নিজের ভাবনা অন্যকে জানাতে ভালো লাগে।
বাংলাদেশের রাজনীতি ও সামাজিক ইতিহাসে সমগ্র জাতির বুকে কলঙ্ক,লজ্জা আর ঘৃণার যে ইতিহাস লুকিয়ে আছে সেই ইতিহাসের নাম জামায়েত ইসলামি বাংলাদেশ। চরম ফ্যাসিবাদী ভাবাদর্শের উপর গড়ে উঠা এ-দলের তাত্ত্বিক গুরু আবু আলা মওদুদী বিশ্ব-রাজনীতির ইতিহাসে এক ভয়ংকরতম মিথ্যাবাদী আর প্রতারক ব্যক্তি ছিল। যিনি জামায়াতে ইসলামির মতো একটা চরম ফ্যাসিবাদী দল গঠন করলেও তার নিজের সন্তানদের কখনও এই দলে সম্পৃক্ত করে নি। যে কিনা মুসলমানদের নৈতিক শক্তিতে বলীয়ান হবার জন্য আমৃত্যু ধর্মীয় শিক্ষা যথা মাদ্রাসা শিক্ষার পক্ষে প্রচার করেছে, অথচ তার নিজের সন্তানদের পড়াশোনা করিয়েছে ইউরোপ-আমেরিকার মতো উন্নত বিশ্বের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
যিনি দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে পাকিস্তান সৃষ্টির বিরোধীদা করে ছিল এই বলে যে: সহি মুসলমানের হাতে পাকিস্তান সৃষ্টি হচ্ছে না। আবার আমরা দেখছি পাকিস্তান হবার পর তিনিই প্রচার করছে পাকিস্তান হচ্ছে আল্লামা ইকবালের স্বপ্নের পবিত্র স্থান। তার ভাষার সেই পবিত্র স্থানের পবিত্র আদালতেই তাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়ে ছিল, সংখ্যালঘু কাদিয়ানিদের উপর সাম্প্রদায়িক আক্রমণের উসকানি দানের অভিযোগে। যদিও পাকিস্তানের নষ্ট-রাজনীতির দুষ্টচক্রে পড়ে সেই রায় আর কার্যকর হয় নিই, তবে সেই রায়-এর মধ্যদিয়ে আমাদের কাছে একটা চরম সত্য ধরা দিয়েছে তা হলো: মওদুদী দর্শন মানেই ফ্যাসিবাদী দর্শন। তার অনুসারীরা মুখে যতই বলুক সংখ্যালঘুদের জানমাল-এর নিরাপত্তা বিধানে তারা সচেষ্ট কিন্তু তাদের ফ্যাসিবাদী ভাবা-দর্শনেই বলে তাদের কাছে ভিন্ন ধর্মমত অনুসারীরা নিপীড়ন, নির্জাতন, আক্রমণের শিকার অতীতে হয়েছে, বর্তমানে হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে।
সেই ফ্যাসিবাদী পাকিস্থানি জামাতের বংশধর বাংলাদেশের জামায়াতীরা, যারা বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কালে, দলের নাম পরিবর্তন করে নতুন ভাবে নাম করণ করেছে বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামি। এই নাম পরিবর্তন আল্লাহর ভয়ে নয়, আর্মি সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের লাঠির ভয়ে। মওদুদী যে ভাবে প্রচার করেছিল, পাকিস্থান কোন সহি মুসলমানের হাতে হচ্ছে না, ঠিক সেই ভাবে তার এই দেশীয় দোসর জামাতের নেতারা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় প্রচার করছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হলে এদেশের মানুষ সব হিন্দু হয়ে যাবে। অথচ আজও তারা স্বাধীন বাংলাদেশে বহাল তবিয়তে রাজনীতি করে যাচ্ছে! স্বাভাবিক নিয়মেই প্রশ্ন জাগে, তারা কী এখনও মুসলমান আছে? কে মুসলমান কে মুসলমান না সেই সিদ্ধান- আল্লাহর, আমরা এখানে শুধু জামায়াতে ইসলামি বাংলাদেশের একটা প্রতারণার নমুনা তুলে ধরলাম মাত্র। এভাবে আরো বলা যায়, তাদের বহুল প্রচারিত স্লোগান সব সমস্যার সমাধান দিতে পারে আল-কোরান।
