ছাত্রসমাজকে তুলনা করা হয়ে থাকে জাতির বিবেকের সাথে, তাইতো যুগে যুগে যেকোন জাতির সমাজিক অর্থনৈতিক সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অগ্রগতিতে ছাত্র সমাজের ভূমিকা পরিলক্ষিত হয়। যার ব্যতিক্রম ঘটেনি আমাদের মাতৃভূমির ক্ষেত্রেও, যদিও আজ আমরা ছন্দহারা। ছাত্ররাজনীতি আজ ভদ্র মানুষের আলোচনা থেকে নির্বাসিত প্রায়। অথচ রাজনীতিই সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে। আমাদের ছাত্রসমাজেই ভূমিকা রেখেছিল ৪৮ এর রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ, ৫২ এর ভাষা আন্দোলন, ৬২’র শরীফ কমিশনের বিরোদ্ধে আন্দোলন, ৬৯ এর নুর খান কমিশনের বিরোদ্ধে আন্দোলন ৬৯ এর গনঅভ্যুথান, এমনকি তারা ৭১ এ উপহার দিয়েছিল একটি স্বাধীন পতাকা ছাত্ররাই ভূমিকা রেখেছিল স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে, যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা, ছাত্রসমাজের ঐতিহাসিক ১১ দফা, এমনকি ৬ দফার মত দাবিগুলো সর্বপ্রথম এসেছিল ছাত্রদের মাঝ থেকেই।
পৃথিবীর বুকে নজীর কেড়ে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে এসেছিল সকল অপশাসন বিরোধী আন্দোলন তথা স্বাধীনতা এভাবে ছাত্রসমাজের দ্বারাই সম্ভবছিল একটি সমৃদ্ধ ভূখন্ড হিসেবে বাংলাদেশকে পৃথিবীর মানচিত্রে স্থান করে দেওয়া। দুভার্গ্যজনকভাবে এ রাজনীতি আজ মুমূর্ষুপ্রায়। ছাত্ররা আজকে হারিয়ে ফেলেছে তাদের রাজনীতির গতিধারা। তারা আজকে অসহায় শাসকের পদতলে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে আজকে নেতৃত্বহীনতা বিরাজ করছে।
আজকে তারা নীরব যখন তাদের সাংবিদানিক অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে, অনেকাংশে তারা জানেই না। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পরিনিত হচ্ছে এক একটি বাণিজ্যালয়ে। আজকে শিক্ষানীতিতে (২০১০) ছাত্রদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। শিক্ষনীতির উচ্চশিক্ষা অধ্যায়ে বলা হয়েছে “....সরকারি অনুদান ছাড়াও উচ্চশিক্ষার প্রতিষ্ঠান গুলোকে ব্যয় নির্বাহের জন্য শিক্ষার্থীদের বেতন ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যক্তিগত অনুদান সংগ্রহের চেষ্টা চলাতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমানে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে ভর্তি ফি ও বেতন খুবই সামন্য, অভিবাবকের আর্থিক স্বচ্ছলতার প্রত্যয়ন পত্রের ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বেতন নির্ধারনের চেষ্টা করা হবে”।
(শিক্ষানীতি ২০১০ অধ্যায়-৮, পৃষ্ঠা-২৪, কৌশল-১৪)। কিন্তু আমাদের সংবিধানের ১৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, “রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গনমুখী ও সার্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্থর পর্যন্ত সকল ছাত্র-ছাত্রীদেরকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষা দানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করিবে”। অথচ এ বছরেই (২০১০-২০১১) শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে বিভাগ ভেদে ৮-১৫ হাজার টাকা, নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে ২১ হাজার টাকা, জগন্নাথে ১৪-১৬ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর অবস্থা আরো নাজুক। পুরো শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারী করণের দিকে।
আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার ৯৫% এখনো বেসরকারী খাতে। যার ফলে শিক্ষার মান নিয়ে দিন দিন প্রশ্ন জোরালো হচ্ছে। কিন্তু জাতি বড় দুভার্গা ছাত্র সমাজ এক্ষেত্রে কিছুই জানে না। ছাত্রসমাজের ঐতিহাসিক ১১ দফা রচিত হয়েছেল এসবের বিরুদ্ধেই। কিন্তু কেন আজ সাংবিধানিক অধিকার উপেক্ষিত? এসবের জবাব একটায় ছাত্রসমাজ আজ অভিবাবক হীন।
ছাত্ররাজনীতির নামে এক শ্রেনীর কুচক্রী মহল ব্যবহার করতেছে ছাত্রদেরকে। আজ ছাত্ররাজনীতি সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে দলীয় সংকীর্ণতায়। আজ ছাত্ররা মগ্ন টেন্ডারবাজিতে, পদ নিয়ে মারা-মারিতে কিংবা হলে-দখলদারিত্বে। তাইতো আজ শিক্ষা কমিশন সুপারিশ করছে“ শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি ও বজায় রাখার স্বার্থে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহকে দলভিত্তিত রাজনীতির উর্ধ্বে রাখা জরুরী। এই লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন ও কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।
(অধ্যায়- ২৮, পৃষ্ঠা- ৬৯)। যা খুবই দুঃখজনক। ছাত্রদেরকে বুঝতে হবে ছাত্ররাজনীতির দূর্বলতাকে সুযোগ করে আজ একটি কুচক্রীমহল ছাত্ররাজনীতিকে ধ্বংসের পায়তারা করছে। ষড়যন্ত্র হচ্ছে দেশকে নেতৃত্বহীন করার। যার সহায়ত হবে পুঁজিবাদের প্রসারে, জাতিকে অন্ধকারে নিমিজ্জিত করে গোলামে পরিনিত করতে, তাই আজ সচেতন ছাত্র সমাজের একটিাই দাবি, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোতে ছাত্র সংসদকে কার্যকর করার মাধ্যমে ছাত্ররাজনীতিকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে সঠিক ধারায়।
দল ও মতাদর্শের চর্চা থাকতে পারে, কিন্তু ছাত্রদের মাঝে ভেদাভেদ ও সংঘর্ষ কাম্য হতে পারে না। এখন আবার সময় হয়েছে ছাত্রজাগারণের, ছাত্রদের ঐক্যতার। যা ছাত্রদেরকেই বুঝতে হবে।
মোঃ তরিক উল্লাহ
আইন বিভাগ(৩য় বর্ষ)
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।