আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

লন্ডনের হলবর্ন চেম্বার ও বিএনপি-জামাত এর আর্থিক লেনদেনঃ তারেক রহমান মানবাধিকার হরণের শিকার !



গত ৭ মার্চ, ২০০৭ তারিখে একটি দূর্নীতি মামলার আসামী হিসেবে তারেক রহমানকে তার ঢাকা ক্যান্টমেন্টস্থ মইনুল রোডের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তার বিরুদ্ধে মোট ১৭টি দূর্নীতির মামলা দায়ের করা হয় এবং তাকে বিচারের সম্মুখীন করা হয়। ২০০৮ এর আগস্টে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলাগুলো আদালতে গতি লাভ করে। বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে একজন ভয়ঙ্কর রাজনীতিক এবং দূর্নীতি ও চুরির মানসিকতাসম্পন্ন সরকারের প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাকে বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থের প্রতি হুমকি হিসেবেও দেখেছিল ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাস।

২০০৮ সালে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় তারেক রহমানকে এভাবেই বর্ণনা করা হয়েছে। বার্তায় তারেকের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ করারও সুপারিশ করা হয়। গত ৩০ আগস্ট, ২০১১ তারিখে সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসের ফাঁস করা গোপন মার্কিন নথি থেকে পাওয়া গেছে এ তথ্য। মরিয়ার্টির পাঠানো তারবার্তায় বলা হয়, মার্কিন দূতাবাস মনে করে, রাজনৈতিক দূর্নীতির অভিযোগে কুখ্যাতি পাওয়া তারেক রহমান যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের জন্যও একজন ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর ব্যক্তি। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রার ক্ষতিসাধন করতে পারেন তারেক রহমান।

প্রায় আঠারো মাস কারান্তরীণ থাকার পর গত ৩ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে সবগুলো মামলায় তারেক রহমানের জামিন লাভ সম্পন্ন হয়। গত ১১ সেপ্টেম্বর, ২০০৮ তারিখে বিশেষ কারাগার থেকে বেগম খালেদা জিয়া মুক্তি পাওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে অসুস্থ পুত্র তারেক রহমানকে দেখতে যান। সেদিন রাতেই তারেক রহমান উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যের উদ্দেশ্যে রওনা হন। ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি লন্ডনের ওয়েলিংটন হসপিটাল ও লন্ডন হসপিটালে তার চিকিৎসা চলছে এবং চিকিৎসার সুবিধার্থে তিনি সেন্ট্রাল লন্ডনের এডমন্টনে সপরিবারে বসবাস করছেন। গত ৮ ডিসেম্বর, ২০০৯ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত বিএনপি’র পঞ্চম জাতীয় কাউন্সিলে তারেক রহমান সংগঠনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন ।

সম্প্রতি ব্রিটেনে অসুস্থতার নাম করে তিনি প্রকাশ্যেই রাজনীতি করছেন। সেখানে তিনি প্রায়ই বিভিন্ন সভা, সেমিনারে উপস্থিত থাকেন এবং বক্তৃতা প্রদান করেন। এছাড়াও, তিনি দেশের রাজনীতিকে অশান্ত করার লক্ষ্যে বিদেশে বসেই সরকার বিরোধী বিভিন্ন উস্কানীমূলক ভিডিওবার্তা প্রেরণসহ সকল সহিংস কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।
বিএনপি চেয়ারপার্সন, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও ভূতপূর্ব বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া, তার দুই ছেলে তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো এবং তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে মোট ২৭টি মামলা রয়েছে। জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে এসব মামলার মধ্যে সাতটি বর্তমান সরকারের আমলে করা।

