যার এক কান কাটা সে তার লজ্জা লুকাতে রাস্তার একপাশ দিয়ে যায়। যার দুই কান কাটা তার যেহেতু লজ্জা লুকানোর অবকাশ নেই, সেহেতু সে যায় রাস্তার মাঝ দিয়ে। প্রিয় পাঠক, কান কাটাবিষয়ক কোনো উপাখ্যান আজ আমাদের সম্পাদকীয় কলামের বিবেচ্য বিষয় নয়। শিক্ষার্থীদের দাঁড় করিয়ে নেতাদের সংবর্ধনা নেওয়ার যে মচ্ছব দেশে আবারও শুরু হয়েছে সেদিকে আমরা সহৃদয় পাঠকদের নিয়ে যেতে চাই। দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ী সংসদ সদস্য ও মন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত কোনো কোনো রথী-মহারথীর মধ্যে হঠাৎ করে সংবর্ধনা নেওয়ার বাতিক প্রকাশ পাচ্ছে। পত্রপত্রিকায় অসহায় শিক্ষার্থীদের সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকার ছবি ছাপা হওয়ার পর এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন দেশের শিক্ষাবিদরা। তারা এ প্রবণতা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। সন্দেহ নেই, সংবর্ধনা নেওয়ার এ কুপ্রথাটি পুরনো। এর আগেও নির্বাচিত সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রীদের ক্ষমতা ও মর্যাদা জাহির করার জন্য অবোধ শিশু শিক্ষার্থীদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা রাস্তায় রোদের মধ্যে দাঁড় করিয়ে সংবর্ধনা নেওয়ার কসরত লক্ষ্য করা গেছে। এ নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সমালোচনার ঝড় শুরু হলে এ প্রবণতায় ভাটা পড়ে। একতরফা নির্বাচনের সংসদ সদস্য কিংবা মন্ত্রী হওয়ার পর সে প্রবণতা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। এক বছর ধরে রাজনৈতিক সহিংসতায় দেশের শিক্ষাব্যবস্থার যে সর্বনাশ হয়েছে তা আদৌ পূরণ হবে কিনা সন্দেহ। শিক্ষাব্যবস্থায় স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে বছরের শুরুতে যখন নতুনভাবে কার্যক্রম শুরু হচ্ছে, তখন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষার বদলে নেতা বন্দনায় বাধ্য করা যে কোনো মূল্যায়নে দুর্ভাগ্যজনক। সরকারি দলের শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করেছেন, বিরোধী দলের বর্জনের মুখে তারা একতরফা নির্বাচন করতে বাধ্য হয়েছেন সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে। এ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ থাকায় নির্বাচিত সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের কাজের মাধ্যমে নিজেদের ভাবমূর্তি পুনর্গঠন যখন দায়িত্ব হওয়া উচিত, তখন তারা যেভাবে সংবর্ধনার গড্ডলিকায় গা ভাসাচ্ছেন তা কাম্য হতে পারে না। আমরা আশা করব, আমাদের নেতা নামধারীরা শিশুদের ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে সুবুদ্ধি ও সুবিবেচনার পরিচয় দেবেন। তাদের সুনামের স্বার্থেও সংবর্ধনা বাতিকের অবসান হওয়া দরকার।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।