আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শুভ্র ভালবাসা

খালি গরম লাগে , পুকুরে ডুব দিতে মুঞ্চায় মন খুব খারাপ । পুরনো জায়গা ছেড়ে নতুন কোন জায়গায় চলে আসাটা খুব ই কষ্টের । কত স্মৃতি রয়েছে সেইসব জায়গায় । কত চেনা জানা মানুষ , রাস্তা ঘাট , খেলার মাঠ , আমার কৈশোর । নতুন কোথাও মানিয়ে নিতে খুব সমস্যা হয় ।

মনের কষ্টের কথা বাদ দিলেও মানিয়ে নেওয়ার কথা যখন আসে তখন অস্বস্তি হয় । আমাকে এখন থেকে এখানেই থাকতে হবে । নিজেদের বাসা । কত স্বপ্ন ছিল নিজেদের একটা ঘর হবে , আমরা সবাই থাকবো । সব সঞ্চয় দিয়ে আম্মা বাসাটা করেছেন ।

কিন্তু তবুও পিছুটানে পড়ে কষ্টটা থেকেই যাচ্ছে । এলাকার নাম শান্তিবাগ । চেনা বলতে এই এলাকায় দুই গলি পরে আমার খালাত বোনের বাসা । এই একটা বাসার লোকজন ই শুধু আমি চিনি । আমার এই বোনকে আমি আপু ডাকি আর তার হাসবেন্ড কে ডাকি আঙ্কেল ।

অনেকেই জিজ্ঞেস করে এমনটা ডাকার কারন কি । আসলে আমার চাচা আর আমার খালাত বোনের বিয়ে হওয়াতে সম্বোধনের এই জটিলতা । আমিও আর সম্বোধন পালটাই নি । ফলস্বরূপ আমার ভাগ্নে এখন আমার আম্মাকে ডাকে নানু আর আমার বাবাকে ডাকে কাকা । ক্ষেত্র বিশেষে আমাকেও ভাই ডাকে ।

আমার কোন আপন ভাই বোন নেই আর বাবা মা দুজন ই কর্মজীবী হওয়াতে ছোটবেলা থেকেই একা । ঘরে কখনো আড্ডা তেমন দেওয়া হয় না । একা থাকার ই অভ্যাস ছিল সারা জীবন । কিন্তু পড়ালেখার সুবাদে ঢাকা থাকা হয় । মানুষে ঘেরা থাকি ।

তাই বাসায় গেলে একা থাকতে ভাল লাগে না । আড্ডা দিতে ইচ্ছে হয় । কাছের বন্ধু বান্ধব সবাই শহরের বাইরে থাকে - সবাই ছাত্র জীবন নিয়ে ব্যাস্ত । তাই বন্ধে বাড়ি গেলেও কাউকে পাওয়া যায় না । আড্ডা দিতে ইচ্ছে হলে চলে যাই বোনের বাসাতে ।

আমার চাচা ( সেই আঙ্কেল ) খুব ই গল্পবাজ এবং রসিক মানুষ । তাঁর সাথে আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা । বাংলার প্রফেসর । তাঁর আবার শখ হল কবুতর পালা । এক বিকেলে গেলাম তাঁর বাসার ছাদে ।

দেখি কবুতর গুলোকে খাওয়াচ্ছেন । - সুনাম , কেমন আছো ? - জি, ভালো আছি আঙ্কেল । - ঢাকা থেকে কবে আসলে ? - এই তো , গতকাল সকালে । ... ... কি খাওয়াচ্ছেন কুবতর গুলোকে ??? - ধান , গম - দুইটাই । - ও ! তা কবুতর আছে কয় টা ? - ১২, ১৩ টার মত ।

আঙ্কেল বললেন - বস , তোমার আপুকে চা দিতে বলি । আঙ্কেল চা এর কথা বলে আসলেন । - বুঝলা সুনাম ,কবুতর পালতে গিয়ে অনেক কিছুই পর্যবেক্ষণ করলাম । কবুতরের আচরণ অন্যসব পাখির মত না । - আচরণ কেমন ??? - এই যে কবুতর গুলাকে দেখছ , এরা কিন্তু সহজে জোড়া বাধে না ।

