নওগাঁ-জয়পুরহাট সীমান্তে তিলকপুর এলাকার একটি কারখানার বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি পাশর্্ববর্তী খালে মিশে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণ সৃষ্টি করছে। পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে খালপাড়ের ২৫ গ্রামের ৬০ হাজার মানুষ। ওই খালের পানি ব্যবহার করায় মারা যাচ্ছে ওইসব গ্রামের মানুষের হাঁস-মুরগি। নষ্ট হচ্ছে ফসল। রেহাই পাচ্ছে না খালের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। তিলকপুর থেকে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই খাল জয়পুরহাট হয়ে বগুড়ার রক্তদহ বিলে পড়ছে।
জানা গেছে, আট বছর আগে দেশের একমাত্র আলুর স্টার্চ (পাউডার) উৎপাদনকারী কারখানা 'ফ্লামিংগো' তিলকপুরে স্থাপন করেন নওগাঁ ও ঢাকার কয়েকজন শিল্পপতি। কারখানাটি চালুর বছর খালে আলুর বর্জ্য ও বিষাক্ত পানি মিশে মারা গেছে কয়েক গ্রামের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি। পরে গ্রামবাসীর প্রতিবাদের মুখে কারখানাটি সাময়িক বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ। সে সময় ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরির পর কারখানা চালুর প্রতিশ্রুতি দেন তারা। কিন্তু তা তৈরি না করেই সাত বছর ধরে চলছে কারখানার উৎপাদন। অব্যাহত রয়েছে বর্জ্য ও দূষিত পানি খালে ফেলা। ফলে পানি দূষিত হয়ে ঘটছে পরিবেশ বিপর্যয়। সরেজমিন দেখা গেছে, কারখানা থেকে বগুড়ার আদমদীঘির রক্তদহ বিল পর্যন্ত খালে বর্জ্য মিশে পানি পচে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। উৎকট গন্ধে খালপাড়ের বাড়িঘরে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। হাজার হাজার মানুষ শিকার হচ্ছে ভয়াবহ পরিবেশ দূষণের। খালের বিষাক্ত পানি পান করে মারা যাচ্ছে ওইসব গ্রামের হাঁস, মুরগি এমনকি কবুতরও। তবে 'ফ্লামিংগো' কারখানার প্রকল্প প্রকৌশলী মোস্তাকিন রহমান বলেন, বর্জ্য খালে নয়, কারখানার পুকুরেই ফেলা হচ্ছে। তবে আলু পরিষ্কার করার পানি খালে যেতে পারে।
স্থানীয় মুক্তার আলী বলেন, খালের পানি ব্যবহার করে গত কয়েকদিনে তাদের গ্রামের ৮-১০টি হাঁস-মুরগি ও কয়েকজন কৃষকের বেগুন, মরিচ ও আলু গাছ মরে গেছে। শিক্ষক লুৎফর রহমান বলেন, খরা মৌসুমে নলকূপে পানি না ওঠায় গ্রামবাসী খালের পানি গোসলসহ অন্য কাজে ব্যবহার করেন। এ বিষাক্ত পানি ব্যবহারে অনেকে চর্মসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা যাচ্ছে খাল ও বিলের মাছ। নওগাঁ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেন, 'কারখানাটি নওগাঁয় নয় জয়পুরহাট সীমানায়। তবে কারখানার বর্জ্য নওগাঁ, জয়পুরহাট ও বগুড়ায় ছড়িয়ে পড়ছে। আমি মৌখিকভাবে অভিযোগ পেয়েছি।' আদমদীঘি উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিবেশ অধিদফতর রাজশাহী বিভাগীয় পরিচালক আলী রেজা মজিদ বলেন, এ বিষয়ে তার দফতরে অভিযোগ এসেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষকে সাত দিনের সময় দিয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।