আমার লেখা জুড়ে আমার ভালবাসা ছাড়া আর কিছু নেই।
- আশিক, আমার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে।
- মানে?
- হ্যাঁ, সত্যি কথা।
সামনে বসে আছে নিধি। আশিকের সামনে।
একটা লাল রঙের শাড়ি পরে। মুখে ক্রিম অথবা পাউডার মাখা। নিধি এমনিই সুন্দর দেখতে। আজ আরও বেশি লাগছে। বিয়ের সাজে সাজলে সব মেয়েকেই সুন্দর লাগে।
তবে একটু আগে, নিধি যে কথাটা বলল, তা শুনবার পর, এই সুন্দর টুকুই অসহ্য লাগছে আশিকের কাছে।
- কি বলতেছ তুমি?মাথা খারাপ?
- মাথা খারাপ হবে কেন? আব্বু আম্মু বিয়ে ঠিক করেছে, করে ফেলতেছি।
- আমার কি হবে?
- তুমিও একটা বিয়ে করবা। আমার থেকে সুন্দরী।
- আমি তো তোমাকে বিয়ে করব।
- তোমার বিয়ের বয়স হইছে? মেয়েদের বিয়ের বয়স হয়, ২০ এর পর। আর ছেলেদের হয়, বউকে ভালভাবে রাখার মত, উপার্জন করার পর।
- এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবে কেন?আমি তো আর কয়েক বছর পরেই,এস্টাব্লিশড হয়ে যাব।
-আমার পরিবার এতদিন অপেক্ষা করবে না।
- নিধি, এই নিধি।
- বল।
- একটু বুঝাও না বাসায়। আমি তোমাকে ভালবাসি অনেক।
- আমিও বাসতাম।
- এখন বাস না?
- ভেবে দেখলাম, তোমার মত বেকারের সাথে প্রেম করার চেয়ে,বাবা মায়ের পছন্দ করা ছেলেকে বিয়ে করে ফেলা ভাল।
- এভাবে বইল না প্লিজ। কষ্ট লাগে। আমি তোমাকে ভালবাসি। আমাকে আর এক বছর সময় দাও, আমি ঠিক ব্যবস্থা করে ফেলব একটা।
- তুমি এক বছরে তো বের হতেই পারবে না, পাস করে।
কিসের ব্যবস্থা করবে?
- করে নিব ঠিক। দরকার হলে সারাদিন টিউশনি করাব।
- টিচার আমার পছন্দ না।
- প্লিজ নিধি। একটু আব্বু আম্মুকে বলে বিয়েটা ভেঙ্গে দাও না।
- কেন ভাঙব? আমার বাবা মা ছেলেকে অনেক পছন্দ করেছে। তাছাড়া আমারও পছন্দ হয়েছে অনেক। এতো এতো টাকা তার।
- ওওও।
- কি হল?
- কিছু না।
আচ্ছা কর বিয়ে তাকেই। আমার সাথে দেখা করতে আসছ কেন?
- তুমি আমার একমাত্র ভালবাসার মানুষ। এতো বছর প্রেম করলাম। আর এই সুখবর দিতে আসব না?
- হ্যাঁ, ভাল। দেয়া হইছে।
যাও এখন।
- আর একটু বসে থাকি তোমার পাশে?
- বসে থেকে কি হবে?
- তাড়িয়ে দিচ্ছ?
- না।
- তবে?
- কিছুনা।
আশিক মুখ নিচু করে বসে আছে। নিধির সামনে।
বুকের ভিতর কেমন যেন লাগছে। এতদিনের ভালবাসার মানুষটা, অন্য কারও হয়ে যাবে। কেমন হাসি মুখে কথাগুলো বলল। এতদিনের ভালবাসা শুধু কি তাহলে আশিকের একারই ছিল?নিধি ভালবাসে নি? ভালবাসলে, এভাবে অন্যের জন্য বউ সেজে এসে, বিয়ের কথা হেসে হেসে বলতে পারত? পারত না। একদম না।
একদম ভালবাসে নি। কিন্তু আশিক ভালবাসে। এভাবে হারিয়ে যেতে আশিক দিবে না। আঁকড়ে ধরবে নিধিকে। জাপটে ধরে বলবে, তুমি শুধু আমার।
অন্য কারও জন্য বউ সাজতে পারবে না। তবে এই সাহসটুকু আশিকের নেই। এই হারিয়ে যাবার সময়টাতেও শুধু কষ্ট পেতে পারছে। চোখ ভিজাতে পারছে। নিধি এসে একটু পাশ ঘেঁষে বসল।
এখনও মুখটা হাসি হাসি। এই হাসিতে গা জ্বলে যাচ্ছে। আস্তে করে আশিকের আঙ্গুলের উপর নিধি আঙ্গুল রাখল। আশিক হাত সরিয়ে নিল। অন্যের বউ কেন, আশিককে ছুবে? নিধি চোখ বড় বড় করে বলল, বাব্বা।
আমার ভালবাসার মানুষটা দেখি, রাগও করতে পারে। খুব রাগ হচ্ছে আমার উপর? মারতে ইচ্ছা করছে। মার।
- রাগ করি নাই।
- তবে অভিমান করেছ?
- না তাও করি নাই।
- তবে কি করেছ ?
