সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টির বিএনপির প্রতি দুর্বল নেতারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে না থাকার পক্ষে ছিলেন। এরশাদও বিভিন্ন সভা-সমাবেশে আওয়ামী লীগের কঠোর সমালোচনা করে আসছিলেন। সোমবার সর্বদলীয় সরকারে যোগ দেওয়ার এক দিন আগেও নেতা-কর্মীদের বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাবেন না। এক দিন পরই সাবেক এই রাষ্ট্রপতি কেন সর্বদলীয় সরকারে গেলেন- এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সর্বদলীয় সরকারের মন্ত্রী জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সোমবার জাতীয় পার্টি বঙ্গভবনে গেল। এরই সূত্র ধরে বিএনপি মঙ্গলবার গেল। জনমনে কিছুটা হলেও আশার আলো সৃষ্টি হয়েছে। এভাবেই চূড়ান্ত বরফ গলবে। সর্বদলীয় সরকারে যাওয়ার বিষয়ে আওয়ামী লীগের চাপ ছিল কি না- জানতে চাইলে তিনি জানান এ বিষয়ে অন্য আরেক দিন বিশদভাবে আলোচনা করবেন। রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে যে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে এ অবস্থায় পার্টির চেয়ারম্যান বিবেচনা করেছেন জাতীয় নেতা হিসেবে তিনি নীরব থাকতে পারেন না। এ জন্যই জাতীয় পার্টি সর্বদলীয় সরকারের যোগ দিয়েছে। তিনি বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সরকার সততা ও আন্তরিকতার প্রমাণ দিতে সক্ষম হবে।
প্রেসিডিয়াম সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতিতে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্যই এরশাদ সর্বদলীয় সরকারে যোগ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ যেন এককভাবে ক্ষমতায় আসতে না পারে সে জন্যই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি না হলে নির্বাচন বয়কট করবে জাতীয় পার্টি। জাতীয় পার্টি মনে করে ক্ষমতা হস্তান্তরের একমাত্র পদ্ধতি নির্বাচন।
জানা যায়, মহাজোট ছাড়ার ব্যাপারে পার্টির বড় একটি অংশের চাপ ছিল এরশাদের ওপর। সে জন্য পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর আহমদকে বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগ রাখার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। বছরখানেক আগে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে এরশাদের কথাও হয়েছিল। এরশাদ জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে মৌখিক সম্মতি দিয়েছিলেন, দাবি ছিল ৭০টি আসনের। খালেদা জিয়া তাকে আসনসংখ্যা নিয়ে চিন্তা না করতে বলেছিলেন। প্রথম দিকে জাতীয় পার্টির চিন্তা ছিল বিএনপির সঙ্গে জোট নয় তো তৃতীয় একটি ফ্রন্ট গঠন। দুই দিকেই কথাবার্তা এগোচ্ছিল। মাসখানেক আগেও জানিয়েছেন বিএনপি জাতীয় পার্টিকে ৫০টি আসন দেবে। চেষ্টা করলে আরও পাঁচটি আসন হয়তো পাওয়া যাবে। সম্প্রতি হেফাজত আমির শাহ আহমদ শফীর সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার আগে এরশাদকে জানানো হয় বিএনপি জাতীয় পার্টিকে ৩০টি আসন দেবে। আসনসংখ্যা কমে গেছে দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এরশাদ। পাশাপাশি কাজী জাফর আহমদ সম্প্রতি অসুস্থ হওয়ায় বিএনপির সঙ্গে জাতীয় পার্টির যোগাযোগ কিছুটা শিথিল হয়ে পড়ে। সুযোগটি কাজে লাগান জাতীয় পার্টির আওয়ামীপন্থি প্রেসিডিয়াম সদস্যরা।
জানতে চাইলে পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য আহসান হাবিব লিংকন বাংলাদেশ প্রতিদেনকে জানান, স্যার (এরশাদ) একক নির্বাচনের কথা তিন বছর আগে থেকেই বলে আসছিলেন। এ ছাড়া কোনো তত্ত্বাবধায়ক সরকার জাতীয় পার্টির প্রতি সুবিচার করেনি। জাতীয় পার্টি চরম দুঃসময়েও নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির প্রতি বিভিন্ন সময়ে দলগুলো অবিচার করেছে। সে অবিচারের জবাব দেওয়ার জন্যই একক নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি দাবি করেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে আওয়ামী লীগ কোনো চাপ দিয়ে পার্টিকে সর্বদলীয় সরকারে নেয়নি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।