আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জাগরণের ঢেউ ছড়ালো উত্তরে

শুক্রবার ঢাকা থেকে শুরু হওয়া এই রোডমার্চের উত্তরাঞ্চলের পথে পথে পথসভা-জনসভার পর রোববার ঠাকুরগাঁওয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শেষ হয় জাগরণমঞ্চের উত্তরযাত্রা।

হাজার হাজার মানুষের ঢলে জাগরণমঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার ক্ষমতাসীন দলের উদ্দেশে

বলেন, “যারা সারাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে, সেই মৌলবাদী জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি অবিলম্বে নিষিদ্ধ করতে হবে।

“১৬ কোটি মানুষ জামায়াতের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে। সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি শুধু রাজনীতিবিদরা। সরকারে যারা রয়েছেন, তাদেরকে বলছি জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত দেশ গঠনে ভূমিকা রাখুন।

৫ জানুয়ারির ভোটের পর বিভিন্ন স্থানে আক্রান্ত হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়িয়ে সাহস যোগাতে যশোরের মালোপাড়ার পর ঠাকুরগাঁও রোডমার্চ কর্মসূচি শুরু করে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবির আন্দোলনকারীরা।

ঠাকুরগাঁওয়ে রোডমার্চের শেষ সমাবেশে হাজারো মানুষ হাত তুলে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করেন।

সমাবেশে জাগরণের অন্যতম সংগঠন লাকি আক্তার বলেন, “একাত্তরে আমরা বীরঙ্গনা নারীর আর্তনাদ শুনেছি। এখন হিন্দু মা-বোনদের আর্তনাদ শুনছি। তারা বলছে আমাদেরকে বাঁচতে দাও।

“জামায়াত শিবির মুক্ত বাংলাদেশের সূর্য একদিন উঠবেই,” দৃঢ় কণ্ঠে বলেন স্লোগানকন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া এই শিক্ষার্থী।

রোববার দুপুরে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে পথসভার পর ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গড়েয়া ইউনিয়নে যাওয়ার পথে মোটর সাইকেল ও পিকআপভ্যানে করে রোডমার্চে যোগ দেয় স্থানীয় হাজারো মানুষ।

এছাড়াও রাস্তার মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন জায়গায় শত শত মানুষ গণজাগরণমঞ্চের এগিয়ে চলা রোডমার্চের সঙ্গে কণ্ঠ মেলায়।

গড়েয়া আশ্রমের পাশে বটতলা মাঠে এই সমাবেশে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান বলেন, “১৯৪৭ এর পর দেশে যতগুলো সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয়েছে, সবগুলোতেই জামায়াত জড়িত। অথচ এখনো তাদের অনেকে রাজনৈতিক দল হিসাবে ভাবেন।

“এরা মানুষ হত্যা করে, গাড়িতে আগুন দেয়। মানুষের বসত বাড়ি পুড়িয়ে দেয়, রান্না করা খাবারও তছনছ করে। স্কুলের বই থেকে শুরু করে কোরআন-গীতা-বাইবেল কোনোকিছুই এদের হাত থেকে রক্ষা পায় না। ”

জামায়াত নিষিদ্ধের এই দাবিতে রাজনীতিবিদদেরও শামিল হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ইমরান বলেন, “আমরা আর অপেক্ষা করতে চাই না। ১১ মাস আমরা রাস্তায় আন্দোলন করছি।

“হয় এদেরকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে থাকবেন, নয়তো মানুষ হত্যা-মন্দিরে আগুনসহ এদের সব অপকর্মের দায় নিতে হবে,” সরকারের উদ্দেশে বলেন তিনি।

শাহবাগের প্রজন্ম চত্বর থেকে শুরু হওয়া ওই রোডমার্চ গাজীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, বগুড়া, গাইবান্ধা, রংপুর, নীলফামারী, দিনাজপুর ঘুরে ঠাকুরগাঁওয়ে এসে শেষ হয়। এ সব জেলার বিভিন্ন স্থানে ছয়টি জনসভা ও ১৫টি পথসভা এবং আক্রান্ত তিনটি এলাকা পরিদর্শন করে।

হামলার মুখে একটি পথসভা বাতিল করতে হলেও অনির্ধারিত একটিতে অংশ নিতে হয় জাগরণের মুখপাত্র ইমরানকে।

প্রথম দিন সন্ধ্যায় বগুড়া শহরে ঢোকার আগে রোডমার্চ তিন দফা বোমা হামলার মুখে পড়ে।

পরে শনিবার দিনাজপুরে ঢোকার পথে সন্ধ্যায় হয় আরেক দফা হামলা।

দুই দিন সন্ধ্যায় হামলার পর গাড়িবহরকে ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে জাগরণকর্মীদের ঢাকায় ফেরা একদিন পেছালেও তাতে ছন্দপতন হয়নি উত্সাহে। এমনকি একের পর এক বিভিন্ন পথসভা ও জনসভায় অংশ নিতে ছুটে চলা জাগরণকর্মীদের বিভিন্ন সময়ে হার মানিয়েছে ক্ষুধাকেও।

শেষদিনে দিনাজপুরের কর্ণাই ও ঠাকুরগাঁওয়ের গড়েয়াতে আক্রান্ত এলাকায় মানুষ জাগরণকর্মীদের পাশে আপ্লুত হয়ে পড়েন।

প্রথম দিন সিরাজগঞ্জে দুপুরের খাবার খাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায়।

যাতে নষ্ট হয়ে যায় দুপুরের খাবার। পথজুড়ে পথসভা, জনসভায় অপেক্ষমান মানুষের কাছে পৌঁছানোর তাড়ায় উপোস জাগরণকর্মীরা পথ চলতে শুরু করে।

তৃতীয় দিন সকালে নাস্তা করে বের হওয়া জাগরণকর্মীরা দুপুর পর‌্যন্ত একের পর এক এলাকায় যায়। সর্বশেষ বিকালে গড়েয়া থেকে ফেরার পথে ঘোষণা দেয়া হয়, খাবার প্রস্তুত।

জনসভায় মানুষ, জাগরণকর্মীরা জনসভায় যোগ দেয়াকে প্রাধান্য দেয়।

সমাবেশ শেষে সন্ধ্যার পর খাবার খেতে যায় তারা।

সমাবেশে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি ভুলিয়ে দেয় ক্ষুধা-ক্লান্তি। জাগরণের নেত্রী লাকি মঞ্চে উঠে বলেন, “আপনাদের উপস্থিতি দেখে আমি অভিভূত। ”

সমাপনী ওই সমাবেশের পর মঞ্চের অন্যতম সংগঠন মাহমুদুল হক মুন্সী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সোমবার ঢাকায় ফেরার পর আক্রান্ত এলাকার ওপর একটি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবেন তারা।




সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।