ক্ষমতায় এলে বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তিতে কোনো মতেই সমর্থন করবে না বলে জানালেন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেত্রী সুষমা স্বরাজ। স্থলসীমান্ত চুক্তি নিয়ে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতেই শনিবার দিলি্লতে সংসদ ভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিজেপি। সেখানেই তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের সঙ্গে এ চুক্তি না হলে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক অবনতি হতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিলেও বিজেপি তার অবস্থান থেকে সরবে বলেও ঘোষণা দেন তিনি।
বিলটির বিরোধিতা প্রসঙ্গে সুষমা বলেন, এই চুক্তি হলে ভারতকে ১০ হাজার একর জমি বাংলাদেশকে দিতে হবে। তাছাড়া এটা শুধু জমির প্রশ্নই নয়, আবেগের প্রশ্নও জড়িয়ে আছে। বর্তমান ইউপিএ সরকার এই জমি সংক্রান্ত বিষয়টি খুব সাধারণভাবে নিয়েছে বলেও তার মত। উল্লেখ্য, ভারতে বাংলাদেশি ছিটমহল রয়েছে ৫১টি, যার মোট এলাকা প্রায় ৭ হাজার একর। অন্যদিকে বাংলাদেশের মধ্যে ভারতের যে ১১১টি ছিটমহল রয়েছে সেই জমির পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার একর জমি। ফলে ছিটমহল হস্তান্তর হলে ভারত পাবে ৭ হাজার একর জমি, কিন্তু দিতে হবে প্রায় ১০ হাজার একর জমি।
সুষমার অভিযোগ, বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে স্থলসীমান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল। এই চুক্তি সম্পর্কে এ দিন দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে গিয়ে তিনি বলেন, বিজেপি সবসময় এই চুক্তির বিরোধিতা করবে।
উল্লেখ্য, এই চুক্তির গুরুত্ব বোঝাতে গত ১৯ তারিখ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং তার বাসভনে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। বৈঠকে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি রাজনাথ সিং ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন প্রভাবশালী নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ নিজেও। ওই বৈঠকেও প্রধানমন্ত্রীকে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে দেওয়া হয় বলে শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে সুষমা দাবি করেন। সুষমা এমনও জানান, সরকারের পক্ষ থেকে সে সময় আশ্বাস দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংসদের কর্মসূচির তালিকায় এ বিলটি অন্তর্ভুক্তি করা হবে না। স্থলসীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গত জুলাইয়ে ভারত সফরে এসে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি দেখা করেছিলেন বিজেপির রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা বিজেপি নেতা অরুণ জেটলির সঙ্গে। সে সময় জেটলি দীপু মনিকে জানান, দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করেই বিলটি সংসদে পেশ করানোর ব্যাপারে উদ্যোগী হবেন। এদিন সেই প্রসঙ্গে সুষমাকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ওই রকম কোনো আশ্বাসের কথা তার জানা নেই। তার মতে, জেটলি শুধু বলেছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মতামত দলের শীর্ষ নেতাদের জানানো হবে। এদিকে শনিবার গভীর রাতে ফেসবুকে স্থলসীমান্ত নিয়ে নিজের মতামত স্পষ্ট করেন তৃণমূল প্রধান ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি লিখেছেন 'ভারত বাংলাদেশ স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত একটি চিঠি সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দিয়েছে ভারত সরকার। সব কিছু খুঁটিয়ে দেখে এই ইস্যুতে গত দুই বছরে আমি বেশ কয়েকবার বিদেশমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। রাজ্য সরকারের সঙ্গে চুক্তি ছাড়া বাংলাদেশকে জমি দিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব মেনে নেওয়া বাস্তবিকই কঠিন। তিস্তা চুক্তির সময়ও সরকার খসড়ায় বলেছিল এক, চূড়ান্ত ক্ষেত্রে প্রস্তাব ছিল সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি প্রশ্ন তোলেন, রাজ্য সরকারের অনুমতি ছাড়া আমাদের জমি-পানি, দিয়ে দেওয়ার এত তাড়া কীসের কেন্দ্রের? কী ধরনের রাজনীতির খেলা খেলছে ওরা? দেশ ও দেশবাসীর কল্যাণে যুক্তরাষ্ট্রীয় বিধি মেনে চলুক কেন্দ্রীয় সরকার। বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব-সুসম্পর্ক রাখতে চাইলেও তা পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বিনিময়ে নয়। যদিও বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে স্থলসীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন অত্যন্ত জরুরি। তাদের মতে, জাতীয় স্বার্থের কথা মাথায় রেখেই ছোট ছোট ইস্যুগুলো দূরে সরিয়ে রাখা উচিত। সূত্রমতে কেন্দ্রীয় সরকারও এ চুক্তি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিটি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে ঐকমত্যে পেঁৗছানোর জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।