বললেই চলে।
“প্রথম ডিসি, এসপি, সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর, সহকারী জজ, পরারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অ্যাম্বাসেডর, ওসি, ইউএনও- প্রত্যেকাটা জায়গায় যেন মহিলারা পদ করে নিতে পারে- তা আমরা করে দিয়েছিলাম। মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করে দিলাম। ”
গত সংসদে দেশের প্রথম নারী স্পিকারের দায়িত্ব নেয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “একে একে সব জায়গায় যেন আমাদের বোনদের স্থান থাকে- সেই ব্যবস্থা করে দিয়েছি।
“বাংলাদেশ ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে- স্পিকার, বিরোধী দলের নেতা, সংসদ উপনেতা সবাই মহিলা। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তদের জন্য ভাতার ব্যবস্থা করেছি।
”
যে নারীরা বাধা অতিক্রম করে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে গত ৫ জানুয়ারি ভোট দিয়েছেন তাদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
“গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। এই প্রথমবারের মতো একটি নির্বাচিত সরকার আরেকটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে। ভবিষ্যতেও এটা অব্যাহত রাখব। ”
সংরক্ষিত আসনে মহিলা সাংসদ নির্বাচনে মাত্র আওয়ামী লীগ ৩৬ জনকে বেছে নিতে হবে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতি একদিনে শেষ হয়ে যায় না।
সবাইকে যার যার এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হবে।
“নারীর ক্ষমতায়ন শুধু মুখে বললে হবে না, এটা অর্জন করে নিতে হবে। ”
আলাদাভাবে না ডেকে সবাইকে একসঙ্গে ডাকা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাধারণত একজন একজন করে ইন্টারভিউ নেয়ার নিয়ম। কিন্তু প্রার্থী ৮২২ জন।
“এক মিনিট করে সাক্ষাৎকার নিলেও...তাই গার্ডেন পার্টি দিলাম।
”
পরে প্রধানমন্ত্রী আলাদা আলাদভাবে জেলার নাম ঘোষণা করলে প্রার্থীরা উঠে দাঁড়ান।
নিজের জেলা গোপালগঞ্জের নাম উচ্চরণ করেই হাসতে হাসতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “গোপালীরা হয় কপালী, বাকিরা হয় গোলাপী। ”
পরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জেলা বগুড়ার নাম এলে শেখ হাসিনা বলেন, “বাহ! অনেকেই তো এসেছেন। ”
সব শেষে শেখ হাসিনা বলেন, “সবাইকে নমিনেশন দিতে পারব না। তবে শীতের পিঠা খাওয়াতে পারব।
”
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, সবাই যোগ্য ও অভিজ্ঞ। সবাই পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ার যোগ্যতা রাখেন। তবে প্রার্থী অনেক, তাই সবাই সুযোগ পাবেন না।
“হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। উপজেলা নির্বাচন সামনে আছে।
এছাড়া পৌরসভা, সিটি কর্পোরেশনে আপনারা সুযোগ পাবেন। ”
তিনি আশ্বাস দেন, আবেগের বশবর্তী না হয়ে বা ব্যক্তিগত পছন্দকে গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতেই প্রার্থী নির্বাচন করা হবে।
“যাদের মনোনয়ন দেয়া হবে তারা সকলেই নির্বাচনে জয়লাভ করবেন। ”
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “নেত্রী সমস্ত প্রগতিশীল চিন্তায় খুবই অগ্রসর। ... বাড়িতেও তো বউ আছে, কিছু বলে যাই।
সিট তো ৫০ করেছেন, আরো কিছু বাড়ান। ”
দলের নেতাদের মধ্যে সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ওবায়দুল কাদের, কাজী জাফরউল্লাহ, গওহর বিজভী, এইচ টি ইমাম, দীপু মনি, নূহ-উল আলম লেলিন, আব্দুস সোবহান গোলাম অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।