আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পাঁচ দিনেও ধরা পড়েনি দুই শীর্ষ জঙ্গি

পাঁচ দিনেও হদিস মেলেনি কমান্ডো স্টাইলে ছিনিয়ে নেওয়া জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবির) শীর্ষ দুই জঙ্গির। র্যাব-পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা পূর্ণ শক্তি নিয়ে মাঠে কাজ করলেও জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীন এবং বোমা মিজানের অবস্থানের এলাকাও এখনো অাঁচ করতে পারেননি। টাঙ্গাইলের ঘাটাইল পাহাড়ি এলাকা কিংবা ময়মনসিংহের ভালুকা-মুক্তাগাছায় জঙ্গিরা আত্দগোপনে রয়েছে, এমন ধারণার মধ্যেই আবদ্ধ হয়ে আছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা।

তারা বলছেন, প্রধান সন্দেহভাজন এসব এলাকার মধ্যে টাঙ্গাইলকেই বেশি টার্গেট করে অভিযান চালানো হচ্ছে। কোথাও বেশি দিন পালিয়ে থাকার সুযোগ নেই পলাতক জঙ্গিদের। সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে সম্ভাব্য এলাকাগুলোকে।

র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল জিয়াউল আহসান জানান, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের মধ্যেই সালাউদ্দিন ও বোমারু মিজান আত্দগোপন করে আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ ঘটনার পরপরই যেভাবে সারা দেশে চেকপোস্টসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপরতা শুরু করে তাতে পলাতক এ জঙ্গিরা বেশিদূর যেতে পারেননি। আত্দগোপনে থেকে দু-একদিন রক্ষা পেলেও অচিরেই তারা আটক হবেন বলে মন্তব্য করেন তিনি। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ-শেরপুর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদ পেরিয়ে ভারতীয় সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিদের আত্দগোপনের আশঙ্কা মাথায় রেখেছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। পাহাড় ও বন-জঙ্গলের মাঝেও হানা দিচ্ছে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। আত্দগোপনে থেকে জঙ্গিরা কোনো রকম বের হওয়ার চেষ্টা করলেই আটক হয়ে যাবেন বলেই ধারণা অভিযান পরিচালনাকারী একাধিক কর্মকর্তার। তাদের গ্রেফতারের লক্ষ্যে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহের তিন-চারটি এলাকা ঘিরে রেখে (সম্ভাব্য অবস্থান) সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। নামানো হয়েছে সাদা পোশাকের ও ছদ্মবেশী গোয়েন্দাদের। জেলা দুটির বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে তারা সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি আরও জানান, এসব এলাকায় ছদ্মবেশী গোয়েন্দা সদস্যদের নামানো হয়েছে। নেওয়া হচ্ছে সব ধরনের প্রযুক্তিগত সহায়তা।

টাঙ্গাইল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত এসপি) হাসিবুল হাসান জানান, টাঙ্গাইলের পাহাড়ি এলাকা থেকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ছয়টি অস্ত্র উদ্ধার এবং ত্রিশালে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে প্রিজন ভ্যানে হামলাকারীদের একটি মাইক্রোবাস উদ্ধার হওয়ায় পলাতক জঙ্গি এ দুই জেলার কোনো নির্জন এলাকায় আত্দগোপনে আছেন বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ ঘটনার পর এ দুই জেলাসহ আশপাশের সব স্থানে যেভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেকপোস্টে তল্লাশি ও অভিযান তৎপরতা চালিয়েছে তাতে জঙ্গিদের বেশিদূর পালানোর সুযোগ ছিল না। প্রসঙ্গত, রবিবার সকালে কমান্ডো স্টাইলে প্রিজন ভ্যানে সশস্ত্র হামলা চালিয়ে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামা'আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের শূরা সদস্য মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত রাকিব হাসান ও সালাউদ্দিন সালেহীন এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত বোমারু মিজানকে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে ঘটনার মাত্র ছয় ঘণ্টার মধ্যেই জঙ্গি রাকিব হাসান পুলিশের কাছে আটকের পর 'বন্দুকযুদ্ধে' নিহত হন।

