মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি পদে না রাখায় বিরোধী দল জাতীয় পার্টির এমপিদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। তারা বলছেন, এ পর্যন্ত চার দফায় জাতীয় সংসদের ৫০টি স্থায়ী কমিটি গঠিত হয়েছে। তাদের উপেক্ষা করা হয়েছে চরমভাবে। গোটা কয়েক কমিটিতে তাদের সদস্য হিসেবে রাখা হলেও সভাপতির পদ মেলেনি একটিও। তাদের প্রতি অবিচার করা হয়েছে। নবম জাতীয় সংসদে বিরোধী দল থেকে তিনটি ও শরিক দল থেকে চারটি সংসদীয় কমিটির পদ দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান সংসদে জাতীয় পার্টি পাঁচটি সভাপতির পদ চেয়েছিল। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মন্ত্রীরা ছাড়া অনেকেই সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদের জন্য বিভিন্ন সময় সরকারকে চাপ দেন। ওপর মহলে তদবিরও করেন। কিন্তু ফলাফল শূন্য। ফলে বিরাজ করছে ক্ষোভ ও হতাশা। এমপিরা বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি সুরাহার তাগিদ দিচ্ছেন।
এ বিষয়ে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমীন হাওলাদার এমপি জানান, বিষয়টি দুঃখজনক। কমিটিতে জাতীয় পার্টির এমপিদের সভাপতির পদ দেওয়া হলে আমরা সরকারকে আরও সহযোগিতা করতে পারতাম। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি জানান, বিরোধী দলে থাকার পরও জাতীয় পার্টির তিনজন মন্ত্রী রয়েছে। অথচ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিতে রাখা হয়নি। বিস্মিত হয়েছি। আশাহত হয়েছি। ব্যথিত হয়েছি। এমন সিদ্ধান্ত সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য অশনি সংকেত।
জাতীয় পার্টির এমপিরা জানান, সংসদীয় কমিটিতে না রাখায় জাতীয় পার্টির এমপিদের মধ্যে প্রচণ্ড ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ নিয়ে তারা চুপচাপ থাকলেও ভেতরে ভেতরে অস্থিরতা বিরাজ করছে। কতদিন চুপচাপ থাকব তা বলা যাচ্ছে না। দলের অধিকাংশ এমপি মনে করে জাতীয় পার্টি সরকারেরই একটি অংশ। সংসদে তাদের সত্যিকার বিরোধী দলের ভূমিকা নেই। তারা বলেন, মহাজোটে থাকা অবস্থাতেও আওয়ামী লীগ সুবিচার করেনি। নানান প্রতিকূলতার মধ্যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছি। গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রাখতে আমাদের প্রাপ্য অধিকারও দেওয়া হচ্ছে না। তারা বলেন, গত পাঁচ বছরে জামায়াতের ওপর যে স্টিম রোলার চালিয়েছে সরকার জাতীয় পার্টির ওপর তা করলে আমরা ধ্বংস হয়ে যেতাম। তাদের অভিযোগ বিরোধী দলের চিফ হুইপ তাজুল ইসলাম চৌধুরী চাননি বলেই জাতীয় পার্টি থেকে কাউকে এ পদে রাখা হয়নি। জাপার এমপিদের ন্যাম ফ্ল্যাট বরাদ্দের ক্ষেত্রেও তিনি স্বজনপ্রীতি করেছেন। সংসদে আসন বিন্যাস করেছেন নিজের মতো। তাছাড়া সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল পার্লামেন্ট করফারেন্সে দলের মতামত না নিয়ে নিজেই অংশগ্রহণ করেছেন। অথচ স্পিকার জাতীয় পার্টি থেকে তিনজনের নাম চেয়েছিলেন। এ নিয়ে কথা বলার জন্য তাজুল ইসলাম চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও সম্ভব হয়নি। আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ফকরুল ইমাম এমপি জানান, সরকারের এমন সিদ্ধান্ত প্রশংসার যোগ্য নয়। সরকারি দলের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে আমাদের নিরুৎসাহিত করেছে। আমরা আশা করেছিলাম অন্তত ছয়টি কমিটির সভাপতি পদে জাতীয় পার্টি থেকে রাখা হবে। আমাদের রাখা হলে সবার জন্যই ভালো হতো।
জানা যায়, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকাণ্ডের জবাবদিহি নিশ্চিতের জন্য সম্প্রতি সব সংসদীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। নবীন-প্রবীণ মিলিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্যদের মধ্য থেকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ পর্যন্ত চার দফায় জাতীয় সংসদের ৫০টি স্থায়ী কমিটি গঠিত হয়েছে। এর মধ্যে একটি কমিটিতেও সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ মহাজোটের শরিকরা কোনো সভাপতির পদ পাননি। স্বতন্ত্রদের পক্ষ থেকেও কাউকে সভাপতি পদে রাখা হয়নি। হাজী মোহাম্মদ সেলিমকে সভাপতি করে ১৬ জন স্বতন্ত্র এমপি জোট গঠন করছেন। তাদেরও দাবি ছিল অন্তত তিনটি সংসদীয় কমিটির সভাপতির পদ দেওয়া হোক। তবে জাতীয় পার্টি থেকে কমিটির সদস্য হিসেবে স্থান পেয়েছেন ২১ জন এমপি। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদকে কার্য উপদেষ্টা কমিটি, মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, এ কে এম মাঈদুল ইসলামকে সরকারী হিসাব সম্পর্কিত, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা বিশেষ অধিকার সম্পর্কিত, আবদুল মুনিম চৌধুরী বেসরকারি সদস্যদের বিল ও সিদ্ধান্ত প্রস্তাব সম্পর্কিত, নিলুফার জাফরুল্লাহ পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, মশিউর রহমান রাঙ্গা স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, মুজিবুল হক চুন্নুকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, নাসিম ওসমান যোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, সালমা ইসলাম এবং নাসরিন জাহান রত্না মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, মেরিনা রহমান পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, পীর ফজলুর রহমান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, এম এ হান্নান সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, সেলিনা জাহান লিটা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, কাজী ফিরোজ রশীদ ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, মোহাম্মদ আমির হোসেন ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, সালাহউদ্দিন আহমেদ মুক্তি তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত, তাজুল ইসলাম চৌধুরী বেসামরিক বিমান, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত এবং শওকত চৌধুরীকে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রাখা হয়েছে। জাতীয় পার্টির নতুন এমপি লিয়াকত হোসেন খোকা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বিরোধী দল হিসেবে আমাদের মূল্যায়ন করা উচিত ছিল। সংসদীয় কমিটির সভাপতি হওয়ার মতো অনেক যোগ্য এমপি জাতীয় পার্টিতে রয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।