আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ,শুধুই পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র না ধর্মীয় গোড়ামীও ???

প্রায় ৩বছরের গৃহযুদ্ধে শুধু নিহতের সংখ্যাই দেড়লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে। নারী-শিশু,বিদ্রোহী আর সরকারী বাহিনীসহ। ঘরহারাদের সংখ্যার কোন সঠিক পরিসংখ্যান নেই। বৃটেনে আশ্রয়রত সিরিয়ান মানবাধীকার সংস্থার এক হিসাবে এই পরিসংখ্যান প্রকাশিত হয়। যদিও গত জানুয়ারীতে জাতিসংঘ বলেছে সে তার নিজস্ব পরিসংখ্যান বাদ দিয়েছে নির্ভরযোগ্যতার প্রশ্নে।

তখন পর্যন্ত তার হিসাব ছিল একলক্ষ।
কিন্ত এই যে প্রানহানী আর মানবেতর জীবন বিনিময়ে কার অগ্রগতি? না আসাদের না বিদ্রোহীদের? মাঝখান থেকে মুসলিম ভাইরা তাদের,নিজেদের রক্ত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। লাভের মধ্যে দেশটা ডুবে যাচ্ছে অন্ধকারের অতলে। লাভবান হচ্ছে শত্রুরা। প্রকারান্তরে ইসরাইল।

তাই নয় কি?কেন নয়? মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি যদিও সমবেতভাবে ইসরাইলের সামরিক শক্তির কাছে কিছুই না। তবুও তো একটু হলেও প্রতিরোধ করার শক্তি ছিল তাদের। এদের মধ্যে প্রধান ছিল মিসর,সিরিয়া,ইরাক ও ইরান। বর্তমানে মিসর,ইরাককে নিয়ে ভাবনা নেই। নিজেদের গৃহযুদ্ধ তথা ঘর সামলাতেই এরা ব্যতিব্যাস্ত।

আজকের সিরিয়াকে নিয়েও নেই আর ভাবনা। বাকী রইলো ইরান। কিছুদিন আগে আমেরিকা ইরানের সাথে একটা সমঝোতায় আসে তার পারমানবিক গবেষনার ব্যাপারে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমাদের অবরোধও শিথিল হয়ে আসে। (এর পিছনে অবশ্য রাশিয়ার হাত প্রনিধানযোগ্য।

)কিছুদিন আগে সৌদীআরব,বাহরাইন,সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ তিনটি দেশ তাদের স্ব স্ব রাষ্ট্রদূতদের কাতার থেকে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। কট্টরপন্থি মুসলিম ব্রাদাহুডকে কাতার অস্ত্র,অর্থসহ সবধরনের নৈতিক সমর্থনের কারনে। ওদিকে আবার ইয়েমেনের সাথে সৌদীর আছে সীমান্ত বিরোধ। বাহরাইনে সুন্নী শাসকদের বিরুদ্ধে সংখ্যাগরিষ্ঠ শিয়াদের আন্দোলন।
সব বিরোধকে ছাপিয়ে উঠছে সিরিয়ার যুদ্ধ।

যদিও রাশিয়ার হস্তক্ষেপের কারনে ন্যাটোসহ পশ্চিমাবিশ্ব আপাততঃ সরাসরি অংশগ্রহনে পিছিয়ে এলেও বজায় রাখছে বিদ্রোহীদের প্রতি নৈতিক সমর্থন। তা যেরূপেই হোক না কেন। এখন পশ্ন হচ্ছে শুধুই কি বহঃশক্তির কারনে এই রক্তের হোলী?? হোক না তা আসাদের রাহূগ্রাস থেকে মুক্তি? এর পিছনে কি ধর্মান্ধতা নেই?? আমরা যা দেখছি তা হলো আসাদ পরিবারের হাতে দীর্ঘদিনের নিপীড়িত জনতার মুক্তির আন্দোলন কি ভাবে ইসলামের দুইটি প্রধান শাখার মাঝে মুচকি হেসে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে চলেছে। এখন সেই মুক্তি আন্দোলন মুছে যেয়ে শিয়া-সুন্নীর যুদ্ধে পরিনত হয়েছে। একপক্ষে আসাদের আলাউইট বংশ (যা শিয়াদেরই মতাবলম্বী কিন্তু ভগ্নাংশ)কিন্তু এদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছে ইরাক,ইরান,লেবাননের হিজবুল্লাহসহ শিয়া অধ্যুশিত দেশ ও দলসমুহ।

অন্যদিকে সৌদী,কাতারসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে সুন্নী যোদ্ধারা,বিদোহীদের সাহায্য করতে। বলতে গেলে যুদ্ধটা এখন দাড়িয়ে গেছে শিয়া-সুন্নীর ধর্মান্ধতার যুদ্ধে। যা ইসলামকে দ্বিখণ্ডিত অর্থাৎ শিয়া-সুন্নীতে রূপান্তরিত করেছে হযরত মোহাম্মদ(সাঃ)এর ওফাতের পরপরই।
হাজার হার হাদিসের মধ্যে কোন একটায় না কি উল্লেখ আছে যে,তৎকালীন স্যাম অর্থাৎ আজকের সিরিয়ায় না কি দুই বৃহৎ মুসলিম বাহিনী সম্মুখসমরে রত হবে। আর শিয়াদের বিশ্বাস এই যুদ্ধজয়ের ফলেই শেষ ইমাম মেহেদী(আঃ) এর আসার পুর্বলক্ষন এবং কিয়ামতের আগে পুরো বিশ্বে ইসলামের ব্যাপ্তী ঘটবে।

যা অষ্টম শতাব্দিতে শিয়া ইমাম সাদেক বর্ননা করেছিলেন এইভাবে যে,যখন যোদ্ধারা হলুদ বর্নের পতাকা সাথে নিয়ে শিয়া বিরোধীদের সাথে দামাস্কাসের কাছে যুদ্ধরত হবে,তখনই ঘটবে ইমাম মেহেদী(আঃ) এর আগমন।
সুতরাং বলা যায় আরো ঝড়বে রক্ত,ঘটবে প্রানহানী,ঘর-বাড়ী,ভিটামাটি ছাড়া হবে আরো লক্ষ লক্ষ লোক কিন্তু তবুও শেষ হবে এই ভাই-ভাএর যুদ্ধ। যতদিন না পশ্চিমসহ বৃহৎ শক্তি সন্মানজনক সমাধানের পথে এগিয়ে না আসে। সম্ভব হলে সিরিয়াকে শিয়া-সুন্নী স্বায়ত্ব শাসন দিয়ে হলেও। অর্থাৎ দ্বিখণ্ডিত করে হলেও।

তাও সম্ভব হবে কি না জানি না। তবে যুদ্ধরত শক্তিগুলি সমাধানের পথে না এলে কেউ পারবে কি না জানি না। কারন ধর্মবিশ্বাস জড়িত এরসাথে। না হলে একদিন দেখা যাবে পুরো মধ্যপ্রাচ্য জুড়েই এই আগুন জ্বলছে।
বিঃদ্রঃ আমি মুসলমান হলেও কোরান-হাদিস সম্পর্কে আমার জ্ঞান নেই বললেই চলে।

যেটুকু উল্লেখ করেছি তা পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে। ভুল হয়ে থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী। ধন্যবাদ

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.