আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দখল ছয়টি, মালিকানা দ্বন্দ্বে বন্ধ এক ডজন

মহাজোট সরকারের শেষ সময়ে গত এক বছরে দখল হয়েছে রাজধানীতে পরিচালিত ছয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়। আর মালিকানা দ্বন্দ্ব ও মামলা-হামলায় জড়িয়ে পড়েছে আরও এক ডজন বিশ্ববিদ্যালয়। এসব বিশ্ববিদ্যালয় দখলের সঙ্গে সংসদ সদস্য, সরকারি দলের সাবেক এবং বর্তমান ছাত্রনেতারা জড়িত রয়েছেন বলে অভিযোগ আছে। এ ছাড়া এ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে সনদ বাণিজ্যেরও অভিযোগ রয়েছে।

গত এক বছরে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণ ও ট্রাস্টি বোর্ড সংশোধনের নামে অতীশ দীপঙ্কর, প্রাইম, প্রাইম এশিয়া, দ্য পিপল, এশিয়ান, ইবাইস ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন ক্যাম্পাস দখল হয়েছে। সেই সঙ্গে এসব ক্যাম্পাস থেকে দেদার বিক্রি হচ্ছে অবৈধ সনদ।

জানা গেছে, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানায় ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের স্ত্রী অধ্যাপক আনোয়ারা বেগম ও তার পরিবারের সদস্যরা। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর পরিচালনা পর্ষদের একটি পদের পাওয়ার অব অ্যাটর্নি নিয়ে দখল নেন বৃহত্তর রাজশাহী অঞ্চলের এক সংসদ সদস্য। এর সঙ্গে ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীও যুক্ত হয়েছেন। তারা আলাদা একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। এই ট্রাস্টি বোর্ডে ট্রাস্টি সদস্য হিসেবে ছাত্রলীগের সাবেক এবং বর্তমান নেতাদের রাখা হয়েছে। অন্যদিকে বনানীতে আরেকটি শাখা দখলেনিয়ে আলাদা ট্রাস্টি বোর্ড করে ক্যাম্পাস পরিচালনা করছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ড. আবুল হোসেন শিকদার। বর্তমানে এই ইউনিভার্সিটির একাধিক অবৈধ ক্যাম্পাস রয়েছে। এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি একাধিকবার নোটিস দিয়েছে। এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ সরকারি অনুমোদন নিয়ে ১৯৯৬ সালের ৪ জানুয়ারি ২৯৬ জন ছাত্র নিয়ে যাত্রা শুরু করে। মূল ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হলেন প্রফেসর ড. আবুল হাসান মু. সাদেক। ২০০০ সালে নিবন্ধনকৃত ট্রাস্টের মাধ্যমে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অন্যদিকে, ড. সাদেকের ছোট ভাই হারুন মিয়া কিছু ব্যক্তিকে নিয়ে পৃথক একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে আরেকটি ক্যাম্পাস পরিচালনা করছেন।

ইবাইস ইউনিভার্সিটির প্রতিষ্ঠাতা ও ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন অধ্যাপক ড. জাকারিয়া লিংকন। তিনি ২০০২ সালের ৬ আগস্ট অনুমোদন নিয়ে ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় অস্থায়ী ক্যাম্পাস স্থাপন করে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করেন। প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করেন। সেখানে ট্রাস্টি হিসেবে তার ভাই কাওসার হোসেন কমেটের নামও ছিল। ২০১১ সালের শেষের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টি দখলে নেন কাওসার হোসেন কমেট। তার সঙ্গে দেশের একজন শিল্পপতির ছেলেও যুক্ত হন। এরপর উভয়পক্ষে শুরু হয় হামলা-মামলার প্রতিযোগিতা। সর্বশেষ গত বছরের ৪ জুন সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ইবাইস ইউনিভার্সিটির সব কার্যক্রম মোহাম্মদপুর, মোহাম্মদিয়া হাউজিং সোসাইটির প্রধান সড়কের ২৭ নম্বর বাড়িতে পরিচালনার রুলনিশি জারি করেন।

