চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড দেশের অন্যতম জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকা। এখানে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের সংখ্যা প্রায় ১৬০টি। কিন্তু এক বছরে প্রায় ৮০টি বন্ধ হয়ে গেছে। এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ জন্য বিগত রাজনীতির নামে নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞের প্রভাবকে দায়ী করেছে। অল্প সময়ে ইয়ার্ডগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছে ইয়ার্ডে কর্মরত প্রায় এক লাখ শ্রমিক-কর্মচারী-কর্মকর্তা। বিশেষজ্ঞ বলছেন, জাহাজ ভাঙা বন্ধ হলে এর প্রভাব পড়বে আবাসন শিল্প, রি-রোলিং মিলস এবং অঙ্েিজন ফ্যাক্টরিসহ স্ক্র্যাপ লোহার ওপর নির্ভরশীল শিল্প কারখানাগুলোতে।
বাংলাদেশ শিপ ব্র্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হেফাজাতুর রহমান বলেন, 'দেশের প্রয়োজনীয় লোহার সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে সীতাকুণ্ডের শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো। রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাবসহ বেশকিছু কারণে এ শিল্পে মুমূর্ষু অবস্থা বিরাজ করছে। এ অস্থিরতার প্রভাব সরাসরি আঘাত হানবে জাহাজ ভাঙা শিল্পে নির্ভরশীল কল-কারখানার ওপর।' বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব এবং ক্রমাগত লোকসানের কারণে গত এক বছরে সীতাকুণ্ডের ১৬০ শিপ ইয়ার্ডের মধ্যে ৮০টির মতো এখন বন্ধ হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি বন্ধ হওয়ার পথে। এ মুহূর্তে ইয়ার্ড মালিকরা সরকারের পূর্ণ সহযোগিতা না পেলে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা অসম্ভব হবে।' শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের আরও একাধিক মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সীতাকুণ্ডে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোর দুঃসময় শুরু হয় গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। এ সময় বিরোধী দলের জ্বালাও-পোড়াও রাজনীতির কারণে সীতাকুণ্ড হয়ে উঠে অগি্নগর্ভা। ফলে স্ক্র্যাপ লোহার ক্রেতারা না আসায় শিপ ব্রেকিং ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে অচল থাকে। দীর্ঘদিন ব্যবসা না হলেও শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন, ব্যাংক লোনের সুদ এবং অন্যান্য খাতের খরচ বহন করতে হয় ইয়ার্ড মালিকদের। এতে শত শত কোটি টাকার ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে ইয়ার্ড মালিকরা। নির্বাচনের পর পরিস্থিতি শান্ত হলেও আগের অবস্থা এখনো ফিরে আসেনি। আর এর মধ্যে ব্যাংক ঋণ ও নগদ টাকা জোগাড় করতে গিয়ে বহু মালিক লোকসান দিয়েও স্ক্র্যাপ লোহা, ফাইভ এইট প্লেট, মেলডিং স্ক্র্যাপসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম বিক্রি করে দিয়েছেন। লোকসানে স্ক্যাপ লোহা বিক্রি করতে গিয়ে আরও দায়গ্রস্ত হয়ে পড়েন ইয়ার্ড মালিকরা। ফলে সরকারের এগিয়ে আসা ছাড়া এ শিল্প আগের অবস্থানে নিয়ে যাওয়া দুরূহ হবে। একাধিক শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডের মালিক জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে লোহার দাম টনপ্রতি ৪৩০ ডলার থেকে বেড়ে ৪৮০ ডলার হলেও দেশের বাজারে লোহার দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। দেশে বর্তমানে ফাইভ এইট প্লেট প্রতি টন ৪১ হাজার থেকে কমে বিক্রি হচ্ছে ৩৮ হাজার টাকা। একই স্ক্র্যাপ লোহা ৩৫ হাজার টাকা থেকে কমে ৩২ হাজার ৫০০ টাকা, গাডার ৩৭ হাজার থেকে কমে ৩৫ হাজার টাকা ধরে বিক্রি হচ্ছে। লোহার আন্তর্জাতিক বাজার ও দেশীয় বাজারের মধ্যে বিশাল পার্থক্য হওয়ায় এবং ব্যাংকের চড়া সুদের কারণে ইয়ার্ড মালিকরা দিশাহারা। এ অবস্থা চলতে থাকলে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।