বাকিগুলো গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে দায়ের করা হয়েছিল। আদালতের নথিপত্র পর্যালোচনা করে সংবাদমাধ্যম গুলো বলছে, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া’র বিরুদ্ধে মোট পাঁচটি, তার বড় ছেলে বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট সতেরটি, ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো’র বিরুদ্ধে মোট সাতটি এবং তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমানের বিরুদ্ধে একটি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে দু’টিতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে তার দুই ছেলেকে এবং একটিতে তারেক ও কোকোকে একত্রে আসামি করা হয়েছে। এই হিসেবে জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ২৭টি। সম্প্রতি দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায় প্রকাশিত হওয়া এবং তাতে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততার বিষয়টি জড়িত থাকায় লন্ডনের স্থানীয় কয়েকজন আইনজীবীর মাধ্যমে বিএনপি’র উদ্যোগে গত ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০১৪ তারিখে সেখানে এক সংবাদ সম্মেলন করা হয় ।

উক্ত সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ সরকার বিচার ব্যবস্থাকে তাদের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করেছেন যুক্তরাজ্যের বেশ কয়েকজন আইনজীবী। লন্ডনের ওয়েস্টমিনিস্টার গ্রিন বিজনেস সেন্টারে “গ্রস ভায়োলেশন অব হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পলিটিসাইজেশন অব জুডিশিয়ারি ইন বাংলাদেশ” শীর্ষক এই সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করে লন্ডনের হলবর্ন চেম্বার এবং যার নেপথ্যে অর্থায়ন করে বিএনপি। সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাজ্যের ১৩ জন স্থানীয় আইনজীবী এবং প্রবাসী বাংলাদেশি কয়েকজন আইনজীবীসহ কিছু মানবাধিকারকর্মী উপস্থিত ছিলেন।


উক্ত সংবাদ সম্মেলনে হলবর্ন চেম্বারের প্রধান স্টুয়ার্ট স্টিভেন বলেন, “বিচার ব্যবস্থা কারও রাজনৈতিক স্বার্থের হাতিয়ার হতে পারে না। বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থা নিরপেক্ষ নয়”।

তিনি উল্লেখ করেন যে, “একটি রাজনৈতিক দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে বেকসুর খালাস দিয়ে রায় প্রদানের কারণে বিচারককে এখন দেশ ছেড়ে পালাতে হয়েছে। একজন বিচারকের বিরুদ্ধে সরকারের এ ধরনের প্রতিহিংসামূলক আচরণ দেশ ও গণতন্ত্রের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। সরকারের এ ধরনের আচরণ বাংলাদেশের বিচার ব্যবস্থাকে দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে”। নিশ্চিত সূত্রে জানা যায় যে, হলবর্ন চেম্বার ও তার আইনজীবীরা লন্ডনে বিএনপি এবং জামাতের অর্থায়নে তাদের পক্ষে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন। এক্ষেত্রে, বিএনপি-জামাতের সাথে হলবর্ন চেম্বারের অতিমাত্রায় সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে বিভিন্ন মহল হলবর্নের সাথে জামাত-বিএনপি’র মোটা অংকের অর্থ লেনদেনের বিষয়টিকেই ইঙ্গিত করছে।

সংবাদ সম্মেলনে ব্রিটিশ আইনজীবীদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অ্যান হোউজ, কলিন ক্যাম্পবেল, রবির মারদো-স্মিথ, ম্যারি ম্যাকক্যামা, টম মিশেল, অ্যালেক্স, মারিয়া গঞ্জালেস এবং বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত আইনজীবীদের মধ্যে এ কে এম কামরুজ্জামান, আসাদুজ্জামান ও আশিকুর রহমান সবুজ। ঐ দিনের সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের আইন ও বিচার ব্যবস্থার দিকে দীর্ঘদিন ধরে ব্রিটিশ আইনজীবীদের সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে উল্লেখ করে স্টুয়ার্ট স্টিভেন জোর গলায় বলেন, “যুক্তরাজ্যে চিকিত্সাধীন বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের প্রতিহিংসা ও অপপ্রচারের শিকার” । তারেক রহমানের দূর্নীতির বিশদ খতিয়ান সম্বন্ধে না জেনে একজন বিদেশী আইনজীবী হিসেবে স্টুয়ার্ট স্টিভেনের জোর গলায় এমন বক্তব্য প্রদানকে জামাত-বিএনপি’র মোটা অংকের অর্থ প্রদানের বিষয়টিই একমাত্র কারণ হিসেবে দেশী/বিদেশী বিশ্লেষকরা মনে করছেন ।

স্বাভাবিকভাবেই এখন সবার মনে প্রশ্নঃ
১। লন্ডনের হলবর্ন চেম্বারে বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র তারেক রহমানের প্রসঙ্গ এত প্রাধান্য পেল কেন ?
২।

যেখানে খোদ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থের প্রতি তারেক রহমানকে হুমকি হিসেবে দেখছে, সেখানে লন্ডনের হলবর্ন চেম্বার তারেক রহমানকে একজন ‘হিরো’ হিসেবে দেখার কারন কি ?

