শ্রমবাজার উন্মুক্ত করতে হলে নিরাপত্তা সহায়তা ও অপরাধী হস্তান্তরসহ চারটি চুক্তি করতে হবে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সঙ্গে। এ ছাড়া আরও চারটি বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই করতে হবে বাংলাদেশকে। সম্প্রতি ইউএই থেকে এ সংক্রান্ত একটি নোট পাঠানো হয়েছে সরকারের কাছে। নোটে বলা হয়েছে, আরব আমিরাতে কর্মরত বিদেশিদের মধ্যে যেসব অপরাধ সংঘটিত হয়, তার মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ করে থাকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে যেসব অপরাধের কথা বলা হয়েছে সেগুলোও খুব স্পর্শকাতর। এসব অপরাধে শাস্তির মাত্রা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ড থেকে যাবজ্জীবন পর্যন্ত কারাদণ্ড হয়ে থাকে। খুন, রাহাজানি, চুরি-ডাকাতি, মানব পাচার, নিষিদ্ধ পণ্য স্মাগলিংসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধে যুক্ত প্রবাসী বাংলাদেশিরা। অপরাধের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় ২০১২ সালের আগস্ট মাস থেকে দেশটি বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। জানা গেছে, গত ২৯ জানুয়ারি ইউএই দূতাবাস তার দেশের পক্ষে চুক্তির তাগিদ দিয়ে একটি নোট পাঠায় সরকারের কাছে। ওই নোটে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমবাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার আগে যেসব চুক্তির তাগিদ দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো- (১) নিরাপত্তা সহায়তা চুক্তি, (২) দণ্ডিত ব্যক্তি হস্তান্তর চুক্তি, (৩) জনঅপরাধসংক্রান্ত বিচারিক সহায়তা চুক্তি ও (৪) অপরাধীকে দেশ থেকে বহিষ্কার চুক্তি। এ ছাড়া আরও যেসব বিষয়ে সহায়তার জন্য সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সইয়ের কথা বলা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে- উচ্চতর শিক্ষা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা চুক্তি, অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তি সহায়তা চুক্তি, সাংস্কৃতিক সহায়তা চুক্তি এবং দুই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রাজনৈতিক পরামর্শের ব্যাপারে সমঝোতা চুক্তি। সূত্র জানায়, আরব আমিরাতের প্রস্তাবিত চুক্তির বিষয়গুলো নিয়ে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে বাণিজ্য, প্রবাসী কল্যাণ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে নিরাপত্তা চুক্তি ও দণ্ডিত ব্যক্তি হস্তান্তর চুক্তির ক্ষেত্রে কোনো ধরনের আর্থিক সংশ্লেষ না থাকায় এ চুক্তি দুটো জরুরি ভিত্তিতে করা যেতে পারে বলে মতামত দেয় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা। ভারত ও পাকিস্তান এ ধরনের চুক্তি করে আরব আমিরাতে শ্রমিক পাঠাচ্ছে বলেও বৈঠকে উল্লেখ করা হয়। মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশিদের এত বেশি অপরাধে যুক্ত হওয়ার বেশকিছু কারণও বৈঠকে খতিয়ে দেখা হয়েছে। এ জন্য অতিরিক্ত খরচে জনশক্তি রপ্তানির ত্রুটি তুলে ধরে বলা হয়েছে, মধ্যস্বত্বভোগীর মাধ্যমে আরব আমিরাতে যেতে একজন ব্যক্তির তিন থেকে চার লাখ টাকা, কখনো তার চেয়েও বেশি খরচ হয়। ধারদেনা করে এত টাকা খরচ করে যাওয়ার পর ভালো কাজ না পেয়ে অনেক ক্ষেত্রে হতাশায় ভোগে অর্ধ শিক্ষিত ও অল্প শিক্ষিত ব্যক্তি। তখন তারা নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। এ ধরনের অপরাধের মাত্রা কমাতে সঠিক চ্যানেলে ন্যায্য টাকায় শ্রম রপ্তানির পাশাপাশি এসব ক্ষেত্রে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য রেডিও, টিভি ও গণমাধ্যমের সহায়তা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বৈঠকে। চুক্তির ব্যাপারে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, আরব আমিরাত যে চুক্তিগুলোর কথা বলেছে, সেটির একটি আরেকটির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। নিরাপত্তা চুক্তির মধ্য দিয়ে মূলত দুটি দেশ একে অন্যের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ব্যাপারে সহায়তা করতে পারবে। এক্ষেত্রে প্রবাসী বাংলাদেশির মাধ্যমে আরব আমিরাতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হলে, বা ক্ষুণ্ন হতে পারে এমন ধারণা সৃষ্টি হলে ওই চুক্তির বিধান অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে দেশটি। দণ্ডিত ব্যক্তি হস্তান্তর চুক্তিটি অনেকটা বন্দী বিনিময় চুক্তির মতো। এক্ষেত্রে আমিরাতে দণ্ডিত বাংলাদেশিকে সরকার গ্রহণ করতে বাধ্য থাকবে। জনঅপরাধসংক্রান্ত বিচারিক সহায়তা চুক্তির মাধ্যমে আরব আমিরাতে দণ্ডিত বাংলাদেশিকে হস্তান্তরের পর দেশটির দেওয়া দণ্ড অনুযায়ী বাংলাদেশে অপরাধীর সাজা নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ আরব আমিরাতের আদালত যে সাজা দেবে অপরাধীকে দেশে হস্তান্তরের পর সেই সাজা ভোগ করতে হবে। আর চতুর্থ চুক্তির ফলে অপরাধী ব্যক্তিকে দেশ থেকে বহিষ্কার করতে পারবে আরব আমিরাত। আরব আমিরাত মনে করছে এসব চুক্তির মধ্য দিয়ে তারা তাদের দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ইউএই হচ্ছে জনশক্তি রপ্তানির অন্যতম দেশ। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১১ লাখ শ্রমিক রপ্তানি হয়েছে দেশটিতে। বর্তমানে সেখানে প্রায় ১০ লাখ শ্রমিক কর্মরত রয়েছেন বলে বিএমইটি জানিয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।