দাঁড়িয়ে ছিলাম গুলশান ১ এর বাস স্ট্যান্ড এ। হঠাত কিছু একটা ছেঁচড়ে নিয়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনে ফিরে তাকালাম। দেখি লোকাল সেই ৬ নম্বর বাসের পিছনের চাকায় একটা বড় কাগজের বাক্স আটকে গেছে। কিন্তু আওয়াজ টাতো এরকম হওয়ার কথা নয়। একদল ছেলেপেলে মুহূর্তের মধ্যে দৌড়ে এলো।
টেনে বাক্সটা বাসের চাকার নিচ থেকে বের করতে মরিয়া। অনেক চেষ্টায় বের করে নিয়ে গেলো। আর তাকালাম না, ভেবেছিলাম বাচ্চাদের খেলা এই আর কি। কিন্তু ভাবনাটা ভুল প্রমান করে দিলো সেই ছেলেদের দলের একটা বালক। ভাই পেচা মারছে, পেচা মারছে।
কথাটা শুনে আবার ফিরে তাকালাম। কিছু বুঝতে পারিনি। কিন্তু অবাক হয়ে গেলাম যখন দেখলাম বাসের চাকার নিচ থেকে বের করা কাগজের বাক্সের ভেতর থেকে একটা বড় আকারের পাখি বের করা হল। যে ছেলেটা পাখিটা টেনে বের করলো সে কিছুটা ষণ্ডামার্কা। বুঝলাম পাখিমারা দলের লিডার।
মৃত পাখিটা যে পেঁচা ছিলো সেটা বোঝা যাচ্ছিলনা, মুহূর্তের মধ্যে ষণ্ডামার্কা ছেলেটা পেঁচাটার পালক ছিঁড়তে শুরু করে দিলো। আমার আর বুঝতে বাকি রইলো না যে পেঁচাটা বাক্সের মধ্যে থেকে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেলো।
আমার সাথে আমার দুইজন বন্ধু ছিলো। তারাও এ দৃশ্য দেখে হতবাক। আমি জিজ্ঞেস করলাম ঘটনাটা কি? তারা বলল সেটা তারাও বুঝতে পারছেনা।
এভাবে পেঁচাটা মারার কারণ কি? যে ছেলেটা প্রথমে পেঁচা মারছে বলে চিৎকার করছিলো তাকে ডেকে জিজ্ঞেস করাতে সে বলে পেঁচা নাকি মানুষের চোখ নিয়ে যায় তাই মেরেছে।
মেজাজ টা কেনো যেন খারাপ হয়ে গেলো। আমার দুই বন্ধুকে বললাম চল জিজ্ঞেস করি কি কারণে তারা এমন করলো। কিন্তু সায় দিলেও খুব একটা তথপরতা দেখলাম না তাদের মধ্যে। যাই হোক আমি ঠিক করলাম ওই ছেলেটাকে জিজ্ঞেস করে দেখি।
কিছুদূর গিয়ে তাকে পাওয়া গেলো।
- ওই ছেলে, শোন।
ছেলেটা ফিরে তাকালো আমার দিকে।
-পাখিটা মারলি কেনো?
-ক্যান আপনে কিনতেন?
(প্রশ্নটা শুনে কিছুটা অবাক হয়েছিলাম সেটা সামলে নিলাম)
-আমি কিনতাম কিনা সেটা তো বড় কথা না, তুই মেরেছিস কেনো সেটা বল।
-ওইটা মাইনশের চোখ খায়।
-কার চোখ খাইছে?
-না মারলে ঠক্রাইত।
-তুই জানিস?
-হ।
(ততক্ষনে তার দলের বাকি গুলো সেখানে জড় হয়ে গেছে, তারা কেউ তাকে সায় দিচ্ছে, কেউ দিচ্ছেনা)
-শোন, নে জেনে কোনও কিছু করা ঠিক না, ওই পাখিটার জায়গায় যদি তুই থাকতি, এখন কেমন লাগতো?
(ছেলেটা চুপ হয়ে যায়)
আমি আর কিছু বলিনা। যাওয়ার আগে-
-শোন, আর কোনদিন এরকম করবিনা।
ছেলেটা হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ে।
আমি বাসে ওঠার জন্য পা বাড়াতেই সে বলে, আমি কোনও পশুপাখি মারিনা। অইদিন আব্বায় দুইটা বান্দর আনছিল, ছাইড়া দিছি, শুধু এইডাই মারছি।
.। .। .।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।