রেল ক্রসিং পার হতে গিয়ে দুর্ঘটনায় পড়ে হতাহতের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। রেলপথে প্রতি বছর শতাধিক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির শিকার হচ্ছে দুই শতাধিক মানুষ। রেলের ক্রসিং এলাকাতেই ঘটছে অধিকাংশ দুর্ঘটনা। বিদ্যমান ক্রসিংয়ের প্রায় অর্ধেকই অনুমোদনহীন। আর গেটম্যান নেই ৯০ ভাগ ক্রসিংয়ে। ফলে রেলপথে মৃত্যু ঠেকানো যাচ্ছে না।
জানা গেছে, বর্তমানে সারা দেশে ২ হাজার ৫৪১টি রেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৪১৩টি অনুমোদিত এবং ১ হাজার ১২৮টি অনুমোদনহীন। ঢাকা লাইনের নারায়ণগঞ্জ ও টঙ্গী পর্যন্ত ৩৫টি লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র ১২টি বৈধ। অনুমোদনহীন ক্রসিংয়ে কোনো গেটম্যান না থাকায় অহরহ দুর্ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া রেলওয়ের শূন্যপদ পূরণ না হওয়ায় এমন সংকট চলছে বলে জানান রেলের পরিচালক (পরিবহন) মো. শাজাহান।
দেশে মোট রেল ক্রসিংয়ের ২২৮টিতে স্থায়ী ও ১৫৩টিতে অস্থায়ী গেটম্যান রয়েছেন। অনুমোদনহীন গেট নির্মাণ করলেও বাধা দেয়নি রেলওয়ে। গেটের উভয় পাশে 'গেটম্যান নেই' সতর্কবাণীর সাইনবোর্ড দিয়েই দায়িত্ব সেরেছে রেল কর্তৃপক্ষ। আর গেটম্যানদের বিরুদ্ধে দায়িত্বে গাফিলতির অভিযোগটি পুরনো। এদিকে পাঁচ বছর ধরে ঝুলে রয়েছে রাজধানীর রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস ও ফ্লাইওভার নির্মাণের কাজ। এ ছাড়া গত বছর ক্রসিংয়ে গেটের পরিবর্তে গ্রেড সেপারেশনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রেলপথ মন্ত্রণালয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। জানতে চাইলে রেলওয়ের যুগ্ম-পরিচালক মোফাজ্জল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবৈধ ক্রসিংয়ে গেটম্যান থাকার সুযোগ নেই। আর ৭৮০টি গেটম্যানের পদের মধ্যে শূন্যপদ রয়েছে ৫৪২টি। অস্থায়ী ভিত্তিতে কিছু গেটম্যান রয়েছে। অস্থায়ী গেটম্যানকে ৩২ দিনে দেওয়া হয় ২ হাজার ৩৫০ টাকা। তাই এদের অনেকে হয়তো পাশাপাশি অন্য কাজ করেন। রেলওয়ের নেটওয়ার্কে লেভেল ক্রসিং গেটের বর্তমান অবস্থা নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় পাঁচটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সিদ্ধান্তগুলো হলো গুরুত্বপূর্ণ সড়ক ও মহাসড়ক রেল ক্রসিংয়ের পরিবর্তে গ্রেড সেপারেশন (ফ্লাইওভার, ওভারপাস, আন্ডারপাস) নির্মাণ করতে হবে। অনুমোদনহীন ক্রসিংগুলো অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ রেলকে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের দেওয়া, ভবিষ্যতে রেলের অনুমতি ছাড়া রেল ক্রসিং নির্মাণ করা যাবে না। অননুমোদিত রেল ক্রসিং বন্ধ করা নিয়ে নির্মাণকারী সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও রেলওয়ের যৌথ জরিপ এবং অনুমোদিত ক্রসিংগুলো রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক/এলজিইডি/সংস্থার সহায়তা নেওয়া হবে। রেল মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০০৬ সালের ২০ এপ্রিল রাজধানীর রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা যায়, তার সম্ভাব্যতা যাচাই এবং এতে নির্মাণ ব্যয় কত হবে তা নির্ধারণের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। এরপর বিভিন্ন সংস্থা তা পর্যালোচনা করে। তিনটি উড়ালসড়কের নির্মাণ শেষ করা হয়। সাত রেল ক্রসিংয়ের ওভারপাস নির্মাণ শুরু করা যায়নি। এ স্থানগুলো হলো এফডিসি রেল ক্রসিং, বনানী স্টাফ রোড ক্রসিং, জুরাইন রেল ক্রসিং, তেজগাঁও ক্রসিং, মালিবাগ ও মিরপুর-মাটিকাটা ক্রসিং। এর মধ্যে তিনটি উড়ালসড়ক (মোহাম্মদ জিল্লুর রহমান, মেয়র হানিফ ও কুড়িল) নির্মাণ কাজ শেষ হলেও মগবাজার এলাকার উড়ালসড়কের কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে সাতটি ফ্লাইওভার বা ওভারপাস নির্মাণের উদ্যোগ নিলেও পরে এফডিসি রেল ক্রসিং, বনানী স্টাফ রোড ও জুরাইন রেল ক্রসিংয়ে ওভারপাস ও নির্মাণ শুরুর প্রক্রিয়া রয়েছে। কয়েক দিন আগে রেল মন্ত্রণালয় থেকে নকশা প্রণয়ন ও অনুমোদন করা হয়। শীঘ্রই টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ শুরু হবে বলে জানান রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।