গনজাগরনের মাধ্যেমে পরিবর্তন সম্ভব....মানুষের চিন্তার পরিবর্তন করাটা জরুরি ....বুদ্ধিবৃত্তিক পুনরজাগরনে বিশ্বাসী পরিচয় বিসর্জনের কথা নানা সময়ে বলেছি। বার্তা কক্ষে, সহকর্মীদের আড্ডায় লজ্জা ও বিরক্তি থেকে বহুবার উচ্চারণ করেছি, সাংবাদিকতা থেকে অবসরে যাওয়ার। বলেছি, এখন সময় এসেছে শহীদ মিনারে গিয়ে সমমনাদের একযোগে সাংবাদিকতা ত্যাগের ঘোষণা দেওয়ার। আমার আহবানে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দিয়েছেন কোনো কোনো সমমনা সহকর্মী। সমমনা তারাই, যারা সাংবাদিকতাকে নষ্ট হতে দেখে লজ্জায় কুঁকড়ে উঠি।
কোনো সাংবাদিককে অনৈতিক কাজে জড়িত দেখে ঘৃণায় মুখ সরিয়ে নেই। নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকরাও যখন পুরোনোদের দেখানো নষ্ট সাংবাদিকতার পথে পা বাড়ান, তখনও হতাশায় নিমজ্জিত হই।
ইদানিং এই হতাশায় ডুবে যাওয়ার উপলক্ষ ঘটছে হরদম। সাধারণ, পাঠক, দর্শকের কাছে নতজানু হয়েই থাকতে হচ্ছে বেশিরভাগ সময়। এখনো যেমন নতজানু হয়েই আছি।
এখন বলতে বিশ্বজিৎ দাশ হত্যার পর থেকে।
রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক এলাকায় ছাত্রলীগ তাদের হরতাল বিরোধী মিছিল থেকে তাড়া করে হরতাল সমর্থকদের। সেই তাড়া করতে গিয়েই বিশ্বজিৎকে শিকারে পরিণত করা হয়। প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পারি, দর্জির কাজ করা বিশ্বজিৎ দাস তার বাসা থেকে দোকানে যাওয়ার সময় দুই পক্ষের ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়ার মধ্যে পড়েন। এক পর্যায়ে ছাত্রলীগ কর্মীরা তাকেই লক্ষ্যে পরিণত করেন।
পরবর্তীতে একটি প্রথম সারির দৈনিক পত্রিকা সরজমিনে অনুসন্ধান করে জানতে পারে, একজন গণমাধ্যম কর্মীই সেদিন (৯ ডিসেম্বর) ছাত্রলীগের ক্যাডারদের কাছে বিশ্বজিৎকে চিহ্নিত করিয়ে দিয়েছিলেন। এই অনুসন্ধানের ফলাফল পত্রিকার পাতায় আসেনি।
কিন্তু ওই পত্রিকারই একজন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ১০ ডিসেম্বর ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। স্ট্যাটাসটি ছিল এরকম- বিশ্বজিৎ নামের এ ছেলেটিকে পিটিয়ে মারতে টেলিভিশনের এক সাংবাদিক উস্কানি দিয়েছেন। ওই সাংবাদিকই নাকি বিশ্বজিত্কে ছাত্রলীগ কর্মীদের দেখিয়ে দেন।
আমার প্রিয় সহকর্মী তার অনুসন্ধানে এটা পেয়েছেন।
প্রশ্ন হলো, সাংবাদিকতা কোথায় যাচ্ছে?
ফেসবুকে এই স্ট্যাটাসটি আসার পর গণমাধ্যম কর্মী ছাড়াও সাধারণ অনেক পাঠক-দর্শকও সাংবাদিকতার নৈতিকতা ও পেশাদার আচরণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন তুলেছেন। মন্তব্য করেছেন। ওই প্রশ্নগুলোর উত্তর আমার জানা। আর মন্তব্যগুলোর সঙ্গেও আমার দ্বিমত করার দুঃসাহস নেই।
দৈনিক পত্রিকাটির সাংবাদিক তার অনুসন্ধানে একটি প্রতিষ্ঠিত টেলিভিশন চ্যানেলের রিপোর্টারের নাম জেনেছেন। তার অনুসন্ধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে আমি ওয়াকিবহাল নই। তাই আসলেই ওই টেলিভিশনের রিপোর্টার সত্যিই বিশ্বজিকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন কিনা, তা আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না।
আমি আসলে অনেক দু:সংবাদের মতোই এই খবরটিকেও অবিশ্বাস করতে চাই। কারণ, অবিশ্বাস না করলে যে আমাদের অস্তিত্বই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
তবে আমি একথা বিশ্বাস করি, ভালো ছবি ও ফুটেজের স্বার্থে ইদানিং গণমাধ্যম কর্মীদের অনেকেই পিকেটারদের উস্কানি দিচ্ছেন। কারণ, ভাংচুর, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া যতো জমজমাট হবে, ছবিও হবে ততোই ফাটাফাটি। তাই পিকেটাররা যখন পিকেটিং করে লুকিয়ে পড়েন, তখন তাদের লুকিয়ে পড়ার পথটিও কোনো কোনো সময় সংবাদ কর্মীরা দেখিয়ে দেন অতি উৎসাহী হয়ে। স্বার্থ হলো, পুলিশ যদি তখন গিয়ে পিকেটারদের ওপর চড়াও হয়, তাহলে ফুটেজটা ভালো হবে।
এ প্রবণতাটি আমি যখন মাঠে রিপোর্টিংয়ে ছিলাম, তখনো দেখেছি।
আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত, বাম দল, জাতীয় পার্টির ডাকা হরতালের সময়ে দুই-একজন সাংবাদিক বন্ধুর মধ্যে এ আচরণ দেখেছি। কেউ হয়তো ককটেল মেরে বা রিকশা উল্টিয়ে সাধারণের সঙ্গে মিশে গেছেন। কিন্তু সাংবাদিকদের কেউ কেউ পুলিশ ডেকে তাকে দেখিয়ে দিচ্ছেন। এ দলে আগে ছিলেন এক-দুই জন। এখন গণমাধ্যমের সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তাদেরও দলভারী হয়েছে।
মাঠে থাকা একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব হলো, যা ঘটছে তারই ছবি বা তথ্য নেওয়া। তার কোনো নৈতিক অধিকার বা দায়িত্ব নেই কোনো একটি পক্ষের হয়ে কাজ করার। পিকেটারকে দেখিয়ে দেওয়া বা তাকে পুলিশের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়টিও তার নয়। কিন্তু ভালো ছবি, গরম ছবি দিয়ে মাত করার লালসায় আমরা, আমাদের সহকর্মীরা অন্ধ হয়ে যাচ্ছি। সরে যাচ্ছি পেশাদার অবস্থান থেকে।
আর ক্রমশ নতজানু হয়ে পড়ছে আমাদের বিবেক।
যদি বিশ্বজিতের হত্যার সঙ্গে সত্যিই কোনো গণমাধ্যম কর্মীর সম্পৃক্ততা থাকে, তাহলে আসুন আমরা সেই গণমাধ্যম কর্মীকে বর্জন করি। না হলে ওই পাপের ভাগীদার হবো আমরাও।
আসুন দায়মুক্ত হই। http://banglanews24.com/detailsnews.php?nssl=a9f647e14c748417c950e4fbfe1e059b&nttl=14122012158412 ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।