অজ্ঞ সমর্থকের চেয়ে বিজ্ঞ প্রতিপক্ষ ভাল।
ইসলামী পন্ডিত’রা বলে থাকেন, যে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার বিধান পবিত্র কোরআন কখনো সত্য থেকে দূরে সরে যায় নি। পবিত্র কোরআন কোনো কবির মত বলে না, যে আমি তোমাকে আকাশের চাঁদ এনে দেব। তা বাস্তুসংস্থানকে অগ্রাহ্য করে ঘোষণা দেয় না, যে জীব হত্যা করা যাবে না।
পবিত্র কোরআনের এই অবস্থানকে কেউ নিষ্ঠুরতা বলে উল্লেখ করতেই পারেন।
তবে, সেই নিষ্ঠুরতা মূলত এক নিষ্ঠুর বাস্তবতাকে মোকাবেলা করার সমাধান নির্দেশ করে।
দাসত্ববিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন অ্যান্টি-স্ল্যাভেরি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে। এই সংখ্যা ইতিহাসের যেকোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি এমন কী প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় নিয়ে আসা দাসের মোট সংখ্যার প্রায় দ্বিগুন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জোরপূর্বক শ্রম দেয়াকে দাসত্ব ধরে না।
তবে, তাঁদের হিসাব অনুযায়ী এখনো বিশ্বের ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী।
Slavery বা Thralldom বা দাসত্ব যাই বলা হোক না কেন, এর মানে হল কোনো মানুষকে জোর পূর্বক শ্রম দিতে বাধ্য করা। সাধারণত দাসকে তাঁর মনিবের অস্থাবন সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়। এক্ষেত্রে কাউকে তাঁর ইচ্ছার পরিবর্তেও দাস করা যেতে পারে। এটি হতে পারে তাঁর আটক, জন্ম, ক্রয় করা সময় থেকে।
দাসদের স্থান বা মালিককে ত্যাগ করা, কাজ না করার বা শ্রমের মজুরী পাবার অধিকার নেই।
পবিত্র কোরআনে সূরা নাহলে বলা হয়েছে (৭১) আল্লাহ’তায়ালা তোমাদের কারো ওপর রিযিকের ব্যপারে প্রাধান্য দিয়েছেন। অতঃপর যাঁদের শ্রেষ্টত্ব দিয়ে রেখেছেন, তাঁরা তাঁদের অধীনস্ত দাস-দাসীদের নিজেদের সামগ্রী থেকে কিছুই দিতে চায় না। (তাঁদের আশংকা হচ্ছে এমনটি কররে) এ ব্যপারে তাঁরা উভয়ই সমান (পর্যায়ের) হবে। তবে, কী এঁরা আল্লাহর নেয়ামত অস্বীকার করে?
এই আয়াতের ভিত্তিতে এটা বলা যায় না, যে পবিত্র কোরআন দাসত্বকে সমর্থন করছে।
বরং এটা বলা যায়, যে পবিত্র কোরআন দাসত্বের অস্থিত্বকে অস্বীকার করছে না।
সামগ্রীকভাবে ইসলাম দাস-দাসীকে মানুষের অধিকার প্রদানে উৎসাহ দেয়। এবং তা মানুষকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করাকে উত্তম কাজ বলে মনে করে।
সহীহ বোখারী শরীফে বলা হয়েছে (২৩৫১) আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোনো মুসলমানকে দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করবে, তাঁর প্রতিটি অঙ্গের বিনিময়ে আল্লাহ তাঁর প্রতিটি অঙ্গকে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা করবেন [দ্রঃ এ সংক্রান্ত হাদিস সমূহ দেখার জন্য সহীহ বোখারী ২৩৭৬, ২৩৫৩, ২৩৫৪, ২৩৫২]।
সহীহ মুসলিম শরীফে বলা হয়েছে (৪১৬৯) রাসূল (সাঃ) বলেন, হে আবু যর।
তোমাদের মধ্যে বর্বর যুগের ভাবধারা রয়ে গেছে। তাঁরা (দাস) তোমাদের ভাই। আল্লাহ পাক তাঁদের তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন। তোমরা যা খাবে, তাঁদেরকে তাই খেতে দেবে। তোমরা যে বস্ত্র পরবে, তাঁদেরকেও তাই পরতে দেবে।
তোমরা তাঁদের ওপর এমন কোনো কাজের বোঝা চাপাবে না, যা বহন করতে তাঁরা অপারগ হয়। যদি তোমাদের দেয়া কোনো কাজ করতে তাঁরা অসমর্থ হয়, তাহলে তোমরা তাঁদের কাজে সাহায্য করবে।
সহীহ বোখারী শরীফে বলা হয়েছে (২৩৮৪) আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, তোমাদের কেউ যেন না বলে, তোমার প্রভুকে আহার করাও, তোমার প্রভুকে পান করাও। আর যেন অধিকার ভূক্তরা এরূপ না বলে, আমার মনিব, আমার অভিভাবক। তোমাদের কেউ যেন এরূপ না বলে, আমার দাস, আমার দাসী।
বরং বলবে, আমার বালক, আমার বালিকা, আমার খাদিম।
সহীহ মুসলিম শরীফের অপর এক হাদিসে বলা হয়েছে (৪১৫৪) ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি তাঁর ক্রীতদাসকে চড় মারল কিংবা প্রহার করল, তার কাফফারা তাঁকে মুক্ত করে দেয়া।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।