বাংলাদেশের সঙ্গে সমন্বিত নিরাপত্তা চুক্তি করতে আগ্রহী মধ্যপ্রাচ্যের দেশ আরব আমিরাত। বাংলাদেশিদের জন্য প্রায় সব ধরনের ভিসা বন্ধ রাখার পর দুটি চুক্তি স্বাক্ষরের প্রস্তাব পাঠিয়েছে বাংলাদেশের অন্যতম বড় এই শ্রমবাজারের দেশটি। নিরাপত্তার পাশাপাশি অন্য প্রস্তাবিত চুক্তিটি হলো সাজাপ্রাপ্ত আসামি বিনিময়। দুবাইয়ের এ প্রস্তাব ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এসেছে বেশ কিছুদিন হলো। এখন ঢাকার কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে প্রস্তুতি নিচ্ছেন। করা হয়েছে আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠক। শীঘ্রই আমিরাত সফরেও যাবেন পররাষ্ট্র, প্রবাসী কল্যাণ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
জানা যায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রায় ১০ লাখ বাংলাদেশি অবস্থান করছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে প্রায় দুই লাখ বাংলাদেশি সেখানে কাজের জন্য গেছেন। কিন্তু ২০১২ সালের আগস্টে বাংলাদেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থান ভিসা প্রায় বন্ধ করে দেয় আমিরাত। এরপর গত বছরের নভেম্বরে বন্ধ হয়ে যায় ব্যবসায়ী ও পর্যটকদের ভিসা। শ্রমিক, পর্যটন ও ব্যবসায়িক ভিসার পর জানুয়ারির শেষ সপ্তাহে ট্রানজিট ভিসাও প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে। ট্রানজিট ভিসায় গিয়ে আমিরাতে অবস্থান করা বন্ধ করতেই এই কঠোরতা। নারী শ্রমিকদের ভিসার পাশাপাশি শুধু ঢাকার আমিরাত দূতাবাসের সম্মতিতে স্বল্প পরিমাণে দেওয়া হচ্ছে ট্রানজিট ভিসা। জনশক্তি রপ্তানিকারকদের মতে, ওয়ার্ল্ড এঙ্পো-২০২০ এর ভোটদানের ক্ষেত্রে সরকারের কূটনৈতিক পদক্ষেপের দুর্বলতার কারণে এটা হয়েছে। কিন্তু কূটনীতিক ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ভিসা বন্ধের মূল কারণ খুন, চুরি-ডাকাতি, চোরাচালান, মারামারি, জুয়া, মানব পাচার, যৌন ব্যবসাসহ নানা ধরনের অপরাধে ব্যাপকহারে বাংলাদেশিদের জড়িয়ে পড়া।
দূতাবাস সূত্রের তথ্যমতে, আমিরাতের আদালতগুলোতে বিচারাধীন মোট মামলার অর্ধেকের বেশি কোনো না কোনো পক্ষ বাংলাদেশি। মামলার বাদী-বিবাদী উভয় পক্ষ বাংলাদেশি এমন সংখ্যাও বেশ বড়। এ ছাড়া সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশি। সেখানকার জেলখানায় বর্তমানে মৃত্যুদণ্ডের অপেক্ষায় আছে ১৯ বাংলাদেশি। এ ছাড়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছে ১০৪ বাংলাদেশি। ৮০০-এর বেশি বাংলাদেশি বিভিন্ন মেয়াদে বন্দী আছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, অপরাধ কর্মকাণ্ড দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। উদ্বেগ নিরসনের জন্য বাংলাদেশ ও আমিরাত উভয়েই আগ্রহী হয়ে কাজ করছে। এ জন্য সম্পদ নষ্ট করা সংঘাত, মুদ্রা পাচার, মানব পাচার, সাইবার ক্রাইম, পতিতাবৃত্তি, জঙ্গিবাদী কার্যক্রমসহ অন্যান্য অপরাধ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে আওতায় নিয়ে এসে একটি সমন্বিত নিরাপত্তা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়ে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এ চুক্তির আওতায় অপরাধবিষয়ক অভিজ্ঞতা-তথ্য বিনিময়ের সুযোগ রাখা হবে। ওই কর্মকর্তা জানান, আমিরাত নিরাপত্তা চুক্তির একটি খসড়া কাঠামো বাংলাদেশের মতামতের জন্য পাঠিয়েছে। এর বাইরে তারা আমিরাতের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের বাংলাদেশে নিয়ে আসার সুযোগ দেওয়ার বিষয়ে একটি চুক্তির প্রস্তাবও পাঠিয়েছে। জানা যায়, দুই চুক্তির বিষয়ে গত বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আন্তঃ মন্ত্রণালয় বৈঠক হয়েছে। পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হকের সভাপতিত্বে বৈঠকে স্বরাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা চুক্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত হয়েছে শীঘ্রই এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল আমিরাত সফর করবে। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের বিষয়ে আমিরাতে নেতিবাচক প্রচারণা বন্ধ করা ও প্রকৃত অবস্থা তুলে ধরার জন্য ব্যাপক প্রচারাভিযানের বিষয়েও আলোচনা হয় ওই বৈঠকে। অন্যদিকে, আমিরাতে একজন প্রেস মিনিস্টার নিয়োগের কথা জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ঢাকায় নবনিযুক্ত আমিরাতের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে গত সপ্তাহে বৈঠক শেষে মন্ত্রী বলেন, প্রতিযোগী দেশগুলো হিংসাপরায়ণ হয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমরাও তাদের অপপ্রচারের কাউন্টার দিতে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমিরাতে প্রেস মিনিস্টার নিয়োগ করে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা সংবাদমাধ্যমকে জানাব। শীঘ্রই আমিরাত সফরের কথা জানিয়ে মন্ত্রী বলেছেন, অব্যবস্থাপনার কারণে চাহিদার তুলনায় অতিরিক্ত লোক সংযুক্ত আরব আমিরাতে পাঠানো হয়েছে। ওইসব লোক অপরাধ সংঘটিত করছে। এখন আমরা নিবন্ধিত লোক ছাড়া কাউকে বিদেশে পাঠাব না।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।