২.
আজও আমার মনে পড়ে কি সুন্দর ছিল আমার বোন। গরীবের মেয়ে প্রকৃত হয়ত সুন্দরী করে তোলে। কথাটায় লজিক আছে কিনা জানি না। তবে এ ধারণাটা আমার বোনকে দেখে হয়েছে। ওর সাজবার কোন উপকরণ ছিল না।
তারপরও কত রূপসী ছিল আমার চন্দ্রা বু! ওর শরীর যখন বাড়ন্ত। ঘরের লোক জানার আগেই পাড়ায় ঢোল পড়ল তারও আগে।
চন্দ্রা বু, কিছু বুঝে উঠবার আগেই ওর জীবনে একটা পরিবর্তন এসে গেল। ওর একটা খুতি ছিল সেখানে টাকা জমাতো। কোত্থেকে এত টাকা পেত আমার মাথায় আসত না।
মাঝে মাঝে আমাকে চকলেট, আইসক্রিম, আচার কিনতে টাকা দিত। আমাদের পাশের বাড়ী ছিল আতা মাঝির বাড়ী। আসলে তার নাম ছিল আতাউর রহমান। তবে গরীবের একটা ভদ্দর নামের পাশাপাশি ছিল মুখে মুখে প্রচলিত নাম। তো সে আতা মাঝির বড় পোলা ঢাকার নিউমার্কেটে দোকানের সেলসম্যান।
কোরবানীর ঈদের সময় তার এক বন্ধুকে নিয়ে বাড়ীতে ঈদ করতে এলেন। আমার সবচেয়ে প্রিয় ঈদ ছিল বরকির ঈদ। এই ঈদ উপলক্ষে গরুর গোশত খেতে পারার লোভটাই ছিল বড়। গ্রামের কয়েক ঘর বরকীর ঈদে গরু, খাসী কোরবানি দিত। তারমধ্যে চেয়ারম্যান ইলেকশন করত যারা দুই বাড়ী খনকার বাড়ী আর মিঞা বাড়ী।
কিশোর বয়সে ওই বাড়ীতে গরু দেখতে যেতাম। একেকটা গরু মনে হত হাতি সাইজ। চকচকে শিং। বাহারি সাজে সাজাতো গরুকে। তাদের ওই হাতি সাইজ গরু কোরবানী শেষে কয়েক টুকরা গোশত জোটত।
সেই গোশত খাওয়ার লোভে এক বছর গুনতাম। গ্রামে কপালে মাছ জুটলেও গোশতা জুটত না।
যাক আতা মাঝির বড় ছেলের বন্ধুর এলো ঈদ করতে। তিনদিন গ্রামে কাটালো। এরমধ্যে গ্রামে একটা ঘটনা ঘটে গেল।
আমার বোনকে আর খুঁজে পাওয়া গেল না। চেয়ারম্যান বাড়ীতে শালিস বসল। সালিশে রায় হল। গণ্যমান্যরা আতা মাঝির পোলার বন্ধুর কারণে যেহেতু এমন ঘটনা ঘটেছে আতা মাঝি ক্ষতিপূরণ দিবে। তিন হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিবে।
তবে ওই ক্ষতিপূরণের টাকা জোটল মাতবরদের। আমার বাপ তার মেয়ে হারালো মান সম্মান সব গেল আর ফুর্তি হল মাতবরদের।
সংসারময় আমি একা। সারা বছর বাপের সঙ্গে বলগা খাটি আর পরীক্ষার আগে স্যার জোর করে তাদের বাসায় নিয়ে গিয়ে পড়াতেন। এভাবেই কলেজ পার করলাম।
বাবাও মারা গেল। এর কিছুদিন পর মাও বাবার পথ ধরলেন। চারিদিক অন্ধকার।
এ সময় আবার ওই স্যার আমার মাথায় হাত রাখলেন। বোঝালেন পৃথিবীটা এমন একটা জায়গা যেখানে কেবল যারা অবস্থান করছে তারাই গুরুত্বপূর্ণ।
আর আমি যদি এখনই ভেঙ্গে পড়ি তাহলে আমার পরিণতিও হবে আমার পরিবারের অন্যান্যদের মতো। স্যার বললেন, তুই ডাক্তার হবি। কিন্তু খরচ, ঢাকা যাব কিভাবে। স্যারও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল ছিলেন না। সকালে আমাকে আমার গ্রামের স্কুলে নিয়ে গেলেন।
প্রথমে ঢুকলাম ক্লাশ ওয়ানে। স্যার ক্লাশশুদ্ধ সবার সামনে বলতে লাগলেন আমার নাম, বাবার নাম, আমি ভাল ছাত্র ইত্যাদি ইত্যাদি তারপর বললেন, আমাকে ডাক্তার হতে হবে। তাই সাহায্য দরকার। ক্লাশ ওয়ান থেকে টেন পর্যন্ত আর স্কুলের স্যারদের দেওয়া খয়রাত মিলিয়ে তিন হাজার টাকা হল। এই টাকা হাতে স্যারের চোখে মুখে আমি যে আনন্দ দেখলাম সেই আনন্দ আর দেখার ভাগ্য আর হয়নি।
তারপর ঢাকা রওনা হলাম। .......(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।