কারাগারে থাকা বিএনপির শীর্ষ নেতারা এখন ভালো নেই। জেলখানায় চলছে ঘনঘন লোডশেডিং। এর ওপর চলছে প্রচণ্ড দাবদাহ। দুয়ে মিলে শারীরিকভাবে কাবু হয়ে পড়েছেন তারা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারে একই অবস্থা বলে জানিয়েছেন নেতাদের পরিবারের সদস্যরা।
স্বজনেরা জানান, নেতাদের অনেকেই ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, দাঁতের ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, কিডনি, পেটের সমস্যা, হৃদযন্ত্রে ব্লকসহ নানা রোগে আক্রান্ত। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবাও পাচ্ছেন না তারা। আবার অনেকের জেলে থাকার অভিজ্ঞতাও কম। এ কারণেই কারাগারে থেকেও শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে স্বজনদের মধ্যেও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চলছে।
বিভিন্ন মামলায় আটক হয়ে এখন কারাগারে রয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুস সালাম পিন্টু, অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, ছাত্রদল সভাপতি আবদুল কাদের ভূইয়া জুয়েল, সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব প্রমুখ। এ ছাড়া ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অন্যান্য অঙ্গ-সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছেন।
এর মধ্যে মির্জা ফখরুল কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-২ এ, ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন রয়েছেন কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-১ এ। মির্জা আব্বাস রয়েছেন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, আবদুস সালাম পিন্টু, লুৎফুজ্জামান বাবর রয়েছেন কাশিমপুর কারাগারের কনডেম সেলে।
আবদুস সালাম হাই সিকিউরিটি সেলে। এ ছাড়া নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে কারা কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের হৃদযন্ত্রে চারটি ব্লক ও গলার ধমনিতে রক্ত চলাচল সমস্যাও রয়েছে। এ ছাড়া ডিসেন্ট্রিসহ নানা রোগে ভুগছেন তিনি। সম্প্রতি মির্জা আলমগীরের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
পরে তার সহধর্মিণী রাহাত আরা বেগম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তার স্বামী শারীরিকভাবে ভীষণ খারাপ অবস্থায় আছেন। দেশের প্রধান রাজনৈতিক দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব গত দুই বছরে পাঁচবার জেলে গেছেন। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের দফায় দফায় জেলে যাওয়ার দৃষ্টান্ত খুবই কম। এটা গণতন্ত্র ও আইনের শাসনের পরিপন্থী।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে গত শনিবার দেখা করেন তার পরিবারের সদস্যরা।
সাক্ষাৎ শেষে ড. মোশাররফের ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেন জানান, কারাগারে প্রচণ্ড গরম। তা ছাড়া তার বাবা ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সম্প্রতি মির্জা আব্বাসের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করেন তার সমধর্মিণী আফরোজা আব্বাস। তিনি বলেন, তার স্বামী হার্ট, কিডনি, মেরুদণ্ড ও হাঁটুতে ব্যথা, ডায়াবেটিসসহ নানা রোগে আক্রান্ত। কারাগারে প্রচণ্ড গরমে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।
কারাগারে কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই। তা ছাড়া তিনি বারডেমের চিকিৎসকদের দ্বারা শারীরিক পরীক্ষা করান। এ ব্যাপারে আমরা কারা কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও কথা বলেছি। কারাগারে যাওয়ার আগে আমার স্বামী চিকিৎসার জন্য বিদেশেও যেতে চেয়েছিল। কিন্তু বাধার কারণে তিনি যেতে পারেননি।
আফরোজা আব্বাস অবিলম্বে তার স্বামীকে বারডেমে চিকিৎসার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
আবদুস সালামের সহধর্মিণী সৈয়দা ফাতেমা সালাম জানান, তার স্বামীকে কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলে রাখা হয়েছে। যেখানে সাধারণত সন্ত্রাসী ও দাগি আসামিদের রাখা হয়। বেশ কয়েক দিন ধরে দাঁতের ব্যথায় অস্থির। মাড়ি ও মুখ ফুলে গেছে।
আবেদন করা হলেও চিকিৎসক পাওয়া যাচ্ছে না। জেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, জঙ্গি আসামি পালিয়ে যাওয়ায় কারাগারে তারা বেশ সতর্ক। সেজন্য অনেক কিছু চাইলেও সম্ভব নয় বলে অপারগতা প্রকাশ করেন তারা। প্রচণ্ড গরম ছাড়াও ঘনঘন লোডশেডিং হয় কারাগারে। ফলে শারীরিকভাবে খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন সালাম।
নাসির উদ্দিন আহমেদ পিন্টু গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের ডি ব্লকে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার তিনটি ব্লক ধরা পড়েছে। উচ্চ রক্তচাপসহ বেশ কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত। তার সহধর্মিণী নাসিমা আক্তার কল্পনাও গুরুতর অসুস্থ। ছেলেমেয়েরা দেশের বাইরে।
পিন্টুর একজন ঘনিষ্ঠ সহযোগী জানান, খুব কষ্টে আছেন বিএনপির এই নেতা।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মাহবুবুল ইসলাম অবশ্য বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে দাবি করে বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারে কোনো লোডশেডিং নেই। তা ছাড়া আমাদের একটি সেন্ট্রাল জেনারেটরও রয়েছে। তা দিয়ে মোটামুটিভাবে সেবা দেওয়া হচ্ছে। মির্জা আব্বাসের শারীরিক বিষয় এখন কেমন- এমন প্রশ্নে তিনি জানান, ভালোই আছেন।
কোনো সমস্যা থাকলে সেটা কারা কর্তৃপক্ষই দেখভাল করছে।
কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটি সেলের জেল সুপার আবদুর রাজ্জাক বলেন, আবদুস সালামের দাঁতের সমস্যা ছিল। কারা কর্তৃপক্ষ গতকাল একজন চিকিৎসকের মাধ্যমে তার বিষয়টি খোঁজখবর নিয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।