১৪ জন শিক্ষক ও সংগঠকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া এই রিট আবেদন করেন।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্য কোর্স চালু ও বিভিন্ন ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে গত ২ ফেব্রুয়ারি ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি’ চলাকালে পুলিশের প্রকাশ্য গুলি চালানো কেন অবৈধে ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চেয়েছেন রিটকারীরা।
গুলি চালানোর আগে ও পরে কী কী আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে এবং কী কারণে গুলি চালানো হয়েছে- তার ব্যাখ্যাসহ হাই কোর্টে কেন প্রতিবেদন দিতে বলা হবে না- তাও জানাতে আদেশ চাওয়া হয়েছে।
স্বরাষ্ট্র সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, রাজশাহীর পুলিশ কমিশনার ও রাজশাহীর মতিহার থানার ওসিকে এই রিটে বিবাদি করা হয়েছে।
ওই ঘটনায় মতিহার থানার ওসির ভূমিকা ব্যাখ্যা করার জন্য তাকে আদালতে তলবেরও আর্জি জানিয়েছেন রিটকারীরা।
আবেদনে বলা হয়, গুলি ছুড়লে নিয়ম অনুযায়ী পুলিশকে দুটি প্রতিবেদন দিতে হয়। এর একটি সংক্ষিপ্ত, অন্যটি বিস্তারিত। দুই প্রতিবেদনই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানোর নিয়ম।
আবেদনকারীদের সন্দেহ, রাজশাহীর ঘনায় ওই ধরনের কোনো প্রতিবেদন পুলিশ দেয়নি।
রিট আবেদনে বলা হয়, “দেশের অন্য নাগরিকদের মতো পুলিশও আইন মানতে বাধ্য। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, সাধারণ মানুষকে আইন মানাতে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হলেও নিজেদের ক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কোমল। ”
পুলিশের এ ধরনের আচরণে সংবিধান লঙ্ঘিত হচ্ছে বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
“সংবিধানের ৩৭ অনুচ্ছেদ অনুসারে শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন কোনো অবস্থাতেই অবৈধ ছিল না।
সেদিন পুলিশের অস্ত্র ব্যবহার অকেবারেই অপ্রয়োজনীয় ছিল। ”
রিটের বাদি হিসাবে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আকমল হোসেন, নিজেরা করির সমন্বয়ক খুশী কবির, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক স্বপন আদনান, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক রফিক উল্লাহ খান, মেঘনা গুহঠাকুরতা, নারী অধিকার কর্মী শিপ্রা বোস, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক অধ্যাপক মানস কুমার চৌধুরী, স্বাধীন সেন, ফাহমিদুল হক, মোহাম্মদ তানজিমুদ্দিন খান মেহের নিগার, সামিনা লুৎফা নৃত্য ও অধিকারকর্মী অরূপ রাহী।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত ‘সাধারণ শিক্ষার্থীদের’ ওপর কেন পুলিশ গুলি চালিয়েছে- তা জানতে চেয়ে গত ১১ ফেব্রুয়ারি একই বিবাদিদের উকিল নোটিস দিয়েছিলেন জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
উকিল নোটিসে বলা হয়, “২ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় বিভিন্ন টেলিভিশনের ভিডিওতে আমরা দেখেছি, পুলিশ এবং কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী আধুনিক অস্ত্র দিয়ে গুলি করে সান্ধ্য কোর্স বাতিল ও টিউশন ফি কমানোর দাবিতে আন্দোলনরত অনেক শিক্ষার্থীকে আহত করে। পরের দিনের পত্রিকায়ও ওই ঘটনা এসেছে।
“গুলি করতে পুলিশকে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে আনুষ্ঠানিক আদেশ পেতে হয়। এর পূর্বে সমবেতদের বারবার সতর্ক করতে হয়। এটা করেছেন বলে আমার মক্কেলরা কোনো প্রমাণ পাননি। পুলিশ রেগুলেশন অনুসারে ঘটনার পর গুলি করার কারণ জানিয়ে একটি প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে পাঠাতে হয়, যাতে বুলেটের সংখ্যা ও হতাহতদের বিবরণও উল্লেখ করতে হয়। এ ধরনের কোনো প্রতিবেদনও পাঠানো হয়নি বলে আমার মক্কেলদের বিশ্বাস।
”
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সান্ধ্যকোর্স চালু ও ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কয়েকটি ছাত্র সংগঠনের আন্দোলনে গত ২ ফেব্রুয়ারি চড়াও হয় পুলিশ। পুলিশের লাঠিপেটা, টিয়ার শেল ও শটগানের গুলিতে আহত হয় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী।
ওই ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদেরও অস্ত্র হাতে আন্দোলনরতদের ওপর হামলা চালাতে দেখা যায়। এরপর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করে দেয়া হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।