পুরো স্টেডিয়াম তখন হাসছে। কোরাস গাইছেন হাজার বিশেক ক্রিকেটপ্রেমী। উৎসাহ দিচ্ছেন প্রিয় দল, প্রিয় ক্রিকেটারদের। এক সেসন শেষ হয়নি, ম্যাচের আগাম ফল বলাও কঠিন। তারপরও আগাম জয়োৎসব! কিন্তু কেন? ইলেকট্রনিক স্কোরবোর্ড শ্রীলঙ্কার নামের পাশে তখন লেখা ৭৪ রানে ৮ উইকেট।
উল্কার গতিতে ছুটতে থাকা মুশফিকবাহিনীর চাপে পিষ্ট দ্বীপরাষ্ট্র যে কোনো সময় শয়ের নিচে গুটিয়ে যেতে পারে। তাই এই আগাম জয়োৎসব!
প্রতিপক্ষের উপর যখন পুরোপুরি সওয়ার টাইগাররা, তখনই ক্যাচ দিলেন থিসারা পেরেরা। মিস করলেন সোহাগ গাজী। বল চলে গেল সীমানার উপর দিয়ে ছক্কা। এরপর আরও তিনবার ক্যাচ মিস করেছে টাইগাররা।
সুযোগগুলোকে পুরোপুরি কাজে লাগিয়ে দ্বীপরাষ্ট্র ১৮০ রান তুলে নিজেদের দাঁড় করায় লড়াইয়ের জায়গায়। তারপরও ম্যাচটি গ্রিপেই ছিল টাইগারদের। কিন্তু পারেনি। হেরে যায় ১৩ রানে। হার-জিতের স্বাভাবিক নিয়মে ভুলের খেসারত গোনা, ভয়ঙ্কর।
গত এক বছর যে টাইগারদের মনে হয়েছে দুর্দমনীয়, টি-২০ সিরিজ এবং প্রথম ওয়ানডেতে তাদেরই মনে হল ছন্নছাড়া। দেখে মনে হয়েছে কোথায় যেন থেমে গেছে তাদের সুরের ঝঙ্কার। ছিঁড়ে গেছে তাল-লয়-সুর। কোনোভাবেই মনে হয়নি এক সুতোয় গাঁথা মুশফিকরা!
টি-২০ সিরিজের প্রথম ম্যাচে শেষ বলে হেরেছিল এনামুল হক বিজয়ের ত্বরিত সিদ্ধান্তের অভাবে। দ্বিতীয় ম্যাচটিতেও হার শেষ বলে।
ওই হারের অদ্ভূত ব্যাখ্যা ছিল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজার। কুয়াশায় বল ভিজে নরম হয়ে যাওয়ার পরও ফরহাদ রেজাকে বাউন্সার মারার অদ্ভূত সিদ্ধান্ত, অবাক করেছে সবাইকে। পুড়িয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। অথচ দুটি ম্যাচেই জয়ের সম্ভাবনা ছিল টাইগারদের। কিন্তু হয়নি।
কেন? কোনো ব্যাখ্যা নেই টিম ম্যানেজমেন্টের। ব্যাখ্যা না দিলেও দলের আত্দবিশ্বাসে যে সূক্ষ্ম চিড় ধরেছে, সেটা কিন্তু একেবারে ভুল নয়। টি-২০ সিরিজের স্কোয়াড ঘোষণার সময়ও যে সন্দেহ দানা মেলেনি, মাশরাফিকে অধিনায়ক ঘোষণার পরই ছন্দহীন হয়ে পড়ে দল। সহ অধিনায়কের পদ ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে বিতর্ককে উস্কে দেন তামিম। ছেড়ে দেওয়ার ব্যাখ্যা দেন ব্যাটিংয়ে বাড়তি মনোযোগের কথা বলে।
কিন্তু পর্দার আড়ালে এমন কি হয়েছিল যে দুই ম্যাচেই গোছানো মনে হয়নি দলকে।
ঘাড়ের ব্যথা থাকার পরও ম্যানেজমেন্ট শুধুমাত্র বিতর্ককে ধামাচাপা দিতেই খেলিয়েছিলেন তামিমকে। মাঠে আনফিট মনে হয়নি তামিমকে। কিন্তু প্রথম ওয়ানডের আগে আবারও ঘাড় ব্যথা চাড়া দেয় ড্যাসিং ওপেনারের। আর তাতে খেলেননি তামিম।
আবারও চাড়া দিয়ে ওঠে বিতর্ক। আর এতেই সন্দেহটা আরও বেশি গভীরতা পায়।
প্রথম টেস্টে ইনিংস হার। এরপর দ্বিতীয়টিতে ঘুরে দাঁড়িয়ে ড্র। সেই দলে সূক্ষ্ম চিড়ের সন্ধান করা অতিশয়োক্তি।
কোনো সন্দেহ নেই। তারপরও শারীরিক ভাষায়ও যেন কমতি ছিল কিসের। টি-২০ সিরিজে মাশরাফির অধিনায়কত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। প্রথম ম্যাচে এক ওভার থাকার পরও আরাফাত সানিকে দিয়ে বল না করানোর কোনো ব্যাখ্যা খুঁজে পাননি কেউ। দ্বিতীয় ম্যাচেও আরাফাত ও সাকিবের দুই-দুই চার ওভার থাকার পরও শেষ ওভারে ফরহাদকে বোলিং করানো অদ্ভূতুরে লেগেছে ক্রিকেট বিশ্লেষকদের।
প্রথম ওয়ানডের একাদশও জন্ম দিয়েছে বিস্ময়ের। তামিম ছাড়াও নেওয়া হয়নি মাশরাফিকে। না নেওয়ার কোনো ব্যাখ্যাও দেয়নি ম্যানেজমেন্ট। এছাড়া মিডল অর্ডারে নাঈম ইসলামকে না খেলানোরও কারণ খুঁেজ পাননি বিশ্লেষকরা। অথচ গত অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দুটি হাফসেঞ্চুরি করেছিলেন নাঈম।
তার জায়গায় খেলানো হয় মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে। কিসের জোরে খেললেন মাহমুদুল্লাহ?
টি-২০ সিরিজ এবং প্রথম ওয়ানডেতে লড়াই করলেও শেষ পর্যন্ত একটা কিন্তু রয়েই যাচ্ছে। সেটা আড়াল করতে কি টিম ম্যানেজমেন্ট আলাদা কোনো কিছু ভাবছেন?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।