বিলেতে কবিতা চর্চার পাশাপাশি ছড়া-চর্চাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। শাহাদাত করীম, রব্বানী চৌধুরী, দিলু নাসের, রেজুয়ান মারুফ, আহমদ ময়েজকে মূল ধারার ছড়াকার হিসেবে নিঃসন্দেহে গ্রহণ করা যায়। এ আলোচনায় স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় দুই ছড়াকার দিলু নাসের ও আহমদ ময়েজ-এর ছড়া খতিয়ে দেখতে চাই।
দিলু নাসের
দিলু নাসের সম্পর্কে সুভাষ মুখ্যোপধ্যায় বলেছিলেনÑ‘দিলুর ছড়ায় বাংলা ছড়ায়। ’ তিনি ঘোষণা দেন-
ধর্মের নামে যারা
করে শয়তানি
তারা তো মানুষ নয়
ইতর প্রাণী।
ধর্মকে নিয়ে যারা
করে বেচাকেনা
ঈশ্বর তাহাদের
মা করবেনা।
(বিষকামড়)
পৃথিবীতে যত শোষিত মানুষ
আমি তাহাদের পে
আমার কলম সদা জাগ্রত
দিন বদলের ল্েয।
(বিশ্বগ্রাম)
শেষোক্ত চরণগুলি পশ্চিম বঙ্গে গীত হয়েছে পল্লব ঘোষের কণ্ঠে। বিপুল জনপ্রিয়তাও পেয়েছে। দিলু নাসের সম্পর্কে কবি দিলওয়ার সঠিক মন্তব্যটিই করেন-
দিলু নাসের আসছে লাখে লাখে
নদী মাতৃক দেশের বাঁকে বাঁকে।
দিলু নাসের জিজ্ঞাসা তৈরী করেন-
বিশ্বতে হানাহানি
বল আজ কে নেভায়
শান্তির সভা তাই
হয় রোজ জেনেভায়!
দিলু নাসের প্রত্যক্ষ করেন-
জমির আলীর একটি ছেলে
লন্ডনেতে বাস করে
তাই তো ছেলে পাঠায় দেশে
লা টাকা মাস পরে।
জমির আলী ভাবেন ছেলে
বিলেত টাকার চাষ করে
কিন্তু ছেলে পাঠায় টাকা
জীবনটারে নাশ করে।
দিলু নাসেরই (সামান্য হাস্যপ্রবণ হলেও) সঠিক বিষয়টি লিখতে পারেন-
লন্ডনে আমাদের নিউ জেনারেশনে
খুব মন দিয়েছেন
হিজাবের ফ্যাশনে।
চুল ঢাকা থাকে আর বাকি সব টাইট
রাস্তায় প্রেমিকেরে গালে দেয় বাইট।
দিলু নাসের-এর ছড়া নিয়ে লিখেছেন, আব্দুল গাফফার চৌধুরী, সুনীল গঙ্গোপধ্যায়, এম আর আখতার মুকুল থেকে শুরু করে সালেহা চৌধুরী, সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মুহাম্মদ নূরুল হুদা প্রমূখ।
কিন্তু তারা যে লিখেছেন সেটা আমার কাছে বড় কথা নয়। বড় কথাটি হল, জিজ্ঞাসা তৈরী করা- কেন লিখেছেন? আমার তো মনে হয়, তাঁর লেখা সাধারণ পাঠক থেকে শুরু করে বোদ্ধাদের কাছেও উপেতি হবার নয়।
দিলু নাসের-এর গ্রন্থাবলী :
বিষ কামড়
বিশ্বগ্রাম
মুজিব নামের অর্থ
ছন্দে ছড়ায় বাংলাদেশের ইতিহাস
দিলু নাসের-এর ছড়া গ্রন্থ
সময়ের ছড়া
দিলু নাসের-এর বাছাই ছড়া (ছড়া)
পূর্ব পুরুষ (গল্প)
আবু জাহেলের প্রত্যাবর্তন
অল গেইট (উপন্যাস)
দিলুনাসের গীতি (গান)
আহমদ ময়েজ
ছড়াকার আহমদ ময়েজ-এর ছড়াগ্রন্থ দু’টি- কেউ করোনা মানা, একমুঠো রোদ্দুর। তাঁর ছড়ায় অন্ত্যমিল, ছন্দের নিপুণ প্রয়োগ, শব্দ চয়ন চোখে পড়ার মত। তবে এটিও চোখে পড়ার মত-কেউ করনা মানা ছড়াগ্রন্থটির ফ্যাপ লিখে দিয়েছেন সাপ্তাহিক বিক্রম পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাসুদ মজুমদার।
আমার জানা মতে, মাসুদ মজুমদার ইসলামী ছাত্র শিবিরের প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। আমি মনে করি, ময়েজ মূল্যায়ন আরো শুদ্ধ হত যদি তাঁর সম্পর্কে লিখতেন অগ্রজ কোনো কবি বা ছড়াকার। যা হোক, ময়েজ-এর ছড়ায় কিন্তু সত্য ভাষণটিই উচ্চারিত হয়-
রাজাকার আজ ডানে নয় শুধু
রাজাকার আজ বামেও
রাজার প্রীতি মিশিয়া রয়েছে
বিন্দু বিন্দু ঘামেও।
রাজাকার শুধু খুঁজিয়া মরেছো
অহেতুক সারা বঙ্গে
রাজাকার দেখো তোমারই বন্ধু
নিত্য নতুন ঢংগে।
রাজাকার আছে বাহিরে এবং
রাজাকার আছে ঘরমে
রাজাকার প্রীতি মিশিয়া রয়েছে
হাড্ডি মজ্জা চর্মে
(কেউ করনা মানা/২৩)
বিলেতে কবিতা চর্চার পাশাপাশি ছড়া-চর্চাও বিশেষ উল্লেখযোগ্য।
শাহাদাত করীম, রব্বানী চৌধুরী, দিলু নাসের, রেজুয়ান মারুফ, আহমদ ময়েজকে মূল ধারার ছড়াকার হিসেবে নিঃসন্দেহে গ্রহণ করা যায়। এ আলোচনায় স্বতঃস্ফূর্ত ও সক্রিয় দুই ছড়াকার দিলু নাসের ও আহমদ ময়েজ-এর ছড়া খতিয়ে দেখতে চাই।
প্রতিশ্র“তিশীল এই ছড়াকারের কাছ থেকে আমরা আরো রকমারি ছড়া আশা করি।
ক্লিক দিস লিঙ্ক
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।