সবচেয়ে নাজুক অবস্থা বিরাজ করছে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে কমপক্ষে পাঁচটি পক্ষ রয়েছে যারা নিজেদের 'প্রকৃত মালিক' দাবি করে ক্যাম্পাস চালাচ্ছেন। ঢাকার অলিগলিতে রয়েছে ক্যাম্পাস। ঢাকার বাইরেও ক্যাম্পাস চালাচ্ছেন বিভিন্ন পক্ষ। এ প্রতিষ্ঠানটির নাম ব্যবহার করে সরকারপন্থি প্রভাবশালী নেতাদের আত্দীয়স্বজনরা যে যেভাবেই পারছেন শিক্ষা এবং সনদ বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

মালিকানা দ্বন্দ্ব নিয়ে বিপজ্জনক পর্যায়ে যাওয়া আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রাইম ইউনিভার্সিটি। সরকার মিরপুরের ঠিকানায় এ বিশ্ববিদ্যালয়টি অনুমোদন দেয়। সেখানকার কর্তৃপক্ষ উত্তরার বিএনএস সেন্টারে একটি ক্যাম্পাস খোলে। একপর্যায়ে মিরপুর অংশের কিছু ট্রাস্টিকে নিয়ে উত্তরা গ্রুপ নিজেদের আলাদা শক্তি হিসেবে দাঁড় করায়। এমনকি তারা সর্বশেষ ২০১০ সালের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে। উচ্চ আদালতে মালিকানার জন্য মামলা করলে তাদের পক্ষেই রায় আসে। অন্যদিকে মিরপুর ২-এ ক্যাম্পাস গড়ে তুলে মালিকানার ওপর শক্ত দাবি নিয়ে আবিভর্ূত হয় আরেকটি পক্ষ। তারা ক্যাম্পাস ভাড়া নিয়ে বর্তমানে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়েরই মালিকানার দাবি করছেন। মিরপুরের একটি ক্যাম্পাসের বিরুদ্ধে লাইব্রেরি সায়েন্সের সনদ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহকারী লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ এবং এমপিওভুক্তির আবেদনের সঙ্গে প্রার্থীরা জমা দিয়েছেন প্রাইম (মিরপুর) ও দারুল ইহ্সান ইউনিভার্সিটির লাইব্রেরি সায়েন্সের সনদ। এসব সনদের সত্যতা যাচাইয়ে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করলে প্রাইম ইউনিভার্সিটি এবং দারুল ইহ্সান ইউনিভার্সিটির সনদগুলো ভুয়া প্রমাণিত হয়। গত বছর মহাজোট সরকার নতুন আরও ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে। এ নিয়ে এই সরকার ২৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দিল। তবে সব মিলিয়ে দেশে এখন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা ৭৯টি। নতুন অনুমোদন পাওয়া ছয়টির মধ্যে রয়েছে ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, রাজশাহীতে নর্থবেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, টাঙ্গাইলে রণদা প্রসাদ সাহা বিশ্ববিদ্যালয়, জামালপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা ইউনিভার্সিটি, কঙ্বাজারে কঙ্ ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং নাটোরে রাজশাহী সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইউনিভার্সিটি। অভিযোগ আছে, মহাজোট সরকারের আমলে অনুমোদন নেওয়া অধিকাংশ বিশ্ববিদালয়ই এখনো শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা এবং নিজস্ব ক্যাম্পাসে যাত্রা করতে পারেনি। ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বলেন, কিছু প্রতিষ্ঠান শিক্ষাবাণিজ্য করছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। আমরা এসব বিশ্ববিদ্যালয়কে বিভিন্নভাবে সময় দিয়েছি। মালিকানা দ্বন্দ্ব নিরসন ও অবৈধ ক্যাম্পাস বন্ধে শেষ পর্যন্ত আমরা প্রেসিডেন্টের কাছে সুপারিশ করেছি।

জানা গেছে, ২০১২ সালের নভেম্বরে যে সাতটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেক্ষেত্রে ইউজিসির বৈঠকের সুপারিশ অনুসরণ করা হয়নি। বর্তমান সরকারের আমলে এর আগে দুই দফায় ৯টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। তখনো দলীয় বিবেচনায় অনুমোদনের অভিযোগ উঠেছিল।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.