দীর্ঘ ২১ বছর ধরে অচল প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, সংস্কৃতির রাজধানী খ্যাত দেশের একমাত্র আবাসিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জাকসু)। ফলে সংকট সৃষ্টি হয়েছে ছাত্র নেতৃত্বের। শিক্ষার্থীদের অধিকার নিয়ে কোনো আন্দোলন না থাকায় চলছে রাজনৈতিক অস্থিরতা, লোপ পেয়েছে সহাবস্থান। এদিকে দীর্ঘ দিন বিকল থাকা ছাত্রদের এ সংগঠটি সচলের ব্যাপারেও নেই যথাযথ উদ্যোগ, রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথেষ্ট অবহেলা। জানা যায়, স্বাধীনতার পরই ছাত্রছাত্রীদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন হিসেবে গড়ে ওঠে জাকসু।
১৯৭০ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার প্রায় দুই বছর পর '৭২ সালে জাকসুর প্রথম নির্বাচন সম্পন্ন হয়। পরে '৭৪, '৭৯, '৮০, '৮১, '৮৯, '৯০, ৯১ ও '৯২ সালে জাকসু নির্বাচন হয়। জাকসুর প্রথম ভিপি হিসেবে ছাত্রলীগের গোলাম মোরশেদ এবং জিএস হিসেবে জাসদের মুহাম্মদ রোকন উদ্দিন নির্বাচিত হন। গঠনতন্ত্রে প্রতি বছর নির্বাচনের কথা থাকলেও ৪৩ বছরে মাত্র নয়বার নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণতা পেয়েছে ছাত্র সংসদটি। সর্বশেষ ১৯৯২ সালের নির্বাচনে ভিপি নির্বাচিত হন মাসুদ হাসান তালুকদার এবং জিএস শামসুল তাবরীজ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এক ছাত্রের বহিষ্কার কেন্দ্র করে ১৯৯৩ সালের ২৯ জুলাই ছাত্র ও শিক্ষকদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ বাধলে তৎকালীন প্রশাসন জাকসু ও হল সংসদ বাতিল করে। এদিকে ১৯৭৩ সালের ১৯ (২) ধারা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে জাকসু থেকে পাঁচজন নির্বাচিত প্রতিনিধির ভোটাধিকার থাকলেও বর্তমানে জাকসু সচল না থাকায় উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্বও সম্ভব হচ্ছে না। অন্যদিকে প্রশাসনের অবহেলা ও যথাযথ উদ্যোগের অভাবে জাকসু ভবনের অবস্থা দাঁড়িয়েছে ভয়াবহ, ভেঙে পড়েছে অবকাঠামো। নষ্ট হচ্ছে চারদিকের পরিবেশ। তালাবদ্ধ কক্ষে নষ্ট হচ্ছে অনেক মূল্যবান আসবাবপত্র।
এদিকে জাকসু অচল থাকলেও সচল রয়েছে এ খাতের আয়। ২১ বছর ধরে প্রতি বছর ভর্তি পরীক্ষার সময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদের চাঁদা হিসেবে মোট ৩০ টাকা করে আদায় হচ্ছে। এ অর্থ কোথায় ব্যয় করা হয়- জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পোট্রোলার মোতাহের হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছাত্রদের প্রয়োজনেই এ টাকা ব্যয় করা হয়। বর্তমানে এ ফান্ডে কোনো টাকা নেই বলেও তিনি জানান। তবে জাকসু বাবদ প্রতি বছর বাজেটে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয় বলেও জানা গেছে।
সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিক্রিয়া : ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মুশফিকুর রহমান সিমান্ত বলেন, 'জাকসু কখনো দেখিনি, জাকসু থাকলে বা কার্যকর হলে ছাত্রছাত্রীদের অধিকার রক্ষিত হবে। এ ছাড়া যাদের পক্ষে কথা বলার কেউ নেই জাকসুই হবে তাদের অভিভাবক। প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ওয়ালিউল্লাহ মিঠু বলেন, যে প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নেই, সে প্রতিষ্ঠানে দলীয় স্বার্থের ঊর্ধ্বে ছাত্রছাত্রীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। তাই ছাত্র সংসদ তথা জাকসু প্রয়োজন।
ছাত্রনেতাদের প্রতিক্রিয়া : ছাত্রলীগের জাবি সভাপতি মাহমুদুর রহমান জনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের অধিকার আদায়ের একমাত্র স্থান হলো ছাত্র সংসদ এবং এর মাধ্যমেই নেতৃত্বের বিকাশ ঘটে।
তাই অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জাকসু নির্বাচনের দাবি জানাচ্ছি। ছাত্রদলের জাবি সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ ভুইয়া বলেন, কয়েক বছর ধরে ক্যাম্পাসে সহাবস্থান নেই। ছাত্রলীগের একদলীয় শাসনতন্ত্রের মাঝে বর্তমানে ক্যাম্পাসে জাকসুর কোনো পরিবেশ নেই। সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থান নিশ্চিত করা হলে আলোচনার মাধ্যমে আমরা জাকসু নির্বাচনকে স্বাগত জানাব। সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের জাবি আহ্বায়ক মৈত্রী বর্মণ বলেন, আবাসিক হলগুলো ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের দখলমুক্ত করে একটি গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে হবে এবং সব ছাত্র সংগঠনের সহাবস্থানের ভিত্তিতে জাকসুর ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে হবে।
জাকসু নির্বাচন নিয়ে সদ্য দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন, মাত্রই দায়িত্ব পেলাম, প্রথমে এ বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরিয়ে আনব, তারপর ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করে ছাত্র সংসদ, হল সংসদ ও বিভাগীয় সংসদের নির্বাচনের বিষয়ে সবার সহযোগিতা ও পরামর্শ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব। এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রশাসনের যথাযথ উদ্যোগের অভাব আর অবহেলার কারণে বিকল রয়েছে জাকসু। এ ব্যাপারে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ এবং ছাত্র-শিক্ষকদের সমন্বয়ে সুষ্ঠুভাবে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য অবিলম্বে জাকসু নির্বাচন প্রয়োজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।