ঢাকায় মেট্রো রেল স্থাপন প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মেট্রো রেল বাস্তবায়নকারী সংস্থা ঢাকা মাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (ডিএমআরটিডিপি) প্রস্তাবিত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি টিম লিডারের (ডিটিএল) পর্যাপ্ত যোগ্যতা না থাকার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চলছে। একটি এনজিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ নিয়ে অভিযোগ জানায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সড়ক বিভাগ, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবদের বিষয়টি যাচাই করে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
সূত্র জানায়, মেট্রো রেল প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগে জাপানি প্রতিষ্ঠান নিপ্পন কোই'র প্রস্তাবিত ডেপুটি টিম লিডার (ডিটিএল) কাজী আবুল ফিদা এর আগে তিনটি প্রকল্পে ডিটিএল হিসেবে কাজ করেছেন মর্মে দাবি করায় অধিকার উন্নয়ন সংস্থা নামের একটি এনজিও প্রধানমন্ত্রীর কাছে অভিযোগ জানায়। অভিযোগে বলা হয়, কাজী ফিদা তার সিভিতে দাবিকৃত প্রতিষ্ঠানগুলোতে পরামর্শক ছিলেন না। প্রকল্পের মূল বিনিয়োগকারী জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা-জাইকার গাইড লাইন অনুযায়ী দুর্নীতি ও প্রতারণামূলক কাজের জন্য শাস্তি হচ্ছে প্রস্তাব বাতিল। অথচ নিপ্পন কোই'কে শাস্তি না দিয়ে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়েছে। জানা গেছে, প্রায় ২২ হাজার কোটি টাকার মেট্রো রেল প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগের জন্য প্রস্তাব মূল্যায়নের সময়ই ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এবং যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে নিপ্পন কোই-এর পক্ষে অনিয়ম সমর্থনের অভিযোগ ওঠে। এতে নিপ্পন কোই-এর ডেপুটি টিম লিডার (ডিটিএল) কাজী আবুল ফিদার সিভিতে অসত্য তথ্য প্রদানের অভিযোগ আনা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও দাতা সংস্থা জাইকা'র গাইড লাইন অনুযায়ী প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটি এদের প্রস্তাব বাতিল না করে গোঁজামিলের মাধ্যমে অভিযোগ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এই অবস্থায় গত ৪ নভেম্বর সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নিপ্পন কোই-কে ৯২৮ কোটি টাকায় মেট্রো রেল প্রকল্পের পরামর্শক নিয়োগ অনুমোদন দেয়। অন্যদিকে অর্থমন্ত্রী এএমএ মুহিত গত ১৫ ডিসেম্বর মেট্রো রেলের পরামর্শক নিয়োগের অনিয়ম যাচাই করতে রেলমন্ত্রীর কাছে একটি সার-সংক্ষেপ পাঠান। ২২ ডিসেম্বর রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ সচিবকে জানানো হয়, মেট্রো রেল-সংক্রান্ত কার্যক্রম যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মতামত নিতে হবে। ৩১ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রীর একান্ত সচিব অভিযোগের সার-সংক্ষেপটির যোগাযোগমন্ত্রীকে জানাতে তার একান্ত সচিবের কাছে পাঠান। ১৩ জানুয়ারি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সড়ক বিভাগ সার-সংক্ষেপটি ডিটিসিএ-এর নির্বাহী পরিচালক ও মেট্রো রেলের প্রকল্প পরিচালকের কাছে পাঠিয়ে মতামত চায়। ১৬ দিন পর গত ২৯ জানুয়ারি ডিটিসিএ এর নির্বাহী পরিচালক ও মূল্যায়ন কমিটির আহ্বায়ক আফতাব উদ্দিন তালুকদার সড়ক বিভাগের সচিবকে পাঠানো জবাবে নিপ্পন কোই-কে অনিয়মের মাধ্যমে পরামর্শক নিয়োগের অভিযোগটি অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, প্রস্তাব মূল্যায়ন কমিটির সভায় জাইকা ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি পর্যবেক্ষক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং মূল্যায়ন ও প্রক্রিয়াকরণে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হয়েছে। উল্লেখ্য, পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের ডিটিএল কাজী আবুল ফিদার অসত্য তথ্য দেওয়ার অভিযোগটি সরকারের বিভিন্ন সংস্থা স্বীকার করেছে। এলজিইডি'র প্রধান প্রকৌশলী গত ৬ জুন এক পত্রে স্থানীয় সরকার সচিবকে জানান, কাজী আবুল ফিদা নভেম্বর ২০০২ থেকে জানুয়ারি ২০০৫ পর্যন্ত ঢাকার খিলগাঁও ফ্লাইওভার প্রকল্পের ডিটিএল ছিলেন না। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকেও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিবকে জানানো হয়, ২০০৮ সালের পাহাড়তলী রেলওয়ে ওয়ার্কশপ ও চট্টগ্রামের রেলওয়ে ট্রাক পুনর্বাসন প্রকল্পে কাজী ফিদার দাবিকৃত ডিটিএল পদই ছিল না। সূত্র জানায়, আরএফপির শর্ত এবং জাইকার ঢাকা অফিসের ২১ জুলাইয়ের চিঠির মর্মার্থ অনুযায়ী প্রস্তাবিত ডিটিএল এর এর আগে ২টি প্রকল্পে ডিটিএল হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে, যা নিপ্পন কোই-এর প্রস্তাবিত ডিটিএল কাজী আবুল ফিদার নেই। সূত্র জানায়, সরকারি অনুমোদনের জন্য ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে সড়ক বিভাগের পাঠানো ক্রয় প্রস্তাবের (সার-সংক্ষেপ) সঙ্গে মূল কারিগরি মূল্যায়ন প্রতিবেদনটি দেওয়া হয়নি। নিপ্পন কোই'র বিরুদ্ধে অধিকার উন্নয়ন সংস্থার আনীত অভিযোগের কপিও দেওয়া হয়নি এবং কী অভিযোগ করা হয়েছে তাও সার-সংক্ষেপে উল্লেখ হয়নি। অভিযোগ যাচাই করে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনার আলোকে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তাও সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়নি। অসত্য তথ্য দেওয়ার পরও কাজী আবুল ফিদাকে অভিজ্ঞতার ক্ষেত্রে শূন্য নম্বর দিয়ে নিপ্পন কোই এর প্রস্তাব বৈধ ও সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত দেখানোর পর তাকে বাদ দিয়ে জনৈক আবদুল মতিন চৌধুরীকে ডিটিএল নিয়োগ করা হয়েছে। কিন্তু এ বিষয়টিও ক্রয় কমিটির জন্য তৈরি সার-সংক্ষেপে উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের নিরপেক্ষ তদন্ত হলে যোগাযোগ মন্ত্রণালয়, ডিটিসিএ ও মূল্যায়ন কমিটি এবং নিপ্পন কোই ও এর সহযোগী পরামর্শকদের অনিয়মের তথ্য উদঘাটিত হবে। অযোগ্য প্রতিষ্ঠানের অনিয়মকে ধামাচাপা দেওয়া হলে মেট্রো রেল প্রকল্পও পদ্মা সেতুর ভাগ্য বরণ করতে পারে বলে সূত্র জানায়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।