নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসসহ আশপাশের রাস্তা, অলিগলি যেন নিষিদ্ধ এলাকা। লাগাতার হরতাল-অবরোধের শুরু থেকেই ওই এলাকার প্রাণচাঞ্চল্যতা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই। বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিসকে টার্গেট করে ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ড মোড় ও কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়ে পুলিশি ব্যারিকেড গড়ে তোলায় নয়াপল্টনের ব্যস্ততম রাস্তাটিতে যানবাহন চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে। কিন্তু সেখানকার সবকিছু স্থবির হয়ে পড়লেও বিএনপি কার্যালয়ের ঠিক উল্টো পাশের আনন্দ ভবনে উচ্ছ্বাস-আনন্দে একটুও কমতি হয়নি। সেখানকার মিডনাইট সান পার্টি সেন্টারও থাকছে জমজমাট দুপুর-সন্ধ্যা-রাত। আশপাশের এলাকাজুড়ে এত র্যাব-পুলিশের ছোটাছুটি, সাঁজোয়া যানের আনাগোনা, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াও চলে প্রায়ই। কিন্তু এ রূপ পরিস্থিতিতেও বিয়েশাদি, খৎনা, জন্মদিন আর বিয়েবার্ষিকীর আনন্দ-উৎসব পাল্লা দিয়েই চলছে। বরং ওই দুটি কমিউনিটি সেন্টারে প্রতিদিন ২-৩টি করে অনুষ্ঠানের বুকিং থাকায় সংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের গলদঘর্ম অবস্থায় পড়তে হচ্ছে।
ঘন ঘন হরতাল-অবরোধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সারা দেশ স্থবির হয়ে পড়লেও থেমে নেই বিয়ে-পারিবারিক-সামাজিক অনুষ্ঠান। পাশাপাশি আনন্দ-উৎসবেরও যেন কমতি নেই। ভাড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ ছাড় পাওয়ায় কমিউনিটি সেন্টারগুলোও সরব হয়ে উঠেছে। রাজধানীর মহল্লা পর্যায়ের বেশির ভাগ কমিউনিটি সেন্টারেই নানা অনুষ্ঠানে আগাম বুকিং থাকছে। ব্যস্ত থাকছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও। শান্তিনগরের প্রসিদ্ধ একটি পার্টি সেন্টারে গতকাল একদিনেই তিনটি অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। রামপুরা এলাকার একটি কমিউনিটি সেন্টারে গতকাল ছিল দুটি বিয়ের অনুষ্ঠান। বনশ্রী আবাসিক এলাকার দুটি কমিউনিটি সেন্টারে একটি করে অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। রাজনৈতিক স্থবিরতার মধ্যেই পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠান সম্পন্ন করাকে ঝক্কিমুক্ত ভাবছেন অনেকেই। অনুষ্ঠানগুলোতে আমন্ত্রিত মেহমানদেরও কমতি নেই। হরতাল-অবরোধজনিত কারণে মানুষের দাফতরিক কর্মকাণ্ড ও ব্যবসায়িক কাজের চাপ না থাকায় বেশির ভাগ আমন্ত্রিতরাই অনুষ্ঠানে যথারীতি হাজির হচ্ছেন। আগতদের যানজটের চিরাচরিত ধকলও পোহাতে হচ্ছে না। হরতাল-ধর্মঘটে অচলাবস্থার মধ্যেই নন্দিত ক্রিকেটার জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিবের বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান সম্পন্ন হয়েছে। সাকিব গত বছরের ১২ ডিসেম্বর বিয়ে করেন উম্মে আহম্মেদ শিশিরকে। এক বছর পর গত শুক্রবার হোটেল র্যাডিসনে অনুষ্ঠিত হয় তার গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান। ১৫ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডবি্লউ মোজেনা, জাতীয় দলের অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মাশরাফি বিন মর্তুজাসহ ক্রিকেট জগতের প্রায় সবাই। বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ও পরিচালক খালেদ মাহমুদ সুজন, আকরাম খান, আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি, জালাল ইউনুসসহ অনেক কর্মকর্তাকেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়। অবরোধজনিত কারণে কাজের ব্যস্ততা কম থাকায় আমন্ত্রিত অতিথিদের অনুষ্ঠান স্থলে আয়েশ করে দীর্ঘ সময়ও কাটাতে দেখা যায়।
রাজধানীর শান্তিনগর হোয়াইট হাউস কমিউনিটি সেন্টার, মোহাম্মদপুরের পার্টি সেন্টার, নয়াপল্টনের আনন্দ ভবনসহ বিভিন্ন কমিউনিটি সেন্টারের কর্মচারীরা জানান, লাগাতার হরতাল-অবরোধের প্রথম দিকে কমিউনিটি সেন্টারগুলো পুরোপুরি ফাঁকা পড়ে থাকত। আগে থেকে বুকিং দেওয়া অনুষ্ঠানগুলোও বাতিল করে দেওয়ায় অলস সময় কাটত কর্মচারীদের। ব্যবসায়িক মন্দাভাবে বেশকিছু কমিউনিটি সেন্টারে রীতিমতো তালা ঝুলে। কিন্তু লাগাতার অবরোধের দুই সপ্তাহ পেরোতেই বাতিল করা অনুষ্ঠানগুলোও দ্রুত সম্পন্ন করার ব্যাপারে ঝুঁকে পড়ে সংশ্লিষ্টরা। আবার সবাই ছোটাছুটি করতে থাকে কমিউনিটি সেন্টারে, বুকিং দিতে থাকে একের পর এক অনুষ্ঠান। এরপর থেকে হরতাল, অবরোধ, জ্বালাও-পোড়াও, সহিংসতা-কোনো কিছুই পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের আনন্দ থেকে মানুষকে বিরত রাখতে পারছে না। কিন্তু এ ব্যাপারে ভিন্নমত পোষণ করেন ঢাকার ডেকোরেটর ব্যবসায়ী সমিতির সহসভাপতি ইদ্রিস আলী। তিনি জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে হাতেগোনা কিছু বিয়েশাদি হলেও কমিউনিটি সেন্টার ও ডেকোরেটর ব্যবসায় রীতিমতো ধস নেমেছে। তিনি বলেন, শীত মৌসুম চলছে। এখন নানা কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে অনুষ্ঠানের ধুম পড়ার কথা। অথচ বিশেষ রেয়াতি সুবিধা দিয়ে তবেই সপ্তাহে ২-৪টি অনুষ্ঠানের জন্য ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে। ফলে হাজার হাজার টাকা লোকসান গোনা ছাড়া কোনো উপায় থাকছে না। তিনি আরও বলেন, 'রাজধানীতে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ৬৫০টি কমিউনিটি সেন্টার এবং এসব সেন্টারের সংশ্লিষ্টতায় আরও এক হাজার ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিগত দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে এসব প্রতিষ্ঠানের মালিকদের নিজের গাঁইটের টাকা থেকে কর্মচারীদের বেতনভাতা পরিশোধ করতে হচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।