প্রতিহিংসার আগুনের ফল হলো দুটি লাশ! জন্ম নিল একটি রোমহর্ষক, বর্বরোচিত ও অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আবু রায়হানের কথায় এটিই প্রতিভাত হয়েছে।
গতকাল সকালে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) কমিশনারের সম্মেলন কক্ষে রায়হান ও তার সহযোগী শহীদকে সাংবাদিকদের সামনে আনা হয়। এ সময় তিনি ঘটনার নানা তথ্য স্বীকার করেন। এর আগে গত বুধবার ভোরে ঢাকা থেকে রায়হানকে ও গত মঙ্গলবার রাতে রায়হানের সহযোগী শহীদকে চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয়।
পরে সিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম আটক দুজনের কাছ থেকে পাওয়া বিভিন্ন তথ্য সাংবাদিকদের জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক, অর্থ, প্রশাসন) শহীদুর রহমান, উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) কুসুম দেওয়ান, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গোয়েন্দা) বাবুল আকতার। আবু রায়হান বলেন, এবারের 'নিশাতের মোবাইলে একজন ফোন করে বলে, হ্যালো জান, কেমন আছ? তখন আমি বুঝে নিলাম নিশাত অন্যজনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে। তারপরই তাকে খুন করার পরিকল্পনা করি। কারণ নিশাত অন্য কারও হোক তা আমি চাই না।
তাই প্রতিহিংসার আগুনে দগ্ধ হয়ে তাকে খুন করি। তবে আন্টিকে (নিশুর মা) খুন করার কোনো ইচ্ছা আমার ছিল না। ' হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তার কোনো অনুশোচনা তৈরি হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে খুবই নির্বিকার ভঙ্গিতে রায়হান বলেন, মেরে ফেলেছি, এটাই জাস্ট। তবে একটু খারাপ লাগছে। ঘটনা যখন ঘটেছে এখন আদালতে যা হওয়ার তাই হবে।
তবে এটা সত্য বেঁচে থাকলে নিশাত আর কোনো দিন আমার কাছে ফিরে আসত না। রায়হান বলেন, এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগ থেকেই নিশাত ও আমার সম্পর্কে ছেদ পড়ে। গত ১২ মার্চ তাদের মধ্যে শেষ দেখা হয়। ওইদিন বিকালে নিশাত ও তার দুই বান্ধবী নগরীর একটি বিপণিবিতানে বেড়াতে আসে। রায়হান তা জেনে সেখানে দেখা করতে যায়।
তখন নিশাত আমাকে একটি স্যান্ডউইচ এবং একটি পারফিউম গিফট করে। স্যান্ডউইচ দিয়ে সে আমাকে বলে, আমার পক্ষ থেকে তোমাকে দেওয়া এটাই হয়তো শেষ খাবার, শেষ উপহার। ধারণা করছিলাম সে ফান করছে। তবে এরপর তার সঙ্গে আমার আর দেখা হয়নি।
নিশাতের আচরণ দিনে দিনে তার কাছে স্পষ্ট হচ্ছে জানিয়ে রায়হান বলেন, ওইদিন নিশাত আমাকে মোবাইলে একটি এসএমএস দিয়ে গ্রামীণফোনের একটি অফার সম্পর্কে জানতে চায়।
রায়হান তাকে বলে, তুমিও তো গ্রামীণফোন ব্যবহার কর। তুমি কী অফার জান না। এ নিয়ে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে সম্পর্কের প্রসঙ্গ আসলে নিশাত রায়হানের সঙ্গে সে আর সম্পর্ক রাখবে না বলে সাফ জানিয়ে বলে- তোমার সঙ্গে হবে না। ১৬ মার্চ থেকে নিশাতের সঙ্গে আমার যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
১৭ মার্চ রায়হান সরাসরি নিশাতের বাসায় যায়। এ সময় নিশাতের বাবা তাকে অপমান করে। ১৮ মার্চ থেকে নিশাত মোবাইল বন্ধ করে রাখে। ১৯ মার্চ রায়হান নিশাতকে দেওয়া তার সিমটি ব্লক করে নতুনভাবে সিম তুলে ফেলে। এরপর মোবাইল কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারে নিশাত অন্য একটি গ্রামীণ নম্বর ব্যবহার করছে।
এ সময় রায়হান সিমটি চালু করার সঙ্গে সঙ্গে ওই গ্রামীণ নম্বর থেকে একটি কল আসে। বলে, 'হ্যালো জান, কেমন আছ? এতক্ষণে কেন ফোন অন করলা। ' এসময় রায়হান বলেন, আমি কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকি। আমি নিশ্চিত হই নিশাত এখন অন্য সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে। এরপর আমি তাকে একটা এসএমএস দিই।
সে বুঝতে পারে, আমি তার সিম ব্লক করে নতুনভাবে সিম তুলেছি। পরে আমাকে একটা মিসডকল দেয়। আমি ফোন করলে সে কেটে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেয়। মূলত এরপরই আমি তাকে খুন করার পরিকল্পনা করি। মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার বাবুল আকতার বলেন, গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে রায়হান ও শহীদ হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে অনেক কথাই বলেছেন।
আমরাও ঘটনা সম্পর্কে অনেক কিছুই স্পষ্ট। প্রসঙ্গত, গত ২৪ মার্চ সকালে নগরীর ডবলমুরিং থানাধীন আগ্রাবাদে সিডিএ আবাসিক এলাকার ১৭ নং সড়কে যমুনা নামের একটি ভবনের চতুর্থ তলায় সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীর স্ত্রী রেজিয়া বেগম (৫০) ও তার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী সায়মা নাজনীন নিশাতকে (১৬) পায়ের রগ কেটে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার প্রধান আসামি আবু রায়হান (২৪) ও তার বন্ধু মো. শহীদকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।