রাজধানীজুড়ে সরকারের উন্নয়নের বিলবোর্ড ছাড়া যেন আর কোনো প্রচারণা নেই। অন্য পণ্য ও সেবার কোনো কথা নেই। ঈদ সামনে রেখে কয়েক দিন আগেও যেসব বিলবোর্ডে বিভিন্ন কোম্পানির পণ্য ও সেবার বিজ্ঞাপন শোভা পাচ্ছিল, সেগুলো রাতারাতি বেদখল হয়ে গেছে। বিজ্ঞাপন কোম্পানির কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, তাদের 'কোটি কোটি টাকার বিলবোর্ড ছিনতাই' হয়ে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বলেছেন, বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ করে তাদের ভাড়া নেওয়া বিলবোর্ডগুলো বেদখল হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ নেতাদের দাবি, রাজধানীতে প্রায় আড়াই শ বিলবোর্ডে বিজ্ঞাপন স্থাপন করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ বিলবোর্ড মালিক সমিতির সদস্যরা বলেছেন, বেদখল হওয়া বিলবোর্ডের সংখ্যা চার শর মতো। এসব বিলবোর্ডে বিভিন্ন খাতে সরকারের অগ্রগতির তথ্য প্রচারের আড়ালে ভোট চাওয়া হয়েছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজার, রূপসী বাংলার মোড়, কাকরাইল, মগবাজার, গুলশান, বনানী, বিজয় সরণি, খামারবাড়ি মোড়, মহাখালী, বিমানবন্দর সড়কে যে বিলবোর্ডগুলো রয়েছে সেগুলো বিভিন্ন আকারের। কোনোটি চওড়ায় ৪০ ফুট, উচ্চতায় ২০ ফুট, কোনোটি চওড়ায় ৩০ ফুট, উচ্চতায় ১৫ ফুট, কোনোটি এর চেয়েও ছোট। এলাকাভেদে বিলবোর্ডের খরচ একেক রকম। এয়ারপোর্ট রোড, বনানী, গুলশানসহ অভিজাত এলাকাগুলোয় ৪০ ফুট চওড়া, ২০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট একটি বিলবোর্ডের জন্য বার্ষিক খরচ ৫-৬ লাখ টাকার মতো।
বিজ্ঞাপনী সংস্থার কর্মকর্তারা বলেছেন, বিলবোর্ড বেদখল হওয়ায় মাসে তাদের আনুমানিক ১ কোটি ২৫ লাখ টাকার ক্ষতি গুনতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তারা ছয় মাস কিংবা এক বছরের জন্য ভাড়া নেয় এবং আগাম টাকা পরিশোধ করে। বিলবোর্ডগুলো ভাড়া নিয়ে যারা বিজ্ঞাপন দিয়েছিল তারা এখন চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ করছে। কোটি টাকার বিলবোর্ডে ২৫ লাখ টাকা সরকারের ঘরে ভ্যাট/ট্যাঙ্ জমা হয়। বিলবোর্ডগুলো দখল হওয়ায় এ ক্ষতি এখন কে গুনবে? সূত্র জানিয়েছে, প্রতিটি বিলবোর্ডের আয়তনের ডিজিটাল ব্যানার ছাপাতে গড়ে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আওয়ামী লীগ অফিস থেকে যে আড়াই শ বিলবোর্ডের কথা বলা হয়েছে, সেগুলোয় বিজ্ঞাপন ছাপাতে খরচ হয়েছে প্রায় ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। জানা গেছে, গ্রামীণফোন, ইউনিলিভার, পারটেঙ্সহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড ছিনতাই হলেও কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বক্তব্য দিতে চান না। তবে পারটেঙ্রে শীর্ষ একজন কর্মকর্তা বলেন, সরকার চাইলে আমরা বিলবোর্ড ছেড়ে দিতাম। কিন্তু কোনো কিছু না জানিয়ে আচমকা আমাদের পণ্যের বিজ্ঞাপন সরিয়ে দিয়ে সরকারের অগ্রযাত্রা প্রচারের কারণ বুঝলাম না। বিলবোর্ডগুলো ফেরত পাব কি না, তাও বুঝতে পারছি না। কার কাছে যাব, তাও বুঝতে পারছি না। এদিকে গ্রামীণফোন, বাংলালিংক, এয়ারটেল, রবি, প্রাণ, স্কয়ার, বিএসআরএম, ইউনিলিভারের কর্মকর্তারা জানান, তারা এখনো নিশ্চিত নন, তাদের কার কয়টা বিলবোর্ড বেদখল হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই ঈদ সামনে রেখে বিলবোর্ডে নতুন বিজ্ঞাপন বসিয়েছিলেন। তারা যাদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছেন, তারা কিছুই নিশ্চিত করে জানাতে পারছেন না। এমনকি রাজধানীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমের যেসব বিলবোর্ড ছিল সেগুলোতেও সরকারি প্রচারের বিজ্ঞাপন সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে এসব বিলবোর্ড প্রচারের ব্যাপারে কেউ সুনির্দিষ্ট বক্ত্ব্য দিতে রাজি হননি। আওয়ামী লীগের উপ-প্রচার সম্পাদক অসীম কুমার উকিল বলেছেন, বিলবোর্ড তো আমরা করিনি, করেছে সরকার। তথ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ কাজ আওয়ামী লীগের, সরকারের নয়। আওয়ামী লীগের গবেষণা সেলের এক কর্মকর্তা বলেন, সরকার করলে 'জয় বাংলা', 'জয় বঙ্গবন্ধু' লেখা থাকত না। এটা দলীয়ভাবে করা হয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।