এ সকল প্রশ্নের উত্তরগুলো কি এক বিশেষ কিছুকে ইঙ্গিত করছে ? কি সেই বিশেষ কিছু… ?
দেশী/বিদেশী যে কোন বুদ্ধিসম্পন্ন মানুষই একবাক্যে বলবে যে, জামাত-বিএনপি’র মোটা অংকের অর্থ লেনদেনই এ সকল বিষয়ের একমাত্র মূল রহস্য।

বিস্তারিত...

০২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
সকাল ৯টা’র দিকে তারেক রহমান মেডিক্যাল চেক আপের জন্য ওয়েলিংটন হাসপাতালের উদ্দেশ্যে তার বিএমডব্লিউ গাড়িতে ড্রাইভার শরীফুলকে নিয়ে বের হয়ে যান । ঐদিন স্ত্রী জোবায়দা সাথে থাকলেও তাকে তিনি তার মেয়ে “জাইমা”কে স্কুলে পাঠাতে বলে স্ত্রীকে ছাড়াই যাত্রা করেন । তারেক রহমানের সাথে তার স্ত্রী জোবায়দার পরিবর্তে গাড়ীতে উঠে বসেন কমরুদ্দীন ওরফে বগা কমর । পরে বগা কমরকে নিয়ে তারেক রহমান প্রথমে ওয়েলিংটন হাসপাতালে যান এবং সেখানে মিনিট দশেক অবস্থান করে আবার বের হয়ে পড়েন।

এবার তিনি (তারেক) হাসপাতাল থেকে বের হয়ে গাড়ী আর ড্রাইভারকে রেখেই ট্যাক্সিতে করে চলে যান হাসপাতালের সন্নিকটে অবস্থিত এডওয়ার্ড রোডের “কমফোর্ট ইন” হোটেলে । হোটেলের ৩৫ নং কক্ষে আগে থেকেই অবস্থান করছিলেন বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত আইনজীবী ও স্থানীয় বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান, আশিকুর রহমান সবুজ, ব্রিটিশ আইনজীবী ও হলবর্ন চেম্বারের প্রধান স্টুয়ার্ট স্টিভেন এবং ব্রিটিশ আইনজীবী মারিয়া গঞ্জালেস । প্রায় ঘণ্টা দুই ব্যাপী মিটিং শেষে ব্রিটিশ আইনজীবীগণ ১০০ মিলিয়ন পাউন্ডের (বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ১,২৭৭ কোটি টাকা) বিনিময়ে তারেক রহমানের পক্ষে প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে উভয়ের মধ্যে সমঝোতা হয়।

০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
সকাল ১১ টা’র দিকে বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত আইনজীবী ও স্থানীয় বিএনপি নেতা আসাদুজ্জামান, ব্রিটিশ আইনজীবী মারিয়া গঞ্জালেসকে সাথে নিয়ে লন্ডনের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাঙ্কের এজওয়ার রোডের শাখায় অর্থ বিনিময়ের বিষয়টি নিষ্পত্তি করেন । ব্যাঙ্কের সিসিটিভি ফুটেজেও ঐ দু’জনের ভিডিওটি ধারণ করা আছে ।



এর পরেও কি কারো কাছে অস্পষ্ট যে, লন্ডনের হলবর্ন চেম্বার এবং এর প্রধান আইনজীবী স্টুয়ার্ট স্টিভেন এর গলার স্বর বিএনপি’র সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্য কেন এত জোরালো এবং তারা এ ব্যাপারে কেনই বা এত সোচ্চার ??

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.