আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বন্ধ্যা সময় , নষ্ট সভ্যতা

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা । ১১০০ বছর পূর্বে জনৈক সুবিশাল এক গ্রাম বিশৃঙ্খলায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠিলে গদীতে আসীন রাজার মসনদ কাঁপিয়া উঠিবার উপক্রম হইলো । রাজা সেই সময়ের পূর্বে ২৫ বছর যাবত পরম আরামে তাহার গদিতে আসীন ছিলেন । বৈদেশিক রাজার সহিত নানারুপ সমঝোতার কারনে তাহার বিশেষ মুশকিলে পড়িতে হয়নাই । তিনি পরিবার সহ আয়েশে দিনানিপাত করিতে পারিতেন ।

তাহার গোটা পরিবার ক্ষীরে – দধিতে স্ফীত হইয়া উঠিয়াছিলো । তাহার কনিষ্ঠ পুত্র এতটাই স্থূলকায় বালকে পরিনত হইয়া পড়িয়াছিলো যাহার কারনে একদা তাহার জীবন নাশ হইবার উপক্রম হইয়াছিলো । বিলাসে মত্ত হইবার কারনে বিলাসী রাজা ঠাহর করিয়া উঠিতে সক্ষম হননাই যেই বৈদেশিক রাজা – মহারাজাগণ তাহাকে গদীতে আসীন রাখিয়া , আরাম – আয়েশে মুদে থাকিবার সুযোগ দান করিয়াছেন নিজেদের প্রয়োজন পড়িলে তাহার প্রজা সমেত তাহাকেই কাটিয়া ফেলিতে তাহারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করিবেন না । অতঃপর সেই সময় আসিয়া উপস্থিত হইয়া পড়িলে রাজা বুঝিতে পারিলেন এইবারে বেয়াড়ার হদ্দ চাষাভুষা প্রজা ছাড়া তাহাকে এই যাত্রায় আর কেহই বাঁচাইতে পারিবেনা । তিনি তাহার সেনাপতিদের হুকুম করিলেন তাহার রাজ্যের সমস্ত প্রজাদিগকে একত্র করিতে ।

তাহাদের মহামান্য রাজা তাহাদের সামনে মহামূল্যবান ভাষণ প্রদান করিবেন । সেই সময়ে প্রজারাও পূর্বের চাইতেও মাত্রাধিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ হইয়া উঠিয়া মুক্তির জন্য খন্ড খন্ডরুপে প্রাণপনে লড়িতে শুরু করিয়াছিলো । তাই তাহারাও খবর শুনিয়া উৎসুক হইয়া উঠিলো যে তাহাদের মহান রাজা তাহাদের কি আদেশ দেন । অতঃপর তাহারা ভাষণের দিন উপস্থিত হইলে অবাক হইয়া চাক্ষুষ করিলো এবং শ্রবণ করিলো রাজা তাহাদের সবদিগকে মুক্তির জন্য প্রাণপনে লড়িবার ডাক দিতেছেন । স্বচক্ষে দেখিবার পরেও , স্বকর্ণে শ্রবন করিবার পরেও তাহারা শুরুতে নিজেদের চক্ষু এবং কর্ণকে বিশ্বাস করিতে পারিলোনা ।

কেননা এই রাজাই অতীতকালে নানা সময়ে মুক্তিকামী হতভাগা প্রজাকে মৃত্যুদন্ড সহ নানাবিধ শাস্তি প্রদান করিয়াছেন । সেই তিনিই বলিলেন মুক্তির জন্য প্রাণপনে লড়িতে এই বিষয় তাহাদের ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে তাহারা ঠিক ঠিক ধারণ করিতে সক্ষম হইলোনা । যাহাই হৌক তাহারা রাজার আদেশ শুনিয়া দেশমাতৃকার চরণে নিজেদের জীবন সঁপিয়া দিলো । তাহাদের অংশগ্রহনে সে এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে পরিনত হইলো । তাহারা নিজের গৃহ হইতে শুরু করিয়া প্রতিটা স্থানকেই রণক্ষেত্র সাব্যস্ত করিয়া নিজেদের জান কোরবান করিলো ।

লাখে লাখে মৃত্যুবরন করিবার পর , নানাবিধ অত্যাচারে জর্জরিত হইবার বছর দেড়েক পর অবশেষে তাহারা বৈদেশিক রাজ্যসমূহের বিরুদ্ধে মুক্ত হইতে সক্ষম হইলো । যেই যুদ্ধে লাখো লাখো কৃষকের সন্তানের ন্যায় আব্বাস কৃষকের সন্তান মোকাররমও বীরের লাহান যুদ্ধ করিয়াছিলো । মোকাররম অন্যান্য কৃষকের সন্তানের চাইতেও মাত্রাধিক বুদ্ধিমান হিসাবে প্রতিভাত হইয়াছিলো । সে নিশ্চিত জানিত বৈদেশিক রাজা – মহারাজাগণ উতখাত হইলেও তাহাদের মুক্তি আসিবেনা যদি না রাজ্যে তাহাদের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত না হয় । সেই মুক্তির অভিপ্রায়ে যুদ্ধ সমাপ্ত হইবার পরেও রাজ্যের রাজার বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামিতে সে দ্বিধা করিলোনা ।

