উপজেলা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপেও প্রধান দুই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এ নিয়ে চরম অস্বস্তিতে দুই দলই। শেষ চেষ্টা চালিয়েও বিদ্রোহী প্রার্থী দমাতে পারেননি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। এদিকে জয়-পরাজয় নিয়ে দুই দলে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। আওয়ামী লীগ সদ্যসমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনের হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারে মরিয়া। অন্যদিকে বিএনপির টার্গেট জয়ের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। উৎসবের পাশাপাশি নানা শঙ্কা নিয়ে ১১৫টি উপজেলায় ভোট হচ্ছে আজ। প্রথম ধাপে দুই দলই অর্ধশতাধিক নেতা বহিষ্কার করলেও দ্বিতীয় দফায় তা দশের নিচে নামিয়ে এনেছে। অনেক প্রার্থীকে বুঝিয়ে বসাতেও সক্ষম হয়েছে তারা। এর পরও দুই দলের অন্তত অর্ধশত উপজেলায় বিদ্রোহী প্রার্থীর ছড়াছড়ি। এদিকে দ্বিতীয় ধাপেও ত্রিমুখী সংকটে বিএনপি। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কার পাশাপাশি জামায়াত ও দলের বিদ্রোহী প্রার্থী নিয়ে বাড়তি টেনশন কাজ করছে দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করাই আমাদের প্রধান কাজ। সেটি সরকার করতে পেরেছে। ভোটারদের উপস্থিতির মাধ্যমে ভোট উৎসব শুরু হয়েছে। জনগণ যাকে খুশি তাকেই ভোট দিতে পারছে।' দলে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। যারাই দল করেন তাদেরই আশা থাকে দলের সমর্থন পাবেন। তবে প্রথম দফা নির্বাচনের চেয়ে এবার বিদ্রোহী প্রার্থী অনেক কম বলে দাবি করে তিনি বলেন, 'আগামীকালের (আজ) নির্বাচনে আমাদের দল-সমর্থিত বেশিসংখ্যক প্রার্থী জয়লাভ করবেন।' অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'কারচুপিসহ সরকারের নানা বাধা সত্ত্বেও প্রথম ধাপে উপজেলার ট্রেনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৯-দলীয় জোটের প্রার্থীরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছেন। এখন দ্বিতীয় ধাপেও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন স্থানে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের ওপর হামলাসহ নানাভাবে হয়রানি করছে। আশা করি সামনের সব নির্বাচনেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিজয়ী হবেন। কারণ জনগণ আমাদের সঙ্গে রয়েছে।' আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিজ জেলা গোপালগঞ্জের সদরে তিনজন ও কোটালীপাড়ায় সাতজন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী। সেখানে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কাউকেই সমর্থন দেয়নি দল। গোপালগঞ্জ সদরে আওয়ামী লীগের তিন প্রার্থী হলেন শেখ লুৎফর রহমান বাচ্চু, এস এম শাহ আলম ও সুবাদ বিশ্বাস। সেখানে জাসদ নেতা মাহমুদ হোসেন বিপুও চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। কোটালীপাড়ায় মজিবুর রহমান হাওলাদার, বর্তমান চেয়ারম্যান বিমল কুমার বিশ্বাস, অ্যাডভোকেট নিখিল চন্দ্র দত্ত, মুন্সি এবাদুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সুবাস জয়ধর ও প্রভাষক পুলক বিশ্বাস আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছেন। একই অবস্থা বিরাজ করছে বিএনপিতেও। লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলায় বিএনপির প্রার্থী চারজন। তারা হলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোশারফ হোসেন, বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম বাবু, শাহেদুজ্জামান কোয়েল ও শফিকুল ইসলাম মিলন। পাটগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দুজন। বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বাবুল এবং উপজেলার সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়াসের উদ্দিন শাহীন। চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জেও বিএনপির প্রার্থী চারজন। এরা হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি শরীফ মো. ইউনূস, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি দুলাল পাটোয়ারী, বিএনপি নেতা হাজী মোজাম্মেল এবং এম এ হান্নান। আওয়ামী লীগেও একাধিক প্রার্থী। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ সরকার ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল বারী মিয়াজী। ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মনিরুজ্জামান সরদার। সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জাকির হোসেন নিলু। সালথায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেলোয়ার হোসেন ও বিদ্রোহী চৌধুরী সাবি্বর আহমেদ। মাদারীপুরে রাজৈর উপজেলায় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান খান ও বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আল-আলীম মোল্লা। যশোরের ঝিকরগাছায় আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী। এরা হলেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মনিরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগের উপজেলার সদস্য মূসা মাহমুদ। শার্শায় আওয়ামী লীগের দুই প্রার্থী হলেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল মান্নান মিন্নু ও শার্শা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বহিষ্কৃত সিরাজুল ইসলাম মঞ্জু।
