নওগাঁর আত্রাইয়ে দরিদ্রদের আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্মিত 'গান্ধী আশ্রম' জরাজীর্ন অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
মহাত্মা গান্ধীর ব্যবহূত বেশ কিছু সামগ্রীও সংরক্ষনের অভাবে নষ্ট হচ্ছে। তাই মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়ীত ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানটি রক্ষনাবেক্ষনের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ১৯২২সালে আত্রাইয়ে বন্যার ফলে সেখানে দুর্ভিক্ষের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়। ওই বছর ব্রিটিশবিরোধী নেতা ডা. প্রফুল্ল চন্দ্র রায় (পিসি রায়), মহাত্মা গান্ধী ও নেতাজি সুবাষ চন্দ্র বসুর সহযোগিতায় নয় একর জমির ওপর এলাকার দরিদ্রদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গীয় রিলিফ কমিটি (গান্ধী আশ্রম)।
প্রতিষ্ঠার পর এখান থেকে এলাকার সাধারন মানুষের মাঝে চিকিত্সা সেবা, আর্থিক সাহায্য, শিক্ষা, গরু, পালন, মত্স্য পালন, খাঁটি ঘি তৈরিসহ নানাভাবে সহযোগিতা করা হতো। প্রতিষ্ঠানটি দেখাশুনা করতেন ডা. পিসি রায় নিজেই। ১৯৩৬সালে মহাত্মা গান্ধী এ প্রতিষ্ঠানে আসেন এবং এলাকাবাসীর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য খদ্দেরের কাপড় তৈরির কারখানা স্থাপন করেন। ফলে পরবর্তী সময়ে খাদি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এটি এলাকায় সমধিক পরিচিতি লাভ করে। পাকভারত ভাগ হওয়ার পরও প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।
কিন্তু ১৯৭১সালের মুক্তিযুদ্ধে পাকবাহিনীর হামলা, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের কারনে তা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া সরকারী নজরদারী না থাকায় দখল করে নেয়া হয় বেশকিছু সম্পত্তি।
স্থানীয় এলাকাবাসী ময়নুল ইসলাম ও সাদেকুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু সম্পত্তি স্থানীয়রা দখল করে নিয়েছে। সে দখলকৃত সম্পত্তি থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ ও প্রাচীর দিয়ে ঘেরাও করার ও সরকারী নজরের পাশাপাশি মহাত্না গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠানের পুরোনো ঐতিহ্য পুনঃজীবিত করার দাবি জানান। রেশম চাষি খোরশেদ আলম জানান, এখানে ২০১১সালে রেশম চাষ শুরু হয়েছে।
সরকারী নজর বৃদ্ধি পেলে রেশম চাষ সফল হবে। এতে অনেকের কর্মসংস্থান হবে।
প্রতিষ্ঠানের সাধারন সম্পাদক ও চিকিৎসক নিরাঞ্জন দাস জানান, মহাত্না গান্ধী ও পিসি রায়ের ব্যবহূত বেশকিছু আসবাবপত্র ও কুটির শিল্পের ব্যবহূত ঐতিহাসিক সামগ্রী সংরক্ষনের ব্যবস্থা না থাকায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। স্মৃতিবিজড়িত সামগ্রীগুলো সংরক্ষণের দাবি জানান তিনি। এছাড়া আশির দশকে পল্লীবিদ্যুুৎ তিন একর জমি ভুয়া দলিলের মাধ্যমে অ্যাকোয়ার করে নেয়।
ঘটনাটি জানতে পেরে আদালতে মামলা করা হয়েছে। বর্তমানে মামলাটি চলমান আছে। গান্ধী আশ্রমের সভাপতি আমিনুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানটি একেবারে অবহেলিত অবস্থায় পড়েছিল। সীমানা প্রাচীর না থাকার কারনে স্থানীয়রা গোচারন ভুমিতে পরিনত করছে। সাবেক সাংসদ ও প্রতিষ্ঠানের উপদষ্টো ওহিদুর রহমান জানান, সরকারী সহযোগীতায় নতুন প্রকল্প গ্রহন করে রেশম শিল্প চালু করা হয়েছে।
এছাড়া কয়েকজন ভারতীয় কর্মকর্তা এটি পরিদর্শন করে গেছেন। ভারতীয় অর্থে ঘর নির্মান শুরু করা হয়েছে। এরই মধ্যে জেলা পরিষদ থেকে কিছু অর্থ পাওয়া গেছে। প্রতিষ্ঠানটি চালু হলে কুটির শিল্প আবার চালু করার আশা ব্যক্ত করেন তিনি। আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হেমন্ত হেনরী কুবি জানান, এরই মধ্যে ভারত সরকারের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি করা হচ্ছে।
আগামীতেও সরকারের সকল সহযোগিতা অব্যহত থাকবে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম জানান, মহাত্মা গান্ধী, নেতাজি সুবাষ চন্দ্র বসু ও পিসি রায়ের প্রতিষ্ঠানের গৌরব ধরে রাখা তাদের কর্তব্য। আশা করছেন, এটি চালু করে আবার কুটির শিল্পের মাধ্যমে এলাকার সাধারন মানুষ কর্মসংস্থান ফিরে পাবে। এছাড়াও পল্লীবিদ্যুৎ যে সম্পত্তি দখল করেছে তাও উদ্ধারের চষ্টো চলছে। মহাত্মা গান্ধির এ প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে এখানে এলাকাবাসীর আত্মকর্মসংস্থানের জন্য বন্ধ কারাখানা চালু ও ঐতিহ্য ফিরিয়ে দেয়া, মহাত্মা গান্ধী ও পিসি রায়ের ব্যবহূত সামগ্রী সংরক্ষনের দাবি জানান স্থানীয়রা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।