** মায়ানমারে রাখাইন তরুণী ধর্ষিত হলো, এর বদলা নিতে রাখাইনদের হামলায় হাজার-হাজার রোহিঙ্গা দেশত্যাগ করতে বাধ্য হলো
- বাংলাদেশের মানবতাবাদীরা গোঁফে তা দিতে দিতে বললো, শালা রোহিঙ্গা খাটাশগুলোকে তো জ্যান্ত পুড়িয়ে মারা উচিৎ ছিল। শুধু যে দেশ থেকে ভাগিয়ে দিয়েছে তা তো অনেক কম শাস্তি!!!
** গত মাসে ঢাকায় নিজ কর্মস্থলে ধর্ষণের পর খুন হয়েছেন ডাঃ সাজিয়া।
- কোন পত্রিকায় এ খবর পেলাম না।
** কোন এক প্রত্যন্ত অঞ্চলে মারমা তরুণী ধর্ষিত।
- কোন পত্রিকায় এ খবর পেলাম না।
** প্রায়ই দেখি পত্রিকায় ৫-৭বছরের শিশু ধর্ষিত।
- আমাদের কারো কোন বিকার নেই এ ব্যাপারে। পত্রিকার পাতা উল্টে খেলার পাতায় কিংবা নকশা, রস-আলো বা বিনোদন পাতায় চলে গেলাম।
** নয়াদিল্লীতে তরুণী ধর্ষিত হল
- বাংলাদেশের ফেসবুক পেজগুলো আর হুজুগে আমজনতার নিউজফিড ভরে গেল ধর্ষকদের ফাঁসি চেয়ে পিটিশনে সাইন করার জন্য ও ধর্ষণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রাখার আহবানে (যেন বাংলাদেশে বসে পিটিশন সাইন করলে ভারতের আইন পাল্টে যাবে, আমরা যেন ভারতেরই অংশ!!!)
ইচ্ছা করে ধর্ষক পিশাচ কাপুরুষ জানোয়ারগুলোকে ধরে দেহ থেকে মাথা টেনে আলাদা করে ফেলি। কিন্তু এগুলো নিয়ে একটু পরেই সব ভুলে যাই ক্লাস-পরীক্ষা-এসাইনমেন্টের ফাঁকে।
কিন্তু মিডিয়া কাভারেজ পাওয়া দেশের বাইরের কোন ঘটনার ছুতো পেলেই সবাই নড়েচড়ে বসি। হাত নিশপিশ করতে থাকে কখন বাসায় গিয়ে পিসিতে বসবো, মর্মস্পর্শী স্ট্যাটাস আপডেট দিয়ে লাইকের বন্যায় নিজের প্রোফাইল ভাসিয়ে দিব। আর ব্লগের হিট বাড়াইতে পারলে তো পোয়াবারো!!! আর যারা লাইক-হিটের মানসিকতা থেকে না, বরং নিষ্পাপ মর্মযাতনা থেকেই আশেপাশের সবার সাথে ব্যাপারগুলো শেয়ার করা উচিৎ মনে করে, তাদেরও অনেকেই একটা দেশী মেয়ের সম্ভ্রমের তুলনায় ভিনদেশী একটা মেয়ের সম্ভ্রম হানিকেই বেশি মর্মন্তুদ মনে হয়। এর পিছনে আসলে কি সাইকোলজি কাজ করে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা নাই। হয়তো ছোটবেলা থেকেই আমাদের মাথায় ঢুকে গেছে দেশী ‘জিনিস’ এর চেয়ে বিদেশী ‘জিনিস’ এর দাম বেশি।
হ্যাঁ, অনেক শিক্ষিত হওয়ার পরও, অনেক দামী দামী ডিগ্রী বগলে নিয়েও আমরা হয়তো আজও মেয়েদের নিজের মা/ বোন/ কন্যা মনে না করে জাস্ট একটা ‘পণ্য’ মনে করি। আর মনে করব না কেন? আশেপাশের বেশিরভাগ মেয়েকেই দেখি শিক্ষিত হয়েও নিজেদের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতায় নেমেছে ‘পণ্য’ হওয়ার দৌড়ে। মেধা-মনন-বুদ্ধি-বিবেচনার চেয়ে বাহ্যিক সৌন্দর্য্যের দামটাই বেশি আশেপাশে। শুধু মেয়েরা না, অনেক ছেলেও দেখি ইদানীং এই কিসিমের। অনেকেই বলবেন এর পিছনে দায়ী মিডিয়ার প্রভাব, আকাশ-সংস্কৃতি হাবিজাবি।
আমি বলবো যে নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা ব্যবহার করে চলেনা, তাকে মিডিয়া কেন, রাস্তার ফকিরও চান্স পাইলে ইউজ করে নেয়। অনেকেই বলবেন যে যার মত ইচ্ছা পোশাক পড়ুক, লম্পটদের লাম্পট্যই এসব ধর্ষণের পিছনে দায়ী, মেয়েদের উগ্র পোশাক এর জন্য কোনভাবেই দায়ী না। আমি বলবো এক হাতে কখনো তালি বাজে না। কিছু সাইকো যেমন সব সমাজে আছে, কিছু নিম্ফোও আছে। তবে দিনকে দিন এইরকম সাইকোপ্যাথ আর নিম্ফোম্যানিয়াকদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ার পিছনে মিডিয়ার যে হাত নাই- এটা কেউই অস্বীকার করতে পারবেনা।
ছেলেদের যেমন নিজের পশুত্ব নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী, ঠিক ততটাই জরুরী মেয়েরা নিজেদের মর্যাদা নিজেরা রক্ষার ব্যবস্থা করা। এর পিছনেও পালটা যুক্তি দেখাতে পারেন অনেক হিজাব-বোরকা পড়া মেয়েও তো ধর্ষণের শিকার হয়। সেক্ষেত্রে আমার সেসব বোনদের কাছে একজন পুরুষ হিসাবে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করা ছাড়া আর কিছুই করার নেই। কারণ আমরা ব্যর্থ হয়েছি কিছু সোশ্যাল সাইকোপ্যাথকে আটকাতে।
আমার দৃষ্টিতে ধর্ষণ হত্যার চেয়েও জঘন্য অপরাধ।
এরকম ঘটনা পৃথিবীর যে প্রান্তে যে অবস্থাতেই হোক না কেন, সমানভাবে ঘৃণা এবং প্রতিবাদ করা উচিৎ। তোমার যদি আসলেই খারাপ লাগে দিল্লির ওই মেয়েটার জন্য, প্রতিবাদ করতে ইচ্ছা হয় ওই গণধর্ষণের, তাহলে নিজেকে একবার প্রশ্ন করে দেখ ডাঃ সাজিয়ার ঘটনাটার পর তুমি কি করেছিলে? সেই ঘটনাটা কিন্তু তোমার দেশের মাটিতেই ঘটেছিল। যে অন্যায়ের প্রতিবাদ তুমি নিজে করতে পারো না, সে অন্যায়ের উপর ক্ষোভ নিজের কিবোর্ডের উপর ঝেড়ে কোন লাভ নাই। এই মুহূর্তে অর্থহীনভাবে সামু গরম করে দামিনীকে ফিরিয়ে আনতে পারবেন না। বরং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন নিজের দেশে ধর্ষণ প্রতিরোধ করতে আপনি নিজে কি ভূমিকা রেখেছেন সমাজে? যদি নিজের বিবেকের কাছে কোন উত্তর খুঁজে না পান, তবে দয়া করে এইবেলা অফ যান এবং এমন কিছু করুন যা আসলেই এরকম জঘন্য অপরাধ বন্ধে কাজে দিবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।