ফরিদপুরের নগরকান্দায় বিএনপির প্রার্থী সৈয়দ শাহীনুজ্জামান। বিদ্রোহী প্রার্থী কে এম জাহাঙ্গীর আলম ও অ্যাডভোকেট লিয়াকত আলী খান ভুলু। সালথায় মো. ওহিদুজ্জামান ও বিদ্রোহী আতিয়ার কবির। যশোরের চৌগাছায় বিএনপির জহুরুল ইসলাম ও বিদ্রোহী খাইরুজ্জামান মধু। সিলেটের বালাগঞ্জে বিএনপির প্রার্থী আফজাল মিয়া ও বিদ্রোহী প্রার্থী জামায়াত নেতা সাজিদ মোহাম্মদ। রাজশাহীর বাঘা উপজেলায় বিএনপির তিন প্রার্থী হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন, উপজেলা যুবদল সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন, বিএনপি নেতা আবদুল গনি মণ্ডল। অন্যদিকে এখানে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী হচ্ছেন আজিজুল আলম। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় বিএনপির দুই প্রার্থী। এদের একজন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. রেজাউল করীম শাহীন, অন্যজন বহিষ্কৃত নেতা মুক্তারুল হক মুকু। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন বর্তমান চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ঠাকুর, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক জয়নাল উদ্দিন ও আওয়ামী লীগ নেতা অ্যাডভোকেট মুখলেছুর রহমান। সেখানে বিএনপি সমর্থিত অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান ও জামায়াত সমর্থিত মাওলানা কুতুবদ্দীন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দিনাজপুরের চার উপজেলায় প্রধান দুই দলের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। বীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী উপজেলা সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মফিজউদ্দীন আহম্মেদ ও অন্যজন দলীয় নেতা রেজওয়ানুল ইসলাম রিজু। আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাবেক এমপি আমিনুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আখতারুল ইসলাম চৌধুরী বাবুল। তবে জামায়াত সমর্থিত ইউপি চেয়ারম্যান ডা. কে এম কুতুবউদ্দীন একক প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এ ছাড়া ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদেও সেখানে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। এরা হলেন গোপাল দেব শর্মা, দবীর উদ্দীন আহমেদ ও লিমন সরকার। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী। এরা হলেন শাহনাজ পারভীন ও লীলা রায় ও অনীতা রায়। বিএনপির একমাত্র প্রার্থী সেলিনা আকতার। ঘোড়াঘাট উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী। তারা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুর রাফে খন্দকার শাহানশা ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কাজী শুভ রহমান চৌধুরী। বিএনপির দুই প্রার্থী হলেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহ মো. শামীম হোসেন চৌধুরী এবং উপজেলার খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান মুক্তি পরিষদের সভাপতি মাসুদুর রহমান মাসুদ। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক জেলা সাম্যবাদী দলের আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দিনও প্রার্থী হয়েছেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১৯-দলীয় জোটের তিনজন প্রার্থী। এরা হলেন উপজেলা যুবদল সভাপতি শরীফ উদ্দিন, পৌর যুবদল সভাপতি ফরিদ আলম ও জামায়াতের উপজেলা আমির আলমগীর হোসেন। জাতীয় পার্টির উপজেলা আহ্বায়ক সেদাদুল হক পলাশ ও কাজী আবু সায়াদ আহম্মেদ চৌধুরী একই পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করছেন উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী মাজেদা বেগম ও রুসিনা সরেন। বিরামপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পারভেজ কবির ও লিয়াকত হোসেন টুটুল নির্বাচন করছেন। এ ছাড়া বিএনপির দুজন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক দবিরুল ইসলাম মটর ও মঞ্জুর এলাহী রুবেল চৌধুরী এবং জামায়াতের মো. এনামুল। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপির অ্যাডভোকেট মঞ্জুর রশিদ রতন ও দেলোয়ার হোসেন মোল্লা, আওয়ামী লীগের মনসুর আলম ও সিরাজুল হোসেন এবং জামায়াতের মোকছেদ আলী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গাজীপুরের শ্রীপুরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তিনজন। তারা হলেন শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল জলিল, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইকবাল হোসেন সবুজ ও মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিন খন্দকার। উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল মোতালেব ১৯-দলীয় জোট সমর্থিত একক প্রার্থী। নওগাঁর বদলগাছীতে আওয়ামী লীগের আবু জাফর মো. শফি মাহমুদ। বিদ্রোহী প্রার্থী এসকেন্দার মির্জা, মতিউর রহমান ও শামসুল আলম খান। বিএনপির মোস্তফা অলি আহমেদ রুমি চৌধুরী, বিদ্রোহী ফজলে কাদের ও মীর মহীউদ্দিন আলমগীর। পত্নীতলায় আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী আলহাজ আবদুল গাফফার। বিএনপির আনিছুর রহমান শেখ আবদুল হামিদ। বিদ্রোহী প্রার্থী ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের আব্বাছ আলী। নিয়ামতপুরে আওয়ামী লীগের আলহাজ এনামুল হক একক প্রার্থী থাকলেও বিএনপির আলহাজ ছাদরুল আমিন চৌধুরীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন জামায়াতের আলহাজ সালেকুর রহমান। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতা জুনায়েদ আহমেদ। সেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আবু সুফিয়ান ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মণীশ কান্তি দে মিন্টু।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।