- কিছুই করি নাই ।
- ভালও বাস নাই?
আশিক থমকে গেল এই কথায়। কি বলবে? ভাল তো বাসেই। নিধি জানে। আবার নতুন করে শোনার কি?আশিক তাও বলল- হ্যাঁ বাসি।
নিধি হাসতে শুরু করল। শব্দ করে। লেকের পানির ভিতর সে শব্দ ঢেউ এর মত ছড়িয়ে পড়ছে। এতোটা হাসির কথা আশিক বলে নি। আশিককে নিয়ে সবসময় হাসে নিধি।
খুব কান্না পাচ্ছে আশিকের। কেঁদে দেয়া কি উচিৎ? কাঁদলে কি নিধি আশিকের হয়ে যাবে? হয়ত হবে না। নিধির হাসি থামছে না। হাসতে হাসতেই নিধি বলল, তুমি এতো বোকা কেন?
- কেন কি হইছে?
- বোকা না তো কি? আমি এতগুলো মিথ্যা বললাম, আর তুমি সবগুলো বিশ্বাস করে, চোখ ভিজিয়ে, মুখ ফুলিয়ে বসে আছ।
- মানে?
- মানে কিছুই না।
আমার বিয়ে টিয়ে কিছুই না। আরে গাধা, বিয়ের কথা হলেই কি মানুষ শাড়ি পরে বসে থাকে? আর আমার বিয়ে হলে আজ, তুমি আগে জানতে না? আর তোমার কাছে কেন বসে থাকব বিয়ে হলে?
- তাহলে লাল শাড়ি পরেছ কেন?
- পরতে মানা?
- না।
- তাহলে? আজ পহেলা ফাল্গুন। তাই পরলাম। তোমার জানার কথা না।
মেয়েরা এসব বেশি জানে।
- পহেলা ফাল্গুনে মেয়েরা হলুদ শাড়ি পরে।
- তাই? এতো জানো? আমি পরলাম লাল। কোন সমস্যা?
- না।
আশিকের ঠোঁটের কোণে, হঠাৎ করেই একটু খানি হাসি ফুটে উঠেছে।
নিধি বলেই যাচ্ছে, দেখো, বাবা মাকে সোজা বলে দিয়েছি। পড়াশুনা শেষের আগে, নো বিয়ে। আমার উপর আব্বু আম্মু জোর করবে না। অনেক ভয় পায় আমাকে। আর ততদিনে, তুমি একটা ব্যবস্থা করে ফেলবে।
আর বিয়ের কথা বললাম, আর তুমি মুখ ফুলিয়ে বসে রইলা। অধিকার খাটাতে পারলে না? আমার উপর কোন অধিকার নাই তোমার?
- আছে।
- তবে? ধরে রাখবে, হারিয়ে যেতে দিবে না। এরপর থেকে যেন ভুল না হয়।
- হবে না।
- আমার কবিতা কই?
- পকেটে।
- শুনাও। পকেটে রাখছ কেন?
আশিক একটা কাগজ বের করল, পকেট থেকে। গল্পের সাথে ইদানীং কবিতাও লেখে। যা খুশি ছন্দ মিলায়।
বের করেই পড়তে লাগল,
আমি হাসতে জানি, কাঁদতে জানি
তোকে বুকের মাঝে বাঁধতে জানি,
চলতে পারি ,বলতে পারি
তোর ভালবাসায় ভুলতে পারি ।
পাশে তুই থাকতে পারিস
দূরে দূরে রাখতে পারিস,
তাই বলে কি ভালবাসা
তিলে তিলে গলতে দেখিস ?
ছুঁয়ে ছুঁয়ে কাছে আসা
দুইয়ে দুইয়ে ভালবাসা,
এভাবে আর ওভাবে হোক
তোকে ঘিরেই স্বপ্ন আশা ।
নিধি কবিতা শুনছে আশিকের মুখে। আশিক বলা শেষ করেই, হঠাৎ করে নিধিকে জড়িয়ে ধরল।
- আমি তোমাকে ভালবাসি।
তোমাকে অন্য কারও হতে দিব না। তুমি শুধু আমার। অন্য কারও জন্য বউ সাজতে পারবে না।
নিধি চুপচাপ আশিকের স্পর্শ অনুভব করছে। বোকা ছেলেটা হঠাৎ করেই চালাক হয়ে গেছে।
নিজের অধিকার বুঝে নিতে চায়, আঁকড়ে ধরতে চায়। ভালবাসা আঁকড়ে ধরার টান না থাকলে, হয়ত একসময় হারিয়ে যায়। এই বোকা বোকা ছেলে, বা মেয়ে গুলোও ভালবেসে বড় স্বার্থপর হয়ে যায়। নিজের জিনিসের এক ফোঁটাও কাউকে দিতে চায় না। যারা হালকা করে দেয়, হয়ত তারা হারিয়ে যায়।
শাসন বা বিশ্বাস, আঁকড়ে ধরার টান না বা হারিয়ে ফেলার ভয়, মান অভিমান রাগ বা হেসে হাত ধরা,সবই ভালবাসা। এসব ছাড়া ভালবাসা অসম্পূর্ণ।
( লুতুপুতু লেখার ইচ্ছা ছিল। লুতুপুতুই লিখলাম। )
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।