এক খাচায় একটা পায়রা আর একটা পায়রি প্রায় এক মাস রাখতে হয় । এই একমাসে যদি মনের মিল না হয় তাহলে যতই চেষ্টা করো লাভ নাই - জোড়া হবে না । তা তুমি যত মাস ই একসাথে রাখ । তখন অন্য জোড়া দিয়ে চেষ্টা করতে হয় । - বলেন কি ?? কবুতরের আবার মনের মিলন !! - হুম , এমনই হয় ।

জোড়ার কবুতর সবসময় একসাথে থাকে । জোড় ভাঙ্গে না । তা দেওয়ার সময় পায়রা পায়রী পালা ক্রমে ডিমে তা দেয় । ডিম ফুটে যখন বাচ্চা হয় তার দেখ ভালের দায়িত্ব পড়ে পায়রাটার উপর । দুজনে মিলে বাচ্চা বড় করে ।

-বাহ ! দারুণ তো । আচ্ছা , জোড়ের কোন কবুতর মারা গেলে কি হয় ??? - কবুতর তখন অদ্ভুত আচরণ করে । একবার হল কি এক সন্ধ্যায় সব কবুতর ঘরে ফিরল কিন্তু একটা কবুতর ফিরল না । একটা পায়রা গায়েব । অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও দেখলাম আর আসে না ।

ওই জোড়ার পায়রি টা পরদিন থেকে আর আগের মত খায় না , আকাশে ওড়ে না । সেই পায়রাটা আর এল না । হয়তো কেউ আটকে রেখেছে বা খেয়ে ফেলেছে। কিছুদিন পর আমি বাজার থেকে আরেকটা পায়রা কিনে আনলাম । ওই পায়রিটার সাথে এক খাঁচায় রাখলাম ।

২২ দিনের মাথায় জোড়া মিললো । পায়রিটা তার নতুন পায়রার সাথে আবার সংসার শুরু করলো । আবার আগের মত হয়ে গেল । - যাক , পায়রিটার তাহলে একটা গতি হল । ততক্ষনে আপু চা পাঠিয়ে দিয়েছে ।

চা খেতে খেতে আঙ্কেল আবার বলা শুরু করলেন - হুম সব ই ঠিক ঠাক কিন্তু কয়েক দিন পর ই সেই হারিয়ে যাওয়া পায়রাটা আবার ফিরে আসলো । - বলেন কি ? তারপর কি হল ? - আমার খুব ই অবাক লাগলো । ভাবতে পারি নি পায়রাটা আর কখনো ফিরে আসবে । ফিরে আসার পর ঘটল আরেক ঘটনা । সেই পায়রিটা তার পুরনো পায়রার কাছে আর আসে না ।

নতুন পায়রাকে নিয়েই থাকে । এই জিনিশটা আমি বুঝতে পারলাম বেশ কয়েকদিন পরে যখন দেখলাম পুরনো পায়রাটা ঘরে না ঢুকে দরজার বাইরে দাড়িয়ে থাকে । - মানে কি ??? - মানে হল হারিয়ে যাওয়া পায়রাটা সব সময় একা থাকে আর সন্ধ্যা শেষে যখন ঘরে ফেরে ওই ভাবেই দরজার সামনে দাড়িয়ে থাকে । ঘরে ঢোকে না । আর মাঝে মাঝেই বাক বাকুম ডাকতে থাকে ।

- এখনও কি ওই পায়রাটা ওভাবেই থাকে ??? আমি জিজ্ঞেস করলাম । আপনি আর পায়রাটার জোড়া বাধার জন্য চেষ্টা করেন নাই ?? - অনেক চেষ্টা করেছি । আর জোড়া হয় নি । মনে হয় কখনো হবে না । প্রকৃতির খেলা বোঝা দায় ।

কথা বলতে বলতে সন্ধ্যা হয়ে আসলো । আজান দিচ্ছে । দেখলাম সব কবুতর ঘরে ফিরছে । সেই পায়রাটাও ফিরল । তার কোন ঘর নেই ।

সারা রাত সে সঙ্গিনীর দুয়ারের সামনে দাড়িয়ে থাকবে । পায়রাটার কথা ভেবে খুব খারাপ লাগলো । নিজের অজান্তেই বুকের বাম পাশে চেপে রাখা অবুঝ কষ্ট গুলো তাদের অস্তিত্ত জানান দিয়ে গেল । মনে পড়ে গেল আমি এখনও ওকে খুব ভালবাসি । হায়রে , ভালবাসার আবেদন বুঝি সব জগতেই এক - কি পাখি কি মানুষে !!! শুধু আমরা বুঝি না  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।