এদিকে যুদ্ধ পরবর্তী পর্যায়ে বিলাসী সেই রাজাও বুঝিতে সক্ষম হইলেন তাহার যুদ্ধের আরো অবশিষ্ট আছে বৈকি । তাহার এখন গরীব – গুর্বো প্রজাদের বিরুদ্ধেই মাঠে নামিতে হইবে । রাজা পরম বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়া তাহার লাঠিয়াল বাহিনী , পাইক – পেয়াদা বাহিনীকে নির্দেশ করিলেন অবাধ্য প্রজাদিগকে হত্যা করিবার । লাঠিয়াল বাহিনী , পাইক – পেয়াদা বাহিনীও রাজার নির্দেশে আমোদিত হইয়া নামিয়া পড়িলো । কারো শরীর হইতে তাহার মস্তক বিচ্ছিন্ন করিয়া ফালানো হইলো , কারো চোখ উপড়াইয়া নেওয়া হইলো , কেহদিগকে হত্যা করিবার পর উলঙ্গ করিয়া সারা গ্রাম ঘুরাইয়া ত্রাসের সঞ্চার করানোর চেষ্টা করা হইলো ।

তবুও প্রজাগণ মোকাররমের নেতৃত্বে তাহাদের লড়াই চালাইয়া গেলো । রাজা দ্রুতই উপলব্ধি করিলেন মোকাররমই হইলো পালের গোদা । তাহাকে নৃশংসভাবে হত্যা করিলে হীতে বিপরীত হইবে , আবার তাহাকে বাঁচাইয়া রাখিবারও কোন উপায় নাই । তাই তিনি এইবারে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করিলেন । তিনি তাহার লাঠিয়াল বাহিনীকে নির্দেশ করিলেন গভীর রাত্রিতে তাহার চক্ষু বাঁধিয়া নির্জন কোন স্থানে নিয়া তাহার বক্ষ হইতে শুরু করিয়া পাজর সমেত গুলিতে ঝাঁঝরা করিয়া দিতে ।

লাঠিয়াল বাহিনী রাজার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করিতে যাইবার অভিপ্রায়ে কিছু পয়সা দিয়া মোকাররমের বিশ্বস্ত এক সাথীকে কিনিয়া লইলো । সে রাজার নুন খাইবার পরে আর রাজার অবাধ্য হয় কি করিয়া ? যথারীতি পরিকল্পনা মোতাবেক সে এক গভীর রাত্রিতে মোকাররমকে নিজ গৃহে জরুরী কাজে আসিবার আমন্ত্রন জানাইলে মোকাররম সমস্ত ঝুঁকি সমেত তাহার গৃহে উপস্থিত হইবার পর তাহাকে চারিপাশ থেকে লাঠিয়াল বাহিনী ঘিরিয়া ফেলে । অতঃপর তাহার চক্ষু বাঁধিয়া ফালাইবার পরে তাহাকে নির্জন এক স্থানে নেওয়া হইলো । ততক্ষণে মোকাররমের বুঝতে বাকি থাকিলোনা যে তাহার প্রাণপ্রিয় সাথীই তাহার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করিয়াছে । মোকাররম শিক্ষিত হইবার পরেও শেক্সপিয়রের জুলিয়াস সিজার পাঠ করিতে পারেনাই বিধায় বলিতে পারিলোনা ‘ হায় ব্রুটাস তুমিও !!! ‘ বরং শেষ মুহূর্তেও তার মুখ হইতে নিঃসৃত হইলো মুক্তির কথা ।

অতঃপর কাপুরুষের ন্যায় মোকাররমকে হত্যা করিবার পরে লাঠিয়াল বাহিনী আনন্দ সহকারে চলিয়া গেলো । বিশ্বাসঘাতক সাথী ভাগের বখরা পাইয়া একের পর এক সাথীকে ধরাইয়া দিতে লাগিলো । এরপরেও রাজার পর রাজা আসিলো , গেলো তবু প্রজাদিগর অবস্থানের পরিবর্তন ঘটিলোনা বিশেষ । ১১০০ বছর পরে ২০০৪ সাল । পৃথিবী এর মধ্যে বহুদূর এগিয়েছে ।

মানুষ পদার্পন করেছে চাঁদে । টেকনোলজিকাল উল্লম্ফনের চূড়ান্ত পর্যায়ে উন্নীত হয়ে সভ্যতার চূড়ান্ত অগ্রসর হয়েছে বলে বিজ্ঞজনেরা হার হামেশাই রায় দিয়ে থাকেন । তবু এখনও বিরুদ্ধ চিন্তার কাউকে গভীর , অন্ধকার কোন রাতে নির্জন স্থানে চোখ বেঁধে বুকের বাম পাশে তপ্ত শীসার বুলেটে বিদ্ধ করে দেওয়া হয় । বিদ্রোহী হয়ে উঠলেই তার অনিবার্য পরিনতি নির্জন স্থানে নিথর হয়ে পড়ে থাকা । এমনই এক স্থানে মুক্তিকামী এক কৃষকের সন্তানকে মরে পড়ে থাকতে দেখা গেলো ।

১১০০ বছর আগের মোকাররম ছিলো অবাধ্য প্রজা , ১১০০ বছর পরের মোফাখখার চৌধুরী হলো সন্ত্রাসী । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.