সালাউদ্দিন সালেহীন ও বোমা মিজানকে ধরতে পুলিশ চেকপোস্ট : মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল থেকে জানান, টাঙ্গাইলের সখীপুর থানার দুটি মামলায় ১০ দিন করে ২০ দিনের রিমান্ডে থাকা জঙ্গি জাকারিয়া ওরফে হিমেল ও মো. রাসেল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে শুরু করেছেন। এদিকে পুলিশ টাঙ্গাইল জেলার সীমান্ত এলাকাগুলোয় বসিয়েছে চেকপোস্ট; যাতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীন ও বোমা মিজান কোনোভাবেই টাঙ্গাইল সীমানা পাড়ি দিতে না পারেন। এদিকে বাইরে থেকে কোনো জঙ্গি টাঙ্গাইল সীমানায় ঢুকলে তাদেরও বের হওয়ার কোনো সুযোগ দেবে না জেলা পুলিশ। গতকাল সখীপুর থানায় কথা হয় টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পংকজ চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি জানান, রিমান্ডে থাকা জঙ্গি জাকারিয়া ওরফে হিমেল আমাদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিতে শুরু করেছেন। অন্য জঙ্গি মো. রাসেল ওরফে নুরুননবী কোনো ধরনের তথ্য না দিয়ে পাগলের ভান করছেন। তবু আমরা তার সম্পর্কে যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছি। তবে তদন্তের স্বার্থে এখনই তা বলা সম্ভব নয়। এরই মধ্যে জাকারিয়ার তথ্যের ভিত্তিতেই তার স্ত্রী, ভাই ও শ্বশুরকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তা ছাড়া অন্য জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীন ও বোমা মিজান যাতে টাঙ্গাইলের সীমানা পাড়ি দিতে না পারেন সেদিকে কঠোর নজরদারি রাখতে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এ ছাড়া সখীপুর, ঘাটাইল ও মধুপুর বনাঞ্চলে বিশেষ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে অল্প দিনের মধ্যেই তাদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হবে পুলিশ। উল্লেখ্য, ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের কাশিগঞ্জ (সাইনবোর্ড) এলাকায় প্রিজন ভ্যানে গুলি ও বোমা হামলা চালিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত তিন বন্দী সালাউদ্দিন সালেহীন, বোমা মিজান ও রাকিব হাসানকে ছিনতাই করে নিয়ে যান জেএমবির সদস্যরা। ওই দিনই বিকালে সখীপুরের তক্তারচালা এলাকা থেকে রাকিব হাসানকে আটক করা হয়। পরে সোমবার ভোরে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন ও বোমা মিজানকে আটক করতে রাকিব হাসানকে নিয়ে মির্জাপুরের বেলতৈল এলাকায় টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ পুলিশ যৌথ অভিযান চালায়। এ সময় পালিয়ে থাকা জেএমবির সদস্যরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। একপর্যায়ে রাকিব হাসান গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। পরে জেএমবির সদস্যরা পালিয়ে যান। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে তিন রাউন্ড গুলিসহ একটি শুটারগান উদ্ধার করেছে।

জেএমবি সদস্য জাকারিয়ার শ্বশুর গাজীপুরে আটক : গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে জেএমবির তিন সদস্যকে ময়মনসিংহে নেওয়ার পথে ত্রিশালে ছিনতাই হওয়ার ঘটনায় আটক জেএমবি সদস্য জাকারিয়ার শ্বশুর সাবি্বর আহমেদ নয়নকে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈরের চন্দ্রা থেকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ জানায়, গতকাল সকালে কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে কালিয়াকৈর থানা পুলিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা হানিফ পরিবহনের একটি বাসে অভিযান চালায়। ওই বাস থেকে সাবি্বর আহমেদ নয়নকে আটক করে পুলিশ। পরে তাকে কালিয়াকৈর থানায় নিয়ে যায়। এ সময় তার সঙ্গে থাকা কাজের ছেলে শামিমকে (৮) থানায় নিয়ে আসা হয় এবং কাপড়ের একটি ব্যাগ উদ্ধার করা হয়। জাকারিয়া পুলিশকে জানান, তিনি ঢাকার গাবতলীর দ্বীপনগর এলাকায় পাথর-বালু লোড-আনলোডের ব্যবসা করেন। সাবি্বর আহমেদের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর গ্রামে। জঙ্গি জাকারিয়া তার বড় মেয়ে স্বপ্না আক্তারের স্বামী বলে জানায় পুলিশ। কালিয়াকৈর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম আটকের কথা গতকাল দুপুরে স্বীকার করে বলেন, সাবি্বরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া তদন্তের স্বার্থে তিনি তার ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.