ছোট যমুনা নদীর তীর ঘেঁষে অবস্থিত নওগাঁ জেলা শহর। ১৮৭৭ সালে নওগাঁ তৎকালীন মহকুমা গঠিত হওয়ার পর নওগাঁ শহরের উৎপত্তি। স্বাধীনতার আগে এ জেলায় নারী শিক্ষা সম্প্রসারণে কোনো সরকারি বা বেসরকারি কলেজ ছিল না। এ জেলায় মেয়েদের উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের জুলাই মাসে একটি স্বতন্ত্র মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়। কলেজের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ও প্রয়াত রাজনীতিবিদ আবদুল জলিল, তৎকালীন কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য মরহুম গিয়াস উদ্দিন সরদারসহ বেশ কয়েকজন বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তি।
তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে কলেজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত হতে থাকে এবং নওগাঁ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে 'নওগাঁ মহিলা কলেজ'-এর পাঠ কার্যক্রম শুরু হয়। পরে অফিসার্স ক্লাবে (বর্তমানে কলেজের ডরমেটরি ভবন) কলেজের কার্যক্রম চালু করা হয়। প্রথম অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মো. মহসিন আলী। পরে রাজশাহী শাহ মখদুম কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মো. তোফাজ্জল হোসেন ১৯৮২ সালের ২৫ মার্চ অধ্যক্ষ হিসেবে নওগাঁ মহিলা কলেজের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগ দিয়ে এর যাত্রা শুরু।
কলেজে ১৯৮৪ সালে স্নাতক বিভাগ খোলা হয়। ১৯৮৫ সালে কলেজটি জাতীয়করণ করা হয়। কলেজটির প্রয়াত অধ্যক্ষ মো. তোফাজ্জল হোসেন, গভর্নিং বডি ও নওগাঁর তৎকালীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মো. আলমগীর কবীর ও সামাজিক ব্যক্তিবর্গের সক্রিয় প্রচেষ্টায় কলেজটি বর্তমান ভবনে স্থানান্তর করা হয়। যা নওগাঁ শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত। গাজা সোসাইটির পক্ষে তৎকালীন পরিচালক প্রয়াত বসির উদ্দিন খান বাহাদুর অত্র কলেজ ক্যাম্পাসের জায়গাটি দান করেন।
তবে আগে জায়গাটি বিএমসি কলেজ হিসেবে পরিচিত ছিল। কিছু দিন পর প্রতিষ্ঠানটি হাই মাদ্রাসায় উন্নীত হয়। সেই সঙ্গে এর সঙ্গে ইসলামিক আইএ ক্লাস সংযোগ করা হয়। পরে নওগাঁ সরকারি মহিলা কলেজের নাম পরিবর্তন করে নওগাঁ সরকারি বিএমসি মহিলা কলেজ (বসির উদ্দিন মেমোরিয়াল চ্যারিটেবল) নামকরণ করা হয়। এটি জেলার একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ।
এরপর ১৯৭৩ সালের মে মাসে কলেজটিতে ডিগ্রি কোর্স চালু করা হয়। পরে ২০০৭ সালে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয় দিয়ে অনার্স কোর্স চালু হয়। এরপর ২০১৩-১৪ বছরে বাংলা ও সমাজবিজ্ঞান বিষয়েও অনার্স কোর্স চালু করা হয়। এ মহিলা কলেজটিতে এইচএসসিতে ১২১৫ জন, ডিগ্রিতে ৩৫৬ জন ও অনার্স কোর্সে ১৭৯ শিক্ষার্থী রয়েছে। জেলার একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজটিতে যেসব বিষয় খোলা রয়েছে তা হলো_ বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, সমাজবিজ্ঞান, দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন বিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান, গণিত ও ভূগোল।
কলেজের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. নাজমুল হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ কলেজে ৪৭ জন শিক্ষকের স্থলে ২৭ জন শিক্ষক রয়েছেন। বাকি ২০টি পদ শূন্য রয়েছে। এই পদগুলো শূন্য থাকায় শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা মারাত্দকভাবে বিঘি্নত হচ্ছে। এছাড়া কলেজে কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরি ভবন ও একাডেমিক ভবনের তীব্র সংকটের কারণে নিজ নিজ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কলেজের একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সৃষ্টি মালাকার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত ক্লাস করে কি না তা শিক্ষকরা ভালোভাবে দেখেন না।
নিয়মিত ক্লাস না করলে শিক্ষকদের কাছে কোনো জবাবদিহিতা করতে হয় না। এ সময় শিক্ষার্থীদের আড্ডায় মেতে থাকতে দেখা যায়। এ সব বিষয়ে শিক্ষকদের কড়া নজর থাকা প্রয়োজন।
একাদশ শ্রেণীর বাণিজ্যিক বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমাশা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, কলেজের ভেতরে একটি ক্যান্টিন থাকলে খুব ভালো হয়। কারণ কলম ও খাতা কেনার অজুহাতে ক্লাস ফাঁকি দিয়ে অনেক শিক্ষার্থী বাইরে চলে যায় নাশতা করার জন্য।
এছাড়া কলেজের পরিবেশ খুবই ভালো। এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সাবরীনা শাহনাজ চৌধুরী বলেন, জন্মের শুভলগ্ন থেকেই নওগাঁ জেলার একমাত্র সরকারি মহিলা কলেজ হিসেবে এ কলেজটি নারীশিক্ষা বিস্তারে অগ্রগতি সাধন ও সুনাগরিক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৮৮ এবং ৯৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ কলেজ হিসেবে নির্বাচিত হয়ে নব ইতিহাস সৃষ্টি করে। বাবুল আখতার রানা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।