অথচ আমরা দেখছি, ৯৬সালে দেশে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রশ্নে বুর্জোয়া দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হলো, যখন কমনওয়েথের মহাসচিব এলেন সমঝোতার উদ্যোগ নিতে, তারা তখন আল-কোরানকে ভুলে গিয়ে আলোচনায় বসলেন সেই সাম্রাজ্যবাদের প্রতিনিধির সাথে। তারও আগে ৯১ নিবাচর্নে জামাত ইসলাম তার নিবাচর্নি প্রচারণায় জোরেশোরে তুলে ধরেছিল, ইসলাম ধর্মে নারী নেতৃত্ব হারাম। অথচ সংসদে গিয়ে তারা কোন রকম শর্ত ছাড়াই সমর্থন দিয়ে বসল খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিএনপি সরকারকে। এই বিষয় সাংবাদিকরা তাদের প্রশ্ন করলে বলেছিল: বড় শয়তানকে রুকতে ছোট শয়তানকে সমর্থন দিয়েছে। কিন্তু' আমরা ঠিক উলটোটা দেখলাম, ৯৬সালে তারা এবার বড় শয়তানের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে ছোট শয়তানের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে।
তাদের আরেটি বহুল প্রচারিত স্লোগান:‘ আল্লার বিধান ছাড়া মানব-গড়া সংবিধান বিশ্বাস করে না। ’ অথচ সংসদে গিয়ে তারা সেই মানব গড়া সংবিধানের আলোকেই শপথ বাক্য পাঠ করে। আমরা শুরুতে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জামাতের নাম পরিবর্তনের কথা বলেছিলাম, এই পরিবর্তনের ছেয়েও আরো জগন্নু প্রতারণা সে সময় তার নিজের দলের কর্মীদের সাথে করে ছিল, সেটা হলো: পুরো পার্টির সংবিধানটাই পরিবর্তন করে ফেলে,তাদের দলীয় সংবিধানে লেখা সরবশক্তিমান আল্লাহর উপর আস্থার পরিবর্তে জনগণের উপর আস্থা শব্দটা যুক্ত করা। এই পরিবর্তন যদি তাদের শুভবুদ্ধির উদয় থেকে হতো তবে কোন প্রশ্নই ছিল না, বরং তারা পার্টি সংবিধান পরিবর্তন করেছে আর্মি সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের চাপের কারণে। এবং সম্প্রতি তাদের আরো জগন্নু ও ভয়াবহ প্রতারণা দেখল সমগ্র জাতি, দেখল সাঈদীর মতো একজন যুদ্ধাপরাধীর ছবি চাঁদে দেখা যাবার গুজব রটিয়ে সমগ্র দেশে তার কেমন তাণ্ডব লীলা চালিয়েছে।
এদেশের সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানের ইমান নিয়ে কি জগন্নু প্রতারণা! এই ভাবে ধর্মব্যবসায়ী মৌলবাদী দলটার বিরুদ্ধে আমরা অসংখ্য প্রতারণার নজির হাজির করতে পারি, কিন' সেই তালিকা দীর্ঘ করা থেকেও আমাদের সামনে জরুরি কাজ হলো তাদের প্রতারণাগুলো জনগণের সামনে তুলে ধরে ধর্মকে এই প্রতারক ধর্মব্যবসায়ীর হাত থেকে রক্ষা করা। জনগণকে বুঝিয়ে দেওয়া: নির্বাচন আসলেই তারা স্লোগান তুলে, ভোট দিলে পাল্লায় খুশি হবে আল্লাহ, আল্লাহ জামায়াত ইসলামি পার্টি করে না, বরং আমাদের সামাজিক অভিজ্ঞতায় বলে, এদেশের সিংহভাগ মানুষেই জামাতের ধর্মব্যবসায়ী রাজনীতিকে প্রচণ্ড ঘৃণা করে। এমন কী তাদের দীর্ঘদিনের মিত্র বিএনপি, সেই বিএনপির মাঠ পর্যায়ের সাধারণ কর্মী সমর্থকরাও জামায়াতে এই প্রতারণাকে ঘৃণা করে! তাই আমরা বলতে পারি যাদের সিংহভাগ মানুষে ঘৃণা করে, ইসলাম ধর্মের বিধান অনুসারে তাকে আল্লাহও ঘৃণা করে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।