প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর গঠিত নতুন সরকারের ভাবমূর্তি দেশের পাশাপাশি বহির্বিশ্বে অনেকটাই প্রশ্নের মুখে পড়ে। এ অবস্থায় ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক দৃঢ় করতে সরকার বহুমুখী কূটনীতির পরিকল্পনা নিয়েছে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলোতে কূটনৈতিক মিশন ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রমতে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পুরো সময়ে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করলেও এখন ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে আসতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দেশে কর্তব্যরত কূটনীতিক তারিক এ করিম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী ও আকরামুল কাদেরকে।
গত সরকারের পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসকেও ছাড়তে হচ্ছে লন্ডন। তাদের স্থানে দায়িত্ব পেতে যাচ্ছেন নতুনরা।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মিয়ানমারে নিযুক্ত হাই-প্রোফাইল রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারসহ কমপক্ষে আটটি দেশে বাংলাদেশের কূটনীতিক পরিবর্তন করে নতুন নিয়োগ ইতোমধ্যেই চূড়ান্ত করা হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে। সব স্থানেই বর্তমান ও সাবেক পেশাদার কূটনীতিকরা স্থান পাচ্ছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রের তথ্যানুসারে, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে প্রতিমন্ত্রীর পদমর্যাদায় রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালনরত আকরামুল কাদেরের স্থানে যাচ্ছেন বর্তমান সরকারের অ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ এম জিয়াউদ্দিন আহমেদ। ভারতের নয়াদিল্লিতে প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদার হাইকমিশনার তারিক এ করিমের স্থানে যাচ্ছেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম আলী। আগের মতো এই দুই রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনারও প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা পেতে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বহুল আলোচিত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীর স্থানে অস্ট্রেলিয়ার ক্যানবেরায় যাচ্ছেন বর্তমানে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কাজী ইমতিয়াজ হোসেন। যুক্তরাজ্যের লন্ডনে হাইকমিশনারের দায়িত্ব পালনরত সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের স্থানে যাচ্ছেন এতদিন জেনেভায় স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালন করা আবদুল হান্নান।
মিজারুল কায়েস যাচ্ছেন ব্রাজিলে। ব্রাজিলের বর্তমান রাষ্ট্রদূত শামীম আহসান প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে যাচ্ছেন জেনেভায় স্থায়ী প্রতিনিধি হিসেবে। প্রতিবেশী মিয়ানমারে এতদিন ধরে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করা মেজর জেনারেল (অব.) অনুপ কুমার চাকমার স্থানে নতুন দায়িত্বে শ্রীলঙ্কা থেকে যাচ্ছেন অন্য পেশাদার পররাষ্ট্র কর্মকর্তা সুফিউর রহমান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালকদের মধ্যে জাতিসংঘ ডেস্কের সাইদা মুনা তাসনীম রাষ্ট্রদূত হিসেবে যাচ্ছেন থাইল্যান্ডের ব্যাংককে। শ্রীলঙ্কায় যাচ্ছেন আরেক মহাপরিচালক তারিক আহসান।
মহাপরিচালক আল্লামা সিদ্দিকী দায়িত্ব পেয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত হিসেবে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অন্য দুই দক্ষ কর্মকর্তা চিফ অব প্রটোকল খন্দকার তালহা যাচ্ছেন লন্ডনে ডেপুটি চিফ অব মিশন হিসেবে এবং নজরুল ইসলাম যাচ্ছেন সৌদি আরবে উপরাষ্ট্রদূত হিসেবে। এর আগে নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেক মহাপরিচালক শামীম আহসান।
মন্ত্রণালয়ের অন্য আরেকটি সূত্রের তথ্যানুসারে রাশিয়া, চীন, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়ার মিশনগুলোর বিষয়েও চিন্তাভাবনা চলছে। এ মিশনগুলোর বিষয়ে শীঘ্রই নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে।
অন্যদিকে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর বেশির ভাগে এখন পেশাদার কূটনীতিকরাই দায়িত্বে আছেন। সেখানেও আগামী ছয় মাস কাজের অগ্রগতি দেখা হবে। এর পর পরিবর্তনও হতে পারে। এ ছাড়া দূতাবাসগুলোকে গতিশীল করতে রাষ্ট্রদূত বা মিশনপ্রধান ছাড়া অন্যান্য পদেও বড় ধরনের রদবদলের কথা ভাবা হচ্ছে। সাক্ষাৎকারও দিয়েছেন বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তারা।
কূটনৈতিক সূত্রের তথ্যানুসারে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে আর মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে না। শুধু জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি থেকে যাচ্ছেন আরও কিছু সময়। এ ছাড়া সদ্য সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মিজারুল কায়েসের মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে খুব বেশি অগ্রগতি দেখতে না পাওয়ায় তাকে পরিবর্তন করে ব্রাজিলে পাঠানো হচ্ছে। বাকি যারা নতুন দায়িত্বে যাচ্ছেন তাদের সবাই প্রাইজ পোস্টিং হিসেবে সুযোগ পেলেও তাদের দেওয়া হচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জ।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করে দেশের স্বার্থ রক্ষাই হবে তাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ছড়াছড়িতে পেশাদার কূটনীতিকরা এতদিন প্রায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন। আবার যথাযথ দক্ষতার অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই সরকারের কাক্সিক্ষত সাফল্য নিয়ে আসতে পারছিল না মিশনগুলো। এবারের এ পরিবর্তন সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে পারবে বলে